শিলিগুড়ি: চারিদিকে শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল। চাপরামারি অভয়ারণ্য ঘেঁষে ডায়না জঙ্গল পরিবেষ্টিত একেবারে দুর্গম এলাকা ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের খেরকাট্টা বস্তি।
বুধবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, মানুষের চোখ নদী আর আকাশপানে। বনবস্তির মানুষ এঁরা। কৃষি আর দিনমজুর খেটে সামান্য যা আয়। তার মধ্যে স্বল্প জমিতে যেটুকু ফসল ফলেছিল, সেটাও ভেসে গেছে ডায়নার পানি। লতিফ হোসেন, পাণ্ডে ছেত্রীরা সেই পানিতে ডোবা জমিই দেখাচ্ছিলেন। এই খেরকেট্টা বস্তির ১২৫০ মানুষ আজ বিপন্ন।
এমনিতেই এ অঞ্চল বন্য হাতি চলাচলের করিডর। হাতির হামলার ভয়ে প্রায়শই রাত পাহারা দিতে হয়। তার উপর বন্যা। এ দুই বিপদের মুখোমুখি এখন এই বস্তির মানুষ। তবে দুই কুনকি(পোষা) হাতি সূর্য আর ফুলমতি এখন বস্তির মানুষদের বড় ভরসা।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি স্বপ্না ওঁরাও, গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ছবি রায়সহ পঞ্চায়েত কর্মীরা যাবতীয় প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। উপযুক্ত ত্রাণ পৌঁছানোর দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। এবার টনক নড়েছে প্রশাসনের।
বনদপ্তর উদ্যোগী হয়ে বস্তির মানুষদের ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া ও উদ্ধারের কাজে দুই কুনকি হাতিকে পাঠিয়েছে। খেরকেট্টা বস্তি ও শুল্কাপাড়া এবং নাগরাকাটার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী একমাত্র কাঠের সেতুটি ডায়না আর কুচি ডায়না নদীর পানির তোড়ে উড়ে গেছে।
ভরা নদী পারাপারের জন্য হাতিই আদর্শ। বিভিন্ন স্কুলে ক্লাসের টেস্ট পরীক্ষা চলছে। হাতির পিঠে চেপেই পড়ুয়ারা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে, আসছে। অসুস্থদের হাতির পিঠে চাপিয়ে শুল্কাপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
২০০৩ সালে বন্যায় বনদপ্তরের কর্মীদের দুর্গম এলাকা থেকে উদ্ধারের কাজে কুনকি হাতিদের ব্যবহার করা হয়েছিলো। পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগেই বি এম ও এইচ ডাঃ শুভদীপ হাওলাদারের নেতৃত্বে একটি মেডিক্যাল টিম সেখানে পৌঁছায়। পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে।
এদিন এই অঞ্চলে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও হিতেন বর্মণ। দিনের আলোয় একরকম পরিবেশ। রাতে আর একরকম। বিদ্যুৎ বিহীন বস্তি। একদিকে বন্যা আর অন্যদিকে বুনো হাতির হামলার আশঙ্কা। এই দুই বিপদকে সামনে রেখেই গত তিনদিন ধরে রাত জাগছেন খেরকেট্টা বস্তির মানুষজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর