কলকাতা: ভারতের কর্পোরেট সংস্থার টাকায় চলে বৃহত্তম বামদল সিপিএম, ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র এই প্রতিবেদন ঘিরে শুরু হয়েছে চরম বির্তক। এই প্রতিবেদন প্রকাশ করায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি।
গত শুক্রবার টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এই প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্পোরেটের থেকে অর্থ পেয়ে যে রাজনৈতিক দলগুলি লাভবান, তার অন্যতম সিপিএম। বস্তুত ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে, এই বিচারে কংগ্রেস, বিজেপি, বহুজন সমাজ পার্টির পরই রয়েছে সিপিএম। বলা হয়েছে যে মোটা অঙ্কের দাতাদের নাম গোপন করে রাখে পার্টি।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদনে আরও অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, বড় অঙ্কের অর্থদাতাদের নাম গোপন করছে সিপিএম। ভারতের আয়কর আইন এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী ২০হাজার রুপির বেশি অঙ্কের অর্থদাতাদের নাম জানাতে বাধ্য যে কোনো রাজনৈতিক দল।
এর প্রতিক্রিয়ায় ওই প্রতিবেদনটিকে দুরভিসন্ধিমূলক আখ্যা দিয়ে শনিবারের বিবৃতিতে এই দুই অভিযোগেরই জবাব দিয়েছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি।
তারা বলেছে, কোনো কর্পোরেটের টাকায় দলের তহবিল ভরছে না। গত সাত বছরে পার্টির সব রাজ্য কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির মোট সংগ্রহের মাত্র ০.৩৫শতাংশ এসেছে বিভিন্ন সংস্থা বা সোসাইটির দান হিসেবে।
তারা তথ্য দিয়ে দেখিয়েছে, সংগ্রামের জন্য সংগৃহীত অর্থের সিংহভাগই এসেছে বিপুল সংখ্যার নিপীড়িত জনতার কাছ থেকে। আর ২০হাজার রুপির বেশি অঙ্কের দান মোট আয়ের মাত্র ০.৮১শতাংশ। দুক্ষেত্রেই যা এক শতাংশেরও কম। ২০০৫-১১, এই সাত বছরে সব রাজ্য কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সংগৃহীত অর্থের হিসেব দিয়ে পরিষ্কার জানানো হয়েছে যে, অর্থের বড় অংশই এসেছে পার্টি সদস্যদের ‘লেভি’ থেকে।
সিপিএম সদস্যদের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ লেভি হিসেবে জমা দিতে হয় পার্টিকে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কর্পোরেটের দান সাধারণভাবে পার্টি গ্রহণ করে না। তবে, অন্ধ্র প্রদেশের কিছু সংস্থা পার্টি তহবিলে দান করেছে। গত বছর তা দেখার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পলিট ব্যুরো। পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনো সংস্থার স্বল্প অনুদানও গ্রহণ করা হবে না।
প্রতিবাদে আরও বলা হয়েছে, সিপিএম এই অর্থদাতাদের নাম নিয়মিতভাবে নির্বাচন কমিশন এবং আয়কর দফতরকে জানিয়ে আসছে আইন মেনে। এবার পার্টির ওয়েবসাইটেও সবিস্তারে জানিয়ে দেওয়া হবে ২০হাজার রুপির বেশি অঙ্কের অর্থদাতাদের নাম। তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় সাধারণ থেকে দরিদ্র মানুষের ওপর। মুখ্যত সেই অংশের মানুষের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থেই চলে পার্টি।
এই অর্থ সংগ্রহ করা হয় গ্রাম, পাড়া, মহকুমা বা জেলাস্তরে। প্রতি স্তরে পার্টি কমিটিগুলি সংগৃহীত অর্থের হিসেব রাখে। ২০হাজার রুপির বেশি অঙ্কের দানের ক্ষেত্রে পার্টি কমিটিগুলি রসিদ জমা রাখে। এই দাতাদের নাম পাঠিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে। ফলে, সংগৃহীত আয় বা দাতাদের নাম গোপন করার কিছু নেই।
হিসেবে জানানো হয়েছে, এই সাত বছরে পার্টির মোট সংগ্রহ ৪১৭কোটি ২৬ লাখ ৩৬ হাজার ৮১৭ রুপি। তার মধ্যে পার্টি সদস্যদের লেভি বাবদ সংগ্রহ ১৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ৫৫ হাজার ৩৪৩ রুপি, যা মোট অর্থের ৩৯ দশমিক ৯৭শতাংশ।
অনুদান হিসেবে এসেছে, ১৬৫ কোটি ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫৮৪ রুপি, যা মোটের ৩৯ দশমিক ৭শতাংশ। নির্বাচন তহবিলে সংগ্রহ মোট সংগৃহীত অর্থের ১১ দশমিক ৫৯শতাংশ। কেবল ২০০৭ সালে বর্তমান এবং সাবেক সাংসদরা যারা সরকারি বেতনের টাকা পার্টিকে দান করেন তার থেকে এসেছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৫৮ হাজার ১৫৬ রুপি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, ১২ আগস্ট, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর