নয়াদিল্লি: ভারতে নারী নির্যাতন সংঘটনের দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে পশ্চিমবঙ্গ! ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো(এন সি আর বি)’র প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
গত একবছরে রাজ্যে নারীদের ওপর অপরাধের ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
এই প্রতিবেদনটি অনুসারে, ২০১১সালে পশ্চিমবঙ্গে নারীদের বিরুদ্ধে হওয়া ২৯হাজার ১৩৩টি অপরাধের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৭ দশমিক ৫শতাংশ পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করেন। সেখানে নয়া সরকারের আমলে নারীদের বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধের ১২ দশমিক ৭শতাংশই ঘটেছে ঐ রাজ্যে।
পশ্চিমবঙ্গের পরই এন সি আর বি’র তালিকায় কংগ্রেস শাসিত অন্ধ্র প্রদেশ। শেষ একবছর রাজ্যে নারীদের বিরুদ্ধে হওয়া ২৮ হাজার ২৪৬টি অপরাধের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। যা ভারতে নারীদের বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধের ১২ দশমিক ৪শতাংশ।
তারপরই তালিকায় আছে মধ্য প্রদেশ। অবশ্য এ রাজ্যে সব থেকে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ২০১১সালে মধ্য প্রদেশে মোট ৩ হাজার ৪০৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঐ রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনাকে পরিবারের মধ্যেই ধর্ষণের ঘটনা এবং অন্যান্য ধর্ষণের ঘটনায় বিভক্ত করা হয়েছে। মধ্য প্রদেশে পরিবারের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা কিছুটা কমেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী নারীদের ওপর ঘটা মোট অপরাধের ১৪ দশমিক ১শতাংশ হয়েছে বি জে পি শাসিত এই রাজ্যে। শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে ৬ হাজার ৬৬৫টি। যা গোটা দেশে ঘটা শ্লীলতাহানির ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া গোটা ভারতজুড়ে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে পণের দাবিতে মৃত্যুর সংখ্যাও।
গত বছরের আগের বছরের তুলনায় তা ২ দশমিক ৭শতাংশ বেড়েছে। নারীদের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনাও গোটা দেশেই বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় তা বেড়ে গেছে ৫ দশমিক ৪শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে এই হার ১৯ দশমিক ৯শতাংশ।
তালিকায় খুব একটা তফাতে নেই রাজধানীও। দিল্লিতে ১৭ দশমিক ৬শতাংশ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৩১ দশমিক ৮শতাংশ। পণের দাবিতে নারী খুন হয়েছেন ১৪শতাংশ। পাশাপাশি শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে ১০ দশমিক ১শতাংশ।
এন সি আর বি’র রিপোর্ট অনুসারে দেশের ৫৩টি বড় শহরের মধ্যে দিল্লিতে নারীদের ওপর ১৩ দশমিক ৩শতাংশ অপরাধ ঘটেছে। এর পরে আছে বেঙ্গালুরু ৫ দশমিক ৬শতাংশ। এর পর তালিকায় যথাক্রমে হায়দরাবাদ ৫ দশমিক ৫শতাংশ এবং বিজয়ওয়াদা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
দেশের বড় শহরগুলির মধ্যে বিজয়ওয়াদা, কোটা, কোল্লাম, জয়পুরে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ বাড়ছে। অবশ্য ঐ শহরগুলির সঙ্গে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ বেড়ে চলার ক্ষেত্রে সমানতালে পাল্লা দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলও।
শহরে মহিলাদের ওপর ৪৮ দশমিক ২শতাংশ অপরাধের ঘটনা থানায় নথিভুক্ত হয়েছে।
জাতীয় ক্ষেত্রে উত্তর প্রদেশে ২১ দশমিক ২ শতাংশ মহিলা অপহরণ ঘটেছে। ২০১১সালে যৌতুকের জন্য খুনের হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০সালে প্রদেশে এমন ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ ঘটনা ঘটেছিল। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ২ হাজার ৩২২টি অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল উত্তর প্রদেশে। তারপরই ছিল বিহার ১ হাজার ৪১৩টি।
শেষ একবছরে পশ্চিমবঙ্গে স্বামী এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের হাতে নারীদের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনার মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ২০১১সালে সমগ্র দেশে এমন অপরাধের শতকরা ১৯ দশমিক ৯ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। ২০১০সালের তুলনায় এই অপরাধের হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে এই বাস্তবতায় চিন্তিত সমাজ বিজ্ঞানীরা।
ঘটনাচক্রে একদিকে যখন ভারতে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ অপরাধের ঘটনা নিয়ে কলঙ্কিত পশ্চিমবঙ্গ। ঠিক তখনই রাজ্যে লাগাতার বৃদ্ধি পাচ্ছে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ।
রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা এবং তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল জাতীয় মহিলা কমিশনও। এই প্রশ্নে রাজ্য সরকারের নির্লিপ্ত মনোভাবেরও সমালোচনা করেছিল তারা।
সরকারের কাছে এই নিয়ে তারা রাজ্যের রিপোর্টও চেয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার এমন কোনো রিপোর্ট কমিশনকে পাঠিয়েছে বলে এখনও জানা যায়নি। সম্প্রতি এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্যে ধর্ষণের হার জাতীয় হারের থেকেও দ্বিগুণ।
বাংলাদেশ সময়:০৬১৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১২
আরডি
সম্পাদনা:রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর