কলকাতা: ভারতের ১৮তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (লোকসভা নির্বাচন) মধ্যেই সংরক্ষণ ইস্যু নিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। গত কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিটি সভা-সমিতি থেকেই সংরক্ষণ ইস্যুকে হাতিয়ার করছেন রাহুল গান্ধী-নরেন্দ্র মোদি।
দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, এবার মোদি যদি ক্ষমতায় আসেন, তবে সংবিধান পরিবর্তন করে দেশ থেকে সংরক্ষণ তুলে দেবেন।
রাহুলের বক্তব্য, সংরক্ষণের মূল লক্ষ্য হল ভারতের গরিব, পিছিয়ে পড়া মানুষ, সংখ্যালঘু, দলিত জনজাতি, আদিবাসী ও প্রান্তিক মানুষের অংশীদারত্ব। অর্থাৎ সরকারের লক্ষ্য থাকা উচিত, দেশের অর্থ সমবণ্টন। এটিই সংরক্ষণের মূল বিষয় হওয়া উচিত। কিন্তু সংরক্ষণ শেষ করে দেওয়ার জন্য বেসরকারিকরণ, সেনাবাহিনীতে অগ্নিবীরের মতো প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। যেখানে সমাজের দুর্বল শ্রেণির লোকজন একটু সুবিধা পান, সেখানেই বিজেপির লোকেরা তাদের সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছেন।
এ ইস্যুতে রাহুলকে পাল্টা নিশানা করেছে বিজেপি। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণ নীতির অভিযোগ তুলেছেন নরেন্দ্র মোদি। মোদির স্পষ্ট বার্তা, যতদিন তিনি বেঁচে আছেন, ততদিন দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসর শ্রেণির প্রাপ্য সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে তা মুসলিমদের দেবেন না।
মোদি বলেন, যারা (কংগ্রেস) সংসদ অধিবেশন ভেস্তে দেয়, যারা নির্বাচন কমিশনের দিকে আঙুল তোলে, যারা ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তারা আজ সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট একত্র করার কারণে সংবিধানের নিন্দা করতে নেমে পড়েছে।
বিরোধীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যতদিন আমি বেঁচে আছি, দলিত জনজাতিদের সংরক্ষণকে ধর্মের ভিত্তিতে মুসলমানদের হাতে তুলে দেব না।
মোদি বলেন, সংবিধানের রচয়িতা ড. আম্বেদকর। ভারতের সংবিধান তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, অনগ্রসর শ্রেণি এবং দলিত মানুষদের যে সংরক্ষণ দিয়েছে, তা পুরোপুরি রক্ষা করব আমরা। কখনই তাদের ওপর কোনো আঘাত আসতে দেব না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা (কংগ্রেস) ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দিতে চায়, তারা লিখিতভাবে ঘোষণা করুক যে, ধর্মের ভিত্তিতে তারা সংরক্ষণ চালু করবে। কিন্তু তারা তা ঘোষণা করবে না। কারণ কংগ্রেস সরকারের আমলে তারা কর্ণাটকে অনগ্রসর শ্রেণির প্রাপ্য সংরক্ষণের কোটা ধর্মের ভিত্তিতে মুসলমানদের দিয়েছে। তারা ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ চালু করেছে। ভোট ব্যাংকের জন্য কংগ্রেস আদিবাসী, দলিত, পিছিয়ে পড়া মানুষের সংরক্ষণ তারা ছিনিয়ে নিতে চায়। কংগ্রেস সমাজে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য অনেকদিন ধরে ষড়যন্ত্র করছে।
মুসলিম সংরক্ষণ বিষয় কংগ্রেস সরব হলেও, বিজেপিবিরোধী ইন্ডিয়া জোট প্রকাশ্যে যেমন এর বিরোধিতা করছে না, তেমন পক্ষেও বলছে না। বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার অভিমত, ভারতের বড় সংস্থাগুলো যদি বিক্রি হয়ে যায়, কিংবা সেগুলোতে বেসরকারিকরণ হয়, তবে সংরক্ষণ কীভাবে মিলবে? সরকারি বিমানবন্দর, প্লেন, রেল, হাসপাতাল সব বেসরকারি করা হচ্ছে। সেখানে মুসলিম কেন পিছিয়ে পড়া জনজাতি সংরক্ষণ পাবে না? এদের (বিজেপি) জন্যই ভারতের অন্যতম ইস্যু বেকারত্ব। এবার সংরক্ষণও ওরা শেষ করতে চায়।
বিজেপির বিরোধীরাও কি কংগ্রেসর মতো মুসলিম সংরক্ষণ চায়? এ বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২৪
ভিএস/আরএইচ