কলকাতা: বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে নন্দীগ্রাম নিখোঁজ কাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার হওয়া সিপিএম নেতা ও সাবেক সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ ১২২ দিন পর আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার(জেল) থেকে মুক্তি পেয়েছেন মঙ্গলবার।
জামিনের শর্ত অনুযায়ী তিনি তার নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে যেতে পারবেন না।
তার জামিনে মুক্তির সময় আলিপুর সংশোধনাগারের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন রবীন দেব, দীপক দাশগুপ্তসহ পূর্ব মেদিনীপুরের নেতাকর্মীরা৷ ছিলেন স্ত্রী তমালিকা পণ্ডা শেঠসহ পরিবারের লোকজনও৷
সংশোধনাগারের বাইরে ফুলমালা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন দলীয় সমর্থকরাও। সকাল ১০টা ৪০ নাগাদ সাবেক সাংসদ জেল থেকে বেরোতেই জিন্দাবাদ, লাল সালাম স্লোগান ওঠে। তাকে ফুলমালায় বীরের সংবর্ধনাই দেওয়া হয়।
মুক্তির পর লক্ষ্মণ শেঠ বলেন, ‘‘এখন আমি কলকাতাতেই থাকবো। দলের কর্মীদের অভিনন্দন। তাদের শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদেই জামিন পেয়েছি। সরকার প্রতিহিংমূলক আচরণ করছে। ’’
নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করার পাশাপাশি তিনি জেলে থাকা সহকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির আশাও প্রকাশ করেন।
লক্ষ্মণ এখন কলকাতায় হরিশ মুখার্জি রোডের একটি গেস্ট হাউসে থাকবেন৷ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পার্টির তরফ থেকে গেস্ট হাউস ভাড়া নেওয়া হয়েছে৷ কলকাতায় থাকাকালীন ভবানীপুর থানায় হাজিরা দিতে হবে তাকে৷
সিপিএম নেতা রবীন দেব বলেন, যাদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে, তাদের পাশে থাকবে দল। দলের সব কর্মসূচিতেই লক্ষ্মণ শেঠ থাকবেন৷
স্ত্রী তমালিকা পণ্ডা শেঠ বলেন, ‘‘আইনের ওপর এখনও ভরসা রয়েছে আমাদের। ’’
গ্রেফতার হওয়ার ১১৮ দিন পর গত ১৩ জুলাই ২০০৭ সালের নন্দীগ্রাম নিখোঁজ কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত, তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়। ৫০ হাজার রুপির ব্যক্তিগত বন্ডে কলকাতা হাইকোর্ট শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন তাকে।
জামিনের আবেদনের শুনানি চলাকালীন বিচারপতি অসীম কুমার রায় ও বিচারপতি তৌফিকউদ্দিনকে নিয়ে গঠিত কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিআইডির কাছে জানতে চান, নন্দীগ্রাম মামলায় জমা পড়া অতিরিক্ত চার্জশিটে লক্ষ্মণ শেঠ সম্পর্কে কোনো তথ্যপ্রমাণ না থাকায় তাকে জেলে রাখার যৌক্তিকতা কী? সিআইডির উত্তর সন্তোষজনক মনে না হওয়ার পর হাইকোর্ট লক্ষ্মণ শেঠের জামিন মঞ্জুর করেন।
সোমবারই হলদিয়া আদালতে লক্ষ্মণ শেঠের আইনজীবীরা তার জামিন সংক্রান্ত নথি জমা দেন। হলদিয়া আদালতের এসিজেএমের দেওয়া রিলিজ অর্ডার আলিপুর সংশোধনাগারে এসে পৌঁছায় মঙ্গলবার। জামিনের নির্দেশিকা এবং সে সংক্রান্ত কাগজপত্র সকালে আলিপুর সংশোধনাগারে পৌঁছায়৷ তার পরই জেল থেকে ছাড়া পান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৭ মার্চ মুম্বইয়ের চেম্বুর এলাকার একটি গেস্টহাউস থেকে লক্ষ্মণ শেঠকে গ্রেফতার করে সিআইডি। লক্ষ্মণ শেঠের সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়, নন্দীগ্রাম নিখোঁজ কাণ্ডে অভিযুক্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দুই প্রথম সারির সিপিএম নেতা ও পাঁশকুড়া (পূর্ব) আসনের সাবেক বিধায়ক অমিয় সাহু এবং সিপিএমের নন্দীগ্রাম জোনাল কমিটির সম্পাদক ও কৃষকসভার জেলা সভাপতি অশোক গুড়িয়াকে।
রাজ্য পুলিশ জানায়, তারা হায়দরাবাদ থেকে মুম্বই এসেছিলেন। তাদের ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতা নিয়ে আসা হয়। লক্ষ্মণ শেঠের গ্রেফতারের পর শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তোলে সিপিএম।
এর আগে এই বছরের ৩০ জানুয়ারি হলদিয়ার এসিজেএম আদালতে নন্দীগ্রাম নিখোঁজ কাণ্ডের চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। চার্জশিটে ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে নন্দীগ্রামে সিপিএম এবং ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সংঘর্ষের ঘটনায় ‘নিখোঁজ’ ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সমর্থকদের খুন করে লাশ লোপাট করার অভিযোগ আনা হয় গ্রেফতারকৃত ৩ নেতার বিরুদ্ধে।
খুন, প্রমাণ লোপ, ষড়যন্ত্র, অস্ত্র আইনসহ একগুচ্ছ ধারায় মোট ৮৮ জন সিপিএম নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল ২১৫ পাতার ওই চার্জশিটে। অবশ্য চার্জশিট পেশের আগেই আত্মগোপন করেছিলেন লক্ষ্মণ শেঠসহ ৩ নেতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর