শিলিগুড়ি: গত ২৪ ঘণ্টায় পাহাড়ে বর্ষণ কম হওয়ার কারণেই উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিকিমসহ উত্তরবঙ্গজুড়ে অতি ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর।
মঙ্গলবার কোচবিহার থেকে নদী ভাঙনের খবর এসেছে। জেলার তিস্তা, তোর্ষা, সঙ্কোশ, রায়ডাক, কালজানি ও জলঢাকা নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।
মিলনমোড়ে মহানন্দা নদীর গতিপথ পরিবর্তনে গোলাঘাটের বাঁধ ভেঙে পড়ে যে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়, সেই এলাকা পরিদর্শন করে বুধবার সকালে সিপিএম নেতা ও সাবেকমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “এখনও ভেঙে পড়া বাঁধ মেরামতির কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কোন বাস্তুকারকেও দেখা যায়নি। একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জে সি পি যন্ত্র পড়ে রয়েছে। মহানন্দা নদীর গতিপথের পরিবর্তনে এবং বৃষ্টি হলে বিপদ হতে পারে। ”
এদিন তিনি বলেন, “অতীতে বর্ষার আগে বন্যা মোকাবেলার জন্য সরকারি স্তরে বৈঠক হতো। পঞ্চায়েত সদস্যদেরকেও ডাকা হতো। বন্যা মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়া হতো। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দের একটা বড় অংশের অর্থ বিভিন্ন বাঁধের মেরামতিতে ব্যয় হতো। কিন্তু সেসব কিছু এবার উধাও। ”
এদিকে, সোমবার রাতে সিকিম যাবার সড়কে রঙপো থেকে ১০ কিমি দূরে ধস নামায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই ওই রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে বিকেল ৩টা নাগাদ ধস পরিষ্কার করে ওই রাস্তায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। মহানন্দা ও বালাসন নদীর পানি কমলেও শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি।
ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের খয়েরকাটা গ্রামের বানভাসী মানুষ জানিয়েছেন, চলতি বছরে প্রাক বর্ষার মরসুমে কুঁজি ডায়না নদীর বাঁধ সংস্কারের কাজ নিম্নমানের হয়েছে। ঠিকাদার ও সেচ দপ্তরের কিছু কর্মীর যোগসাজসেই এই বেহাল অবস্থা বাঁধের।
গত ২৪ ঘণ্টায় পাহাড়ে আর ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় জলপাইগুড়ি জেলার বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে এদিন সরকারি ত্রাণ বণ্টন নিয়ে সর্বত্র ক্ষোভের মুখে পড়েছেন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্রও এদিন বলেন, “সরকারি ত্রাণ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। বন্যা দুর্গত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বন্যা দুর্গত মানুষদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া ও উদ্ধারের জন্য বন দফতরের পোষা হাতির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ”
উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান নারায়ণ চ্যাটার্জি জানিয়েছেন, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি সংলগ্ন এলাকায় বন্যার ফলে তিস্তা, মহানন্দা, জলঢাকা, ডায়না, কুঁজি-ডায়না, রেতি, সুকৃতী নদী বাঁধ এবং গাইড বাঁধের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি রুপিতে পৌঁছেছে। সেচদপ্তর ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে বাঁধ সংস্কারের কাজ করবে।
তবে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না এলে একাজ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ময়নাগুড়ি ব্লকের পদমডি ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের মোতিয়ারচর এলাকায় বন্যা দুর্গত মানুষদের উদ্ধারের কাজে হাত লাগিয়েছেন জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের ৩৫ জন সদস্য।
শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশন এলাকার নদী সংলগ্ন ওয়ার্ডগুলোতে পানি নেমে গেলেও কর্পোরেশনের নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বামফ্রন্টের কাউন্সিলররা মেয়রকে বাঁধসহ ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামত করা ও উপযুক্ত ত্রাণের দাবি জানিয়ে একটি ডেপুটেশন দেন। বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম বন্যা প্লাবিত অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।
কোচবিহারের তোর্ষা নদীর ভাঙনে মধুপুর এলাকায় প্রায় ১৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে পড়েছে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মধুপুর, চন্দনচৌরা, মাটিকাটা, প্রভৃতি এলাকায় পানি ঢুকেছে। তিস্তার ভাঙনে কুচলিবাড়ি দহগ্রামে আবাদি জমি তিস্তার গর্ভে তলিয়ে গেছে।
সেচ দপ্তরের কর্মীরা মধুপুরে বাঁধ মেরামতির কাজ করতে গেলে গ্রামবাসীরা তাদের উপর চড়াও হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মধুপুরের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিস্তৃত পরিধির বাঁধের অনেক দুর্বল অংশ মেরামত না হওয়ায় নতুন করে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি দিলীপ বিশ্বাস জানান, জেলার দুর্বল বাঁধের অংশগুলিকে মেরামতের জন্য সেচ দপ্তরকে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার অবশ্য সেবক থেকে কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত তিস্তা নদীর সংরক্ষিত অঞ্চলে জারি করা লাল সঙ্কেত তুলে নিয়ে হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়েছে।
তবে এই নদীর অসংরক্ষিত অঞ্চলে দোমহনী থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত এলাকায় লাল সঙ্কেত জারি রয়েছে। ৩১নং জাতীয় সড়কের হাসিমারা এলাকায় জলঢাকা নদীতে হলুদ সঙ্কেত জারি হয়েছে। সঙ্কোশ, কালজানি, রায়ডাক নদীর লাল সঙ্কেত তুলে নেওয়া হলেও তোর্সা নদীতে সেচদপ্তর হলুদ সঙ্কেত জারি রেখেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর