ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পাক সেনার বইয়ে মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের স্বীকারোক্তি

রক্তিম দাশ. ব্যুরো চিফ. কলকাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১২
পাক সেনার বইয়ে মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের স্বীকারোক্তি

কলকাতা: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের ‘নির্যাতন-অত্যাচারের’ নিন্দায় বই লিখে রেখে গেছেন সেই সময়ে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট খাদিম হুসেন রাজা (১৯২২-১৯৯৯)।  পরে তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে অবসর নেন।



তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে।

তবে জীবদ্দশায় তিনি এসব ঘটনার কথা জানিয়ে যেতে পারেননি। তার জীবদ্দশায় এই সত্য প্রকাশ পেলে, তার ওপর যে নির্যাতন নেমে আসবে সেই আশঙ্কায় নিজের পরিবারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কেবলমাত্র তার মৃত্যুর পরেই যেন তার স্বীকারোক্তিমূলক বইটি প্রকাশ করা হয়।

বইটির প্রকাশক অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস পাকিস্তান। ১৫৪ পাতার বইটির দাম ৬৯৫ পাকিস্তানি রুপি।

সম্প্রতি রাজার মৃত্যুর পর তার লেখা ‘আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি: ইস্ট পাকিস্তান ১৯৬৯-৭১’ বইটি পাকিস্তানে প্রকাশিত হওয়ায় পর স্বাভাবিকভাবেই প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে ইসলামাবাদ।

মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনাদের নির্মম অত্যাচারের সবিস্তার চাক্ষুষ বিবরণই শুধু নয়, সেই সময় পূর্ব পাকিস্তানের কোন জেলায় কোন কোন অফিসার গণহত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তার অকপট স্বীকারোক্তিও রয়েছে বইটিতে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যখন বাংলাদেশে তোলপাড় চলছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই অবসরপ্রাপ্ত সাবেক এই সেনা অফিসারের লেখা বইটি ইসলামাবাদের অস্বস্তি বাড়িয়েছে।

এদিকে, বইটিকে নিষিদ্ধ করার জন্য জারদারি সরকারকে চাপ দিচ্ছে পাকসেনারা। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, খুব শিগগিরই বইটি যাতে পাকিস্তানের বাজারে আর না দেখা যায়, তার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।

খাদিম হুসেন রাজা তার বইটিতে জেনারেল আইয়ুব খান এবং জেনারেল ইয়াকুব খানের শাসনকালের বর্ণনা দিয়েছেন। পাক সেনারা কীভাবে বাঙালি নারীদের নির্যাতন করেছে, সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করে অসদুপায়ে অর্থোপার্জন করেছে, তার বিশদ বর্ণনা রয়েছে রাজার লেখায়।

পূর্ব পাকিস্তানের কমান্ডার টিক্কা খানের কথাও উল্লেখ করেছেন রাজা। জানিয়েছেন, ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ ঘোষণার জন্য’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বসমক্ষে ফাঁসিতে ঝোলাতে চেয়েছিলেন টিক্কা খান।

মেজর জেনারেল রহিম খানের অত্যাচারের কথা বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, ``আমি যদিও ব্যক্তিগতভাবে রহিমের বন্ধু ছিলাম, কিন্তু সুযোগ পেলেই তিনি আমাকে ভর্ৎসনা করতেন। তার বক্তব্য ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষেরা একেবারেই কাপুরুষ। অনেক আগেই তাদের শায়েস্তা করা উচিত ছিল। পাঠকেরা এ থেকেই বুঝতে পারবেন, পুর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে কাণ্ডজ্ঞানের কতটা অভাব ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের কট্টরপন্থী সামরিক কর্তাদের। ``

তিনি নিয়াজিকে অভিযুক্ত করে আরও লিখছেন, পাকসেনাদের বাঙালি নারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন কমান্ডার এ এ কে নিয়াজি। নির্দেশ অমান্য করার জন্য লেখকের সামনেই কোমরবন্ধ থেকে পিস্তল বের করে এক বাঙালি অফিসারকে গুলি করেছিলেন নিয়াজি।

এই নিয়াজিই যুদ্ধের শেষ দিকে ঢাকায় ৯০ হাজার পাক সেনা-সহ যৌথ বাহিনীর ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ঢাকায় তাদের পতন ঘটে।

তার কিছুদিন আগেই নিয়াজি লেখকের কাছে তার পূর্ব পাকিস্তানের বান্ধবীদের ফোন নম্বর চেয়েছিলেন বলে বইটিতে জানিয়েছেন রাজা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর;
জুয়েল মাজহার
, কনসালট্যান্ট এডিটর
jewel_mazhar@yahoo.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।