কলকাতা: ৪৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় অনন্যভাবে বাংলাদেশকে চিনল বঙ্গবাসী। দিনভর মেলা প্রাঙ্গণে পালিত হলো ‘বাংলাদেশ দিবস’।
আর আনেকে বলে থাকেন, কলকাতায় বাংলা বিপন্ন। কিন্তু তা কেনোদিন হবে না। এর কারণ আমাদের প্রতিবেশী দেশটার নাম বাংলাদেশ। যাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। সেই দেশের সঙ্গে আমাদের অন্তরের সম্পর্ক। কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ বহু বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে। এর একটাই কারণ দুপারের বাঙালির অসীম ভালোবাসা রয়েছে বাংলা বইয়ের প্রতি। যা কোনোদিন মুছে যাবে না। যেমন মুছে যাবে বাংলা ভাষা। তেমনই মুছে যাবে না দুই বাংলার সম্প্রীতি।
এদিন সন্ধ্যায়, মেলা প্রাঙ্গণের অডিটরিয়ামে ‘সংযোগের সেতুবন্ধন: সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। সেখানে সবার মতবিনিময়ে উঠে এলো, মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগের মূল সেতুবন্ধন একমাত্রই বই।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদ। তিনি বলেন, বই অবশ্যই সংযোগ ঘটায় পাঠকের সঙ্গে লেখকের, পাঠকের সঙ্গে চিন্তা, কল্পনা, বিশ্বের।
এক পাঠকের সঙ্গে অন্য পাঠকের। পাঠকের নিজের সঙ্গে নিজের।
এদিনের সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজরুল ইসলাম, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, বিশিষ্ট নাট্যকর্মী রামেন্দু মজুমদার, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ কবিতা একাডেমির চেয়ারম্যান কবি সুবোধ সরকার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক চিন্ময় গুহ, কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড সভাপতি ত্রিবিদ চট্টোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু শেখর দে।
আলোচনা সভায় সহপতিত্ব করেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে বলতে গিয়ে নুরুল হুদা বলেছেন ,বাংলা ভাষায় যত গ্রন্থ আছে কিন্তু অন্য ভাষায় আছে কি না জানা নেই। আমাদের একটা বিশ্বভাষা প্রয়োজন, সেখানে এ ভাষা সে স্থান নিতে চলেছে বলে মনে হয়। সেখানেই বই মেলার সার্থকতা।
পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেছেন, প্রতিবছর পশ্চিমবঙ্গের পাঠক বাড়ছে। বিক্রি বাড়ছে, বাণিজ্য বাড়ছে। এটাই আমরা চেয়েছিলাম। এর দ্বারাই আমরা বুঝতে পারি দুই বাংলার সেতুবন্ধন অত্যন্ত দৃঢ়। এখন জোর দিয়েই বলতে পারি দুই বাংলায় দুই দেশের বই পাওয়া যায়।
বইমেলা কমিটি সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বইমেলার শুরুর সময় একসময় এত বাংলাদেশি প্রকাশক অংশ নিত না। কয়েকবছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে বেড়েছে বাংলাদেশি বইয়ের চাহিদা। এ আদান প্রদান বজায় থাকুক। আমরাও চাই ঢাকাতেও মেলায় অংশ নিক কলকাতা।
মেলা কমিটির সম্পাদক সুধাংশেখর বলেছেন, সাহিত্য সংযোগের একমাত্র মাধ্যম বই। তার গন্তব্য একমাত্র বইমেলা। সেই মেলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছে। কাঁটাতারের ভাগ আছে থাকুক তাতে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু সাহিত্য সংস্কৃতি আমাদের আলাদা নয়। ফলে বই আদান প্রদান বছরভর দুই বাংলায় লেগে থাকুক।
অধ্যাপক সৈয়দ মনজরুল ইসলাম বলেছেন, প্রতিনিয়ত বাঙালিয়ানা বিবর্তিত হচ্ছে। যার কারণে পুঁজির শাসনে নীতির বিপর্যয় ঘটছে। বাঙলির নীতি এবং বাঙালির অস্তিত্ব একমাত্র বজায় থাকবে সংযোগের সেতুর মাধ্যমে। দুই বাংলার বন্ধন যদি অটুট থাকে তবেই সংযোগ বিরাজ করবে। সেতুবন্ধন তখনই হয়, যখন নদীর দুই পাড় সমান হবে। অসম পাড়ে সেতুবন্ধন হয় না। ফলে এটা মাথায় রাখতে যার সঙ্গে বা যে দেশের সঙ্গে সেতু বন্ধন করতে চাই, তাদের দুই পাড়ের সংস্কৃতি যেন সমান থাকে। তবেই সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন হবে, আত্মিক উন্নয়ন হবে।
এদিন বইমেলার দ্বিতীয় ধাপে পরিবেশন করা হয় সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক-এর ‘আমার পরিচয়’ কবিতা অবলম্বনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের একটি বিশেষ আয়োজন।
এবারে ৪৭তম কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের পাশাপাশি অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, ইতালি, থাইল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, পেরু, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, গুয়াতেমালা, মেক্সিকো সহ বিশ্বের মোট ২০টি দেশ। প্রায় ১২ বছর পর ফের বইমেলা অংশগ্রহণ করছে জার্মানি।
এছাড়াও ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যের প্রকাশনা সংস্থা ও তিনশোর বেশি লিটন ম্যাগাজিন অংশ নিয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে বিশ্বের লেখক পাঠকের মনের আদান প্রদানে, বইমেলা প্রাঙ্গণে (সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্ক) মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২৩
ভিএস/জেএইচ