নয়াদিল্লি: ভারতের দিল্লির তিহার জেলে বিনা সাজায় আট বছর ধরে বন্দি কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধের স্থপতি রশিদ আহমেদ ও তার পুত্রবধূর মুক্তির জন্য তৎপরতা শুরু করেছে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশন।
প্রবীণ এই শিল্পী ২০০৪ সালে রশিদ তার পুত্রবধূ নুর নহরের সঙ্গে পবিত্র আজমীর শরিফে মাজার জিয়ারতের যাওয়ার জন্য ভারতে আসেন।
পরে জানা যায়, প্রবীণ এই শিল্পী ও তার পুত্রবধূ সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। জালিয়াতির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
তারপর থেকে দিল্লির তিসহাজারি আদালতে মামলা চলছে। বিনা সাজায় এখনও তিহার জেলে বন্দি রয়েছেন দু’জনেই।
বাংলাদেশ সরকার এই শিল্পীর মুক্তির দাবিতে ৮ বছর ধরেই সক্রিয়। গত ২৯ জুনও নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আরও একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে।
সর্বশেষ এই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘রশিদ আহমেদের মতো একজন খ্যাতিমান শিল্পী এভাবে জালিয়াতি করতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হবে, তা যদি ধরেও নেওয়া হয়, তা হলেও এতো দিন ধরে তাঁকে কারাবন্দি রাখা অর্থহীন। যতদিন তিনি জেল খেটেছেন, অভিযোগের নিরিখে এখনই তাদের মুক্তি পাওয়া উচিত। ’
নয়াদিল্লির কাছে ঢাকা অনুরোধ জানাচ্ছে, ‘প্রবীণ এই শিল্পীর স্বাস্থ্য ক্রমশই অবনতির দিকে যাচ্ছে। অন্তত জীবদ্দশায় নিজের দেশে ফিরে যান তিনি। ’
রশিদকে ভারতের জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তার মেয়েও বহু বছর ধরে সক্রিয়। গ্রেফতারের কয়েক মাসের মধ্যেই তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নটবর সিংহকে একটি চিঠি লিখেছিলেন সেই সময়ের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী।
২০০৫ সালের ১৪ জুলাই লেখা সেই চিঠিতে দাশমুন্সী লেখেন, ‘পুলিশ এই শিল্পী ও তার পুত্রবধূর সামনে কোনো বিবৃতি নথিভুক্ত করেনি। অথচ ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে তিহার জেলে দু’জনকে বন্দি রাখা হয়েছে। দুই বাংলাতেই এই শিল্পী সমান শ্রদ্ধেয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই মামলা প্রত্যাহার করে শিল্পীকে মুক্তি দেওয়া হোক। ’
চিঠিতে তিনি আরও জানান, ‘আমি ভাবতেই পারি না, এমন একজন সৎ স্থপতি এ ধরনের অপরাধ করতে পারেন!’
চিঠির সঙ্গে শিল্পীর বিবরণও প্রিয়রঞ্জন পাঠিয়েছিলেন নটবরকে। কিন্তু তারপর এত বছর কেটে গেলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
এই বিষয়ে দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার এনামূল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে সোমবার বলেন, ‘আমরা হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। আশা করছি, তিনি দ্রত মুক্তি পাবেন। ’
মিনিস্টার কনস্যুলার নাজিবুর রহমান বলেন, ‘এমন একজন ব্যক্তিত্ব এ ধরনের অপরাধ করতে পারেন আমরা বিশ্বাস করি না। আদালতে মামলাটির যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, বাংলাদেশ সরকার সেই দাবি জানাচ্ছে। কোনো অঘটন ঘটে গেলে আমাদের জবাব দেওয়ার অবস্থাও থাকবে না!’
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর