শিলিগুড়ি: রাজ্য প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার হুমকি ও বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হয়ে থাকার দরুণ সোমবারও কার্শিয়াঙ ও কালিম্পঙে জি টি এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়নপত্র পেশ করতে পারলেন না সিপিএম প্রার্থীরা।
গত শনিবার কার্শিয়াঙ মহকুমা শাসকের দপ্তরে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থকরা সিপিএম নেতা ও প্রার্থীদের উপর হামলা চালায়।
সোমবারও কার্শিয়াঙে হাজির ছিলেন সিপিএম নেতা সমন পাঠক, মহেন্দ্র ছেত্রী, উত্তম শর্মা, রাজকুমার শর্মা ও চেতন গুরুঙ। এদিন কালিম্পঙেও সিপিএম প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র পেশ করতে পারেননি।
তবে দার্জিলিঙে জেলা শাসকের দপ্তরে সুখিয়া ও মানেভঞ্জন কেন্দ্রের জন্য নামগেল শেরপা ও পোখরেবঙ কেন্দ্রের জন্য বিনোদ মোটে মনোনয়ন পেশ করেন।
সিপিএমের অভিযোগ, গত শনিবার রাত থেকেই মোর্চা আশ্রিতরা সিপিএম প্রার্থীদের নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। তারা যাতে কোনভাবেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে মহকুমা শাসকের দপ্তরে আসতে না পারে তারজন্য লঙভিউ, মকাইবাড়ি, ফাটক, অম্বুটিয়া চা বাগান সংলগ্ন রাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকায় মোর্চার লোকজন সকাল থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল।
লাটপাঞ্চার ও মিরিক এলাকাতেও প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হয়। রাস্তায় মোর্চার লোকজন দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে সোমবার মিরিক, সৌরীনি ও লাটপাঞ্চার থেকে প্রার্থী কিসমত তামাঙ, প্রেম সুব্বা ও শ্রীপ্রসাদ রাই কার্শিয়াঙ পৌঁছাতে পারেননি। একইভাবে গাড়িধুরা থেকে শচীন খাতিও পৌঁছাতে পারেননি। এদিন মোর্চার লোকজন স্থানীয় বেশ কিছু মানুষকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র পেশ করার আছিলায় ভিড় জমায়।
সোমবার কালিম্পঙ মহকুমাতেও সি পি আই (এম) প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র পেশ করতে পারেননি। কালিম্পঙ মহকুমাতে মাত্র একজন সিপিএম প্রার্থী পিয়াটু লেপচা লাভা লিলসে কেন্দ্রে মনোনয়নপত্র জমা দিতে সক্ষম হয়েছেন। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেবার অপরাধে তিনি আর বাড়িতে থাকতে পারছেন না। সিপিএম প্রার্থী বিনা তামাঙ-কে নারী মোর্চা বাহিনী বাড়ি থেকেই বের হতে দেয়নি। সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় মোর্চার লোকজন দাঁড়িয়ে থাকার দরুন সিপিএমের তিন প্রার্থী তাশিডিঙ সিবো, করন সুনদাস ও তারা সুনদাস মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি।
দার্জিলিঙে সোমবার সুখিয়া মানেভঞ্জন কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী নামগেল শেরপা ও পোখরেবঙ কেন্দ্রে বিনোদ মোটে মনোনয়নপত্র পেশ করেছেন। তবে হুমকির জেরে ডম্বর প্রসাদ, রঞ্জনা তামাঙ, সঞ্জয় ডুরাল ও বিরাজ সুব্বা মনোনয়নপত্র পেশ করতে পারেননি।
এখনও পর্যন্ত কালিম্পঙের একজনসহ মোট ১৩জন সিপিএম প্রার্থী মনোনয়নপত্র পেশ করতে সমর্থ হয়েছেন। আগামী ১২ই জুলাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।
অন্যদিকে, একই অবস্থা রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের। তারা মাত্র ১৯টি আসনে মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছে। এর ফলে ১২টি আসনে বিনা লড়াইএ জীততে চলেছে মোর্চা।
মঙ্গলবার সিপিএমের দার্জিলিঙ জেলার কার্যকরি সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “পাহাড়ের সামগ্রিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিয়ে যে আশঙ্কা আমরা প্রকাশ করেছিলাম, তার থেকেও পরিস্থিতি ক্রমশই প্রতিকূল হচ্ছে। ”
তিনি অভিযোগ করেন, “প্রশাসন ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে পারছে না। প্রার্থীদের তো বটেই, এমনকি তাদের পরিবারের লোকজনদেরও ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যদি পাহাড়ে জি টি এ নির্বাচনের প্রচারের পরিবেশ না থাকে তাহলে এই নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হতে বাধ্য। পাহাড়ে শান্তি, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই আমরা জি টি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ”
তিনি বলেন, “দীর্ঘ বছর পর এই নির্বাচনের মাধ্যমেই পাহাড়ে গণতন্ত্র ও শান্তির প্রক্রিয়া শুরু হোক এটাই আমরা চেয়েছিলাম। পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে জি টি এ নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদেরও গভীরভাবে ভাবতে হচ্ছে ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর