কলকাতা: রাজ্যে প্রধান বিরোধী জোট বামফ্রন্টের ১২ ঘণ্টা হরতাল ও বিজেপির ডাকা ভারতজুড়ে ধর্মঘটে বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন জেলায় হরতাল সমর্থনকারীদের সাথে শাসকদল তৃণমূলের কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
এদিন সকাল থেকেই সংর্ঘষ শুরু হয়ে রাজ্য জুড়ে।
রায়গঞ্জে হরতালে সমর্থকদের ছোড়া পাথরে জখম সরকারি বাসের চালক। সকাল সাতটা নাগাদ রায়গঞ্জে শিলিগুড়িগামী সরকারি বাসকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়েন হরতাল সমর্থকরা। ভেঙে যায় বাসটির কাচ। আঘাত লাগে চালক অপূর্ব রায়চৌধুরীর মাথায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রায়গঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ এলে পালিয়ে যান পিকেটাররা।
উত্তর ২৪ পরগণা জেলার নৈহাটিতে সকাল থেকেই অবরোধে সামিল হয়েছিলেন বাম সমর্থকরা। অভিযোগ সেই সময়ই পিকেটারদের মারধর করে তৃণমূল সমর্থকরা। ঘটনায় একজন নারী সহ ১২ জন আহত হয়েছেন। ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
খড়দহ স্টেশন অবরোধ করেছিল পিকেটাররা। স্টেশন বন্ধ করতে গেলে তৃণমূল সমর্থকরা তাদের মারধর করে। ঘটনায় ৭ জন আহত হয়েছে।
বারাসতে একটি সরকারি বাসে ভাঙচুর চালায় বিজেপি সমর্থকরা।
উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার মোড় অবরোধ করতে গেলে এসইউসিআই কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বাগুইআটির ভিআইপি রোডে এদিন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কুশপুতল পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি সমর্থকরা। ঘটনাস্থল থেকে ২০ জন হরতাল সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত লেকটাউনও। যশোর রোডের বাঙুর এলাকা থেকে এক বিজেপি সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হাওড়ার বকুলতলায় হরতাল সমর্থনকারীদের মিছিলের ওপর হামলা চালায় তৃণমূল সমর্থকরা। ভাঙচুর করা হয় বাস। কিংস রোডে বিজেপির মিছিলে বোমা ছোঁড়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজপি ও তৃণমূলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে উত্তজনা ছড়িয়েছে গুলমোহর এলাকাতেও।
বর্ধমানে সিপিএম অফিসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছে। হুগলী জেলার তারকেশ্বরে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় তৃণমূল। কাকিনাড়া স্টেশনে অবরোধকারীদের তুলে দিলে তৃণমূল সমর্থকদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। চুঁচুড়ায়ও বিজেপির মিছিলে হামলার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন বিজেপির হুগলি জেলা সম্পাদক।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৯ জনকে ৷ সকালে জয়নগরে জোর করে দোকান বন্ধ ও গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করার অভিযোগে ২০ জন বিজেপি সমর্থক ও ১৯ জন সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করে জয়নগর থানার পুলিশ ৷
পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় সকালে মিছিল করেন সিপিএম সমর্থকরা ৷আদ্রায় সিপিএম সমর্থকরা ট্রেন অবরোধ করে ৷পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলে দেয় ৷ পুরুলিয়া জেলায় অধিকাংশ রুটেই বেসরকারি বাস বন্ধ ছিল ৷বন্ধ ছিল দোকানবাজার ৷
এদিকে,অপ্রত্যাশিত ভাবে সরকারি ফতোয়া অগ্রাহ্য করে বামেদের ডাকা হরতালে কার্যত ফাঁকাই রইল রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর মহাকরণ। এর আগের হরতালেও মহাকরণে সরকারি কর্মীদের হাজিরার ছবিটা ছিল বেশ উজ্জ্বল।
কিন্তু এদিন ৫০ শতাংশের বেশি কর্মী মহাকরণে কাজে যোগ দেননি। কোনও কোনও বিভাগে ৪০ শতাংশ আবার কোনও বিভাগে ৪৫ শতাংশ হাজিরা রয়েছে। হরতালে কাজে যোগ দেওয়া নিয়ে আগেই সার্কুলার জারি করেছিল রাজ্য সরকার। রয়েছে বেতন কাটার নির্দেশও। কিন্তু তার মধ্যেও অনুপস্থিতির হার ছাপিয়ে গেল উপস্থিতিকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১২
আরডি/এজে