কলকাতা: বৃষ্টির অভাবে পশ্চিমবঙ্গে এ মৌসুমে ধান উৎপাদন মার খাবে। এছাড়া ধানের সঙ্গে অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও কম হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে রাজ্য কৃষি দপ্তর।
শনিবার রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য বলেন, “দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে এখনও প্রচুর বৃষ্টি দরকার। বৃষ্টির অভাবে আমন চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে প্রয়োজনের তুলনায় বৃষ্টিপাত কিছুটা বেশি হলেও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে গড়ে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি দরকার। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আরও বৃষ্টির প্রয়োজন। বাঁকুড়া জেলায় জমি চাষযোগ্য করতে এখনও ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি দরকার।
রাজ্য কৃষি দপ্তর আগাম উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করলেও, বিকল্প ব্যবস্থা বা জলাধারগুলি থেকে জল ছাড়ার বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। কৃষি অধিকর্তা জানিয়েছেন, ডি ভি সি কর্তৃপক্ষ জল ছাড়ার কথা জানিয়েছে। ডি ভি সি কর্তৃপক্ষ এখনই চাষের জন্য পানি ছাড়লে রবি মৌসুমে জলাধার থেকে সেচের পানি পেতে অসুবিধা হবে।
রাজ্যে আমন চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমন আগামবার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে জানিয়েছে কৃষি দপ্তর।
কৃষি দপ্তর সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল, দক্ষিণবঙ্গে ৩০ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। এর ফলে আমন রোয়ার কাজ দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত ২৫ শতাংশ কম হয়েছে। কম বৃষ্টির কারণে মাত্র ১৭ থেকে ২০ শতাংশ জমিতে আমন রোয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার এ মৌসুমে ৪২ লক্ষ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিল।
কৃষি অধিকর্তা বলেন, “আমাদের ধানের চারা তৈরি রয়েছে। তবে চারা রোয়ার জন্য জমিতে পানির প্রয়োজন। সাধারণত ১৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট—এই একমাস আমন রোয়ার কাজ হয়। এ সময়েই বর্ষার পানি পাওয়া যায়। এবার বর্ষার পানি না পাওয়ার কারণে আমন রোয়া যায়নি সিংহভাগ জমিতে। ”
কৃষি দপ্তর বলেছে, বর্ষার পানির জন্য আরও কিছুটা সময় দেওয়া হতে পারে। আমন রোয়ার কাজ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু ৩১ আগস্টের পর নতুন করে আর আমন চাষ না করাই ভালো।
কৃষি অধিকর্তা এদিন বলেন, “রাজ্যে খরা-পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, একথা আমরা বলছি না। তবে বৃষ্টির অভাবে কৃষিপণ্য উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ”
প্রসঙ্গত, বোরো উৎপাদনে এবারের ঘাটতি প্রায় ২৫ শতাংশ। আমন উৎপাদন কম হলেও, রাজ্যে সামগ্রিক ধান উৎপাদন কমে যাবার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। কৃষি দপ্তর এখনই বিকল্প চাষের কথা কিছু না বললেও, ভুট্টা উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ডি ভি সি-র পানি পাওয়া গেলে বর্ধমান, নদীয়া এবং হুগলী জেলার কৃষকরা কিছুটা উপকৃত হবেন, কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলা বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে কৃষিপণ্য উৎপাদন কমে যাবে। এখনই জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প চাষের ব্যবস্থা করার দাবি তুলেছে দক্ষিণবঙ্গের কৃষকরা।
কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিকল্প চাষের আগে এখনও দু’সপ্তাহ বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর