ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও একটি গানের জন্ম

রক্তিম দাশ. ব্যুরো চিফ. কলকাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১২
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও একটি গানের জন্ম

কলকাতা: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জুন মাস নাগাদ কলকাতার বিখ্যাত রের্কড কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর গান তৈরির জন্য গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীদের অনুরোধ জানায়।

সেই সময় কলকাতা ও মুম্বাইয়ের আধুনিক বাংলা গানের গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, শ্যামল গুপ্ত, শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মীরাদেব বর্মন, সুবীর হাজরা, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল দত্ত, অমিতাভ নাহা, বিশ্বনাথ দাস, পবিত্র মিত্র প্রমুখ গান লিখেছিলেন।



আর এই কালজয়ী গানগুলো সুর দেন শচীন দেববর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, রাহুল দেববর্মণ, বাপ্পী লাহিড়ী, অপরেশ লাহিড়ী, নীতা সেন, দীনেন্দ্র চৌধুরী, অভিজিৎ, দেবব্রত বিশ্বাস, সলিল চৌধুরীরা।

বিখ্যাত সরোদ বাদক রবিশংকরও এইচএমভি থেকে নিজ কণ্ঠে ও যন্ত্রসংগীতের রেকর্ড করেছিলেন ‘জয় বাংলা’ নামে।

কলকাতা থেকে প্রচারিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও বেজেছে কলকাতার শিল্পী অংশুমান রায়ের গাওয়া, ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে’।

৭১ এর জুলাই মাসে এইচএমভি থেকে গান রেকর্ড করার অনুমতি পেয়ে শিল্পী অংশুমান রায়ের অনুরোধে গৌরীপ্রসন্ন লিখলেন বাঙালির সেই কালজয়ী গান ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে উঠে রণি। ’

আকাশবাণী থেকে প্রথম গানটি প্রচারিত হয় ‘সংবাদ বিচিত্রা’ নামে একটি অনুষ্ঠানে। উপেন তরফদার ছিলেন যিনি অনুষ্ঠান প্রযোজক, তিনি গানটি তৈরি হবার পর হারমোনিয়াম সহযোগে গাওয়া অংশুমানের কণ্ঠে গানটি টেপ রেকর্ডারে ধারণ করে তা প্রচার করেছিলেন একাত্তরের জুলাই মাসে।

সম্প্রতি কলকাতায় উপেন তরফদার কলকাতায় বাংলানিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকারের বলেন, “আমার কাছে খবর এলো, দেবদুলালের (মুক্তিযুদ্ধের সময় কালজয়ী শব্দ সেনা) বাড়িতে বাংলাদেশ থেকে চিত্রকর কামরুল হাসান এসেছেন। আমি তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য টেপ রেকর্ডার নিয়ে গেলাম। দক্ষিণ কলকাতার লেকে দেবদুলালের বাড়িতে গিয়ে দেখলাম সেখানে রয়েছেন গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার, অংশুমান রায়,দীনেন্দ্র চৌধুরী আর কামরুল হাসান। ”

তিনি বলেন, “কামরুল হাসানের সঙ্গে কথা বলা শেষ করে উঠব, আমাকে গৌরীপ্রসন্ন বলল, অংশুমান আমার লেখা নিয়ে একটা গান সুর করছে শুনে যাও। আমি আবার রেকর্ডার অন করলাম। হারমোনিয়াম নেই। দেবদুলালের বাড়ির নিচের তলায় একজন থাকতেন তার হারমোনিয়াম আনা হলো। তবলা কই? সেই সমস্যার সমাধান করলেন দীনেন্দ্র। একটি মোটা বাধাঁনো বই নিয়ে গানের সাথে তাল দিতে থাকলো। গান রের্কড করলাম। অসাধারণ গান। ”

“আকাশবাণীতে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে গানটা সম্পাদনা করে ১৫ মিনিটের অনুষ্টান করলাম। সেদিন সংবাদ বিচিত্রায় আর কোন প্রতিবেদন দিলাম না। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবার জন্য অফিস থেকে বের হলাম রেডিওতে শুনব বলে। ”

উপেন তরফদার বলেন, “শিয়ালদা স্টেশন থেকে আগরপাড়া। ট্রেন থেকে নেমে শুনি সংবাদ বিচিত্রা শুরু হয়ে গেছে। রাস্তার দুপাশে সব বাড়িতে ফুল ভলিউমে রেডিওতে বাজছে অংশুমানের-‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে উঠে রণি। ” আর তারপরই বঙ্গবন্ধুর সেই কণ্ঠ-‘ এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।