কলকাতা : সরীসৃপ প্রজাতির টিকটিকির মতো দেখতে গেকো, যা গ্রাম বাংলায় তক্ষক বলে পরিচিত তা ধরে দিলেই পাওয়া যাবে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ রুপি। পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র এই গুজব ছড়িয়ে একদল অসাধু বন্যপ্রাণি পাচারকারী এখন তক্ষক সংগ্রহে ব্যস্ত।
এ বিষয়ে বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, সম্প্রতি রাজ্যের বনবিভাগ জানতে পেরেছ তক্ষক সংগ্রহ করতে একদল দালাল সক্রিয় রাজ্য জুড়ে। এদের উদ্দেশ্য ও গতিবিধি জানতে কর্মী ও পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তক্ষক সাধারণত পাওয়া যায় পুরানো বাড়ি ও জঙ্গলের বড় গাছের কোটরে। নিশাচর তক্ষক (Gecko) Lacertilia বর্গের Gekkonidae গোত্রের একটি গিরগিটি প্রজাতি। পিঠের দিক ধূসর, নীলচে-ধূসর বা নীলচে বেগুনি-ধূসর। সারা শরীরে থাকে লাল ও সাদাটে ধূসর ফোঁটা। পিঠের সাদাটে ফোঁটাগুলি পাশাপাশি ৭-৮টি সরু সারিতে বিন্যস্ত। কমবয়সী তক্ষকের লেজে পরপর গাঢ-নীল ও প্রায় সাদা রঙের বলয় রয়েছে।
মাথা অপেক্ষাকৃত বড়, নাকের ডগা চোখা ও ভোঁতা। চোখ বড় বড়, মণি ফালি গড়নের। লেজ সামান্য নোয়ানো। দৈর্ঘ্য নাকের ডগা থেকে পা পর্যন্ত ১৭ সেমি এবং লেজও প্রায় ততটা। ওজন হয় ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম। তক্ষকের ডাক চড়া, স্পষ্ট ও অনেক দূর থেকে শোনা যায়। ডাকের জন্যই এই নাম।
কক্কক্ আওয়াজ দিয়ে ডাক শুরু হয়, অতঃপর ‘তক্-ক্কা’ ডাকে কয়েক বার ও স্পষ্টস্বরে। এরা কীটপতঙ্গ, ঘরের টিকটিকি ছোট পাখি ও ছোট সাপ খেয়ে থাকে।
ছাদের পাশের ভাঙা ফাঁক-ফোঁকড় বা গর্তে অথবা গাছে বাস করে। ব্যাপক নিধনই বিপন্ন হওয়ার কারণ। অনেকে ভুলক্রমে তক্ষককে বিষাক্ত সরীসৃপ হিসেবে চিহ্নিত করে।
দেশি চিকিৎসায় এদের তেল ব্যবহূত হয়। ভারত ও বাংলাদেশসহ মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কাম্পুচিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন ও ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৬০০ প্রজাতির তক্ষকের বাস।
হিন্দু ধর্মে একে সাপ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। মহাভারতে পরীক্ষিৎ রাজা এর দংশনে মারা গিয়েছিলেন।
উত্তরবঙ্গের ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপ অধিকর্তা জে ভি ভাস্কর জানিয়েছেন, বক্সার জঙ্গলে একদল লোক বনবস্তির বাসিন্দারের তক্ষক ধরে দিলে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ রুপির প্রলোভন দিচ্ছে। এই খবর পাওয়ার পর ৭টি রেঞ্জের বনকর্মীদের সর্তক করা হয়েছে। পাশাপাশি ভূটান ও আসাম সীমান্তে কড়া নজরদারী করা হচ্ছে।
চিনে বিশ্বাস করা হয়, এর থেকে ক্যান্সার ও এইডসের ওষুধ হয়। তাই এটা পাচার হয়ে চিনে যাচ্ছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তক্ষকের মধ্যে হলুদ প্রজাতির আবার চাহিদা বেশী।
এর আগে একইভাবে ওষুধের দোহাই দিয়ে প্যাঁচা ও রেড স্যান্ডবোয়া সাপ(র্নিবিষ) যা বাংলায় দুমুখো বলে পরিচিত তাও পাচার হওয়ার খবর ছিল।
পরিবেশপ্রেমীদের আশঙ্কা, এই ভাবে ওষুধের নামে গুজব ছড়িয়ে পাচার চললে অচিরেই এই নিরিহ প্রাণী গুলির বিলুপ্তি ঘটবে।
বাংলাদেশ সময় : ১৬০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা : সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর
kumar.sarkerbd@gmail.com