ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

রোগমুক্তির জন্য সাপ পালন! আমার কিছু কথা

রক্তিম দাশ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৪ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১২

কলকাতা: যশোরে সংবাদদাতা মিলন রহমানের রোগমুক্তির জন্য সাপ পালন! শিরোনামে প্রতিবেদনটি পড়লাম। দীর্ঘ ২৫ বছর সাপ ও বেদেদের নিয়ে গবেষণা করার সুবাধে লেখাটি পড়ে মনে হয়েছে অত্র অঞ্চলের মানুষেরা জীন, ভূত, ফকিরের ব্যবসার মতো এক নতুন প্রতারকের বুজরুকির স্বীকার হতে চলেছেন।



প্রতিবেদনে লেখা আছে, রোগমুক্তির জন্য ১১টি বিষধর সাপের বাচ্চা লালন পালন শুরু করেছেন যশোর সদর উপজেলার দোগাছিয়া গ্রামের আতিয়ার গাজীর মেয়ে পারুল বেগম (২৫)। এ সাপ পালনের দাওয়াই স্বপ্নে পেয়েছেন- এমনই দাবি তার। এ নিয়ে গ্রামে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে গেছে।

গত ১০দিন ধরে পারুলের এ সাপের দাওয়াই দেখতে এবং স্বপ্নের গল্প শুনতে তার বাড়িতে ভিড় করছেন শতশত মানুষ। পারুল বেগমের দাবি তার নিজের রোগ চিকিৎসার জন্যই এ দাওয়াই।

প্রথমে প্রতিবেদকের পাঠনো ছবি দেখে মনে হচ্চে, এই সাপগুলো কেউটে সাপের ছানা। ফনার পিছনে একটি গোল চিহ্ন থাকায় ইংরাজিতে একে মনোসিলেট কোবরা বলে। এর বিজ্ঞান সম্মত নাম ন্যায়া ন্যায়া কেউটিয়া। গোত্র ইলিপিডি। এদেন গণ বানগারাস। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র এদের দেখা যায়।

কেউটে সাপ সাড়ে ৪ থেকে, সাড়ে ৫ ফুট লম্বা হয়। মানুষের বাড়ি চারপাশে থাকতে ভালবাসে। একটু ভেজা মাটি এদের পছন্দ। খাদ্য তালিকায় আছে ইদুঁর, ব্যাঙ, মাছ।

এদের বিষে নিউরোটক্সিন থাকে। যা মানুষের স্নুায়ুতন্ত্রকে আঘাত করে নষ্ট করে দেয়। এর মাত্র ১২ মিলিগ্রাম বিষ একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে, যদি সঠিক সময়ে সাপের বিষের একমাত্র প্রতিষেধক অ্যান্টি ভেনাম সেরাম বা পলিভেনাম সেরাম না দেওয়া হয়।

প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, দিনের অধিকাংশ সময় পারুল বেগম তার সাপের বাচ্চাগুলো নিয়ে সেখানে দর্শণার্থীদের মনোরঞ্জন করছেন। কখনও আদর করে চুমু খাচ্ছেন, কখনও খেলা করছেন। তবে সাপ নিয়ে কোনো কবিরাজি না করলেও সাপ দেখিয়ে দর্শণার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। দর্শণার্থীরাও সাপের খাবারের জন্য তাকে টাকা দিচ্ছেন।

এখন সাপের ছানাগুলোর বিষ নেই বলে ভাবার কোন কারণ নেই। তার কারণ কেউটে সাপের ছানা বিষ নিয়েই জন্মায়। যেকোন সময় দূঘর্টনা ঘটতে পারে। কারণ সাপ কখনই পোষ মানে না। তার মস্তিস্ক অনুন্নত। মনে রাখা বা চিনে রাখা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

আর পারুল বেগম সাপের ছানাদের খাওয়ানোর জন্য টাকা নিচ্ছেন। কিন্তু তিনি সাপকে কী খাওয়াচ্ছেন তা বলা হয় নি। তিনি কী টাকা দিয়ে ইদুঁর, ব্যাঙ কিনছেন? নাকি আবার দুধ,কলার গল্প!

যদি দুধ কলা খায়, তবে এটাই বলার, সাপের স্বাভাবিক খাদ্যাভাসের মধ্যে দুধ বা কলা পড়েনা। আর শারীরবৃত্তিয় কারণে সাপের দুধ খাওয়ার কথা নয়। কারণ সাপ স্তন্যপায়ী নয়, সরীসৃপ। আর সাপের জিভ চেরা হওয়ার কারণে সে কোন তরল পদার্থকে গিলতে পারে না। এছাড়াও সাপের একটা ফুসফুস। তাই সাপ তরলকে চুষে খেতে পারে না।

পারুল বেগম যা করছেন তা যদি অনিচ্ছাকৃত করেন তাহলে বলতে হয় তার মানসিক বৈকল্য ঘটেছে। তাকে অবিলম্বে একজন মনোরোগ চিকিৎসক দেখানো প্রয়োজন।

আর যদি ইচ্ছাকৃত করেন তাহলে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে। বাংলাদেশের বন্যপ্রানী আইন অনুসারে সাপ নামক নিষিদ্ধ প্রাণিটিকে আটকে রেখে বুজরুকি চালানোর দায়েও ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

যাই হোক, এই ধরণের কুসংস্কারের কারণেই আমরা মানে এই উপমহাদেশের মানুষরা এত পিছিয়ে পড়ছি, এবার সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর।

* সর্প ও বেদিয়া গবেষক

বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।