ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতার গলফ গার্ডেনে গণধর্ষণ: স্বীকার করল পুলিশ

কলকাতা ব্যুরো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১২

কলকাতা: টালিগঞ্জের গলফ গার্ডেনে গণধর্ষণের শিকার নারীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেছে পুলিশ। শনিবার চিত্তররঞ্জন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তার জবানবন্দি নেওয়া হয়।

একই সঙ্গে ধর্ষিতার পোশাক ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাকে স্ত্রীরোগ বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।

শারীরিক পরীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্ট শনিবারই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

এ ঘটনায় ধৃত শরিফ আলীই ওই নারীকে ধর্ষণ করে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে পুলিশ। তার সঙ্গে আরও ৪-৫ জন ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে শরিফ। তবে তারা কেউ ধর্ষণ করেনি বলে পুলিশের অনুমান।

শনিবার শরিফকে আদালতে তোলা হয়। তবে অভিযুক্ত আরও কয়েকজন এখনও পলাকত। তবে আটক শরিফের পরিবারের সদস্যরা ধর্ষণের অভিযোগ মানতে রাজি নন। তাদের দাবি ধর্ষিতা নারী শরিফের পূর্ব পরিচিত। তাদের দু’জনের মধ্যে গভীর সম্পর্কও ছিল। কিন্তু তার স্বামী সমস্ত কিছু জানতে পারার পর ফাঁসানো হয়েছে শরিফকে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় টালিগঞ্জের আনোয়ার শাহ রোড এলাকায় ওই নারীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দার জানিয়েছেন, ওইদিন সন্ধ্যে সাড়ে ৭টা নাগাদ অসুস্থ সন্তানের জন্য ওষুধ কিনতে বের হয়েছিলেন ওই নারী। তখনই তাকে তুলে নিয়ে যায় জনা ছয় দুষ্কৃতিকারী। একটি ফাঁকা গুমটি ঘরে নিয়ে গিয়ে মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয় বলেও অভিযোগ। রাত ৮টা নাগাদ ওই গুমটি ঘর থেকেই মহিলাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।  

ঘটনাস্থল থেকেই মূল অভিযুক্ত শরিফ আলিকে হাতেনাতে ধরে ফেলে ক্ষিপ্ত জনতা। তাকে স্থানীয় একটি ক্লাবে আটকে রেখে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ খবর দেওয়া হয় যাদবপুর থানায়। পরে রাত ৯টা নাগাদ ঘটনাস্থলে এসে শরিফ আলি ওরফে চিনুকে আটক করে পুলিশ।

প্রথমে শারীরিক পরীক্ষার জন্য এমআর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আক্রান্ত মহিলাকে। তবে জখম গুরুতর হওয়ায় রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ চিত্তররঞ্জন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় ধর্ষিতাকে। শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি চিকিৎসাও চলছে ওই মহিলার।  

পুলিস সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে মূল অভিযুক্ত শরিফ আলির বক্তব্যে একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ জনই এলাকায় নির্মাণ কাজের ঠিকা শ্রমিক বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ। নির্মীয়মাণ বহুতলটির প্রোমোটারের সঙ্গেও একাধিক সময় ঠিকার কাজ করেছেন তারা বলেও জানা গেছে।

স্থানীয় মানুষ আরও অভিযোগ করেন, ওই গুমটি ঘরটি ওই বহুতলের প্রোমোটারের অফিস হলেও প্রত্যেক সন্ধ্যায় অভিযুক্তরা ওখানে মদ ও জুয়ার আসর বসাতেন।
 
যেভাবে ভর সন্ধ্যায় খাস কলকাতার বুকে মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তাতে নারীদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি আরও একবার সামনে চলে এসেছে। গলফ গার্ডেনে গণধর্ষণের ঘটনার জেরে প্রকাশ্যে চলে এসেছে ওই এলাকায় স্থানীয় যুবকদের দৌরাত্ম্যের কথাও।

এলাকার নারীদের অভিযোগ, প্রায়শই তাদের হেনস্থার শিকার হতে হয়। রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় স্থানীয় যুবকরা নানা অশ্লীল আচরণ করেন। এমনকি ছোট ছোট স্কুলছাত্রীদেরও প্রায়শই উত্ত্যক্ত করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, এ ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে একহাত নিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

তার বক্তব্য, চ্যানেলের টিআরপি বাড়ানোর জন্য ধর্ষণের খবর না দেখিয়ে সমাজ সচেতনতার উন্মেষ ঘটানোর দায়িত্ব নেওয়া উচিত মিডিয়ার। সংবাদ মাধ্যমের কি করা উচিত নয়, আর কি করা উচিত তা নিয়ে আরও একবার নিজেদের মতামত জানান তিনি।

শনিবার তিনি বলেন, ঘটনাগুলো ঘটলে কিভাবে পুলিশকে খবর দেওয়া যাবে, সে বিষয় জনগনকে সচেতন করুক মিডিয়া।

একই সঙ্গে, সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। যে কোনো ঘটনা ঘটলেই পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও বলেছেন।

অন্যদিকে, পর পর এসব ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেররা।

বিশিষ্ট নাট্যবক্তিত্ব কৌশিক সেন বলেছেন, শহরে সমাজবিরোধীদের দাপট বরাবরই ছিল ৷সম্প্রতি তা বেড়ে গেছে অনেকটাই৷ রাজনৈতিক দলগুলোর মদদ পাচ্ছে সমাজবিরোধীরা৷ এ ধরনের ঘটনা রুখতে পুলিশের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত বলেও তার অভিমত৷  

রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে ৷ নির্মূল করতে মানসিকতার পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রয়োজন কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপের৷ দরকার আরও পুলিশি সক্রিয়তারও৷

রাতের কলকাতা এখন আর নারীদের জন্য নিরাপদ নেই বলে মন্তব্য করেছেন সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়৷ তিনি বলেছেন, একের পর এক গণধর্ষণের ঘটনায় ক্ষুণ্ণ হচ্ছে শহরের সম্মান৷

এ ধরনের ঘটনা রুখতে প্রশাসনের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অভিনেতা বাদশা মৈত্র৷ গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পক্ষেও মতামত ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্টজনেরা৷ 

বাংলাদেশ সময়: ০০১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১২
আরডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।