ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মমতার সমর্থন প্রত্যাহারে অনিশ্চিত তিস্তা চুক্তি ও ছিটমহল বিনিময়

রক্তিম দাশ, ব্যুরো চিফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১২
মমতার সমর্থন প্রত্যাহারে অনিশ্চিত তিস্তা চুক্তি ও ছিটমহল বিনিময়

কলকাতা: ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি প্রত্যাহার ও খুচরা ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইউপিএ-২ সরকার থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জির সমর্থন প্রত্যাহারের ঘটনায় আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল ভারত-বাংলাদেশের মধ্যেকার দীর্ঘ অমীমাংসিত তিস্তার পানি বন্টন ও ছিটমহল বিনিময়।

এ দু’টি চুক্তির বাস্তবায়ন করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য্য।

ঠিক এ সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতার এ ভূমিকায় চুক্তি দু’টির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন সংশয়ে ভারতের রাজনৈতিক মহল। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসর্ম্পক গড়ার ক্ষেত্রে ভারত সরকার এ প্রশ্নে যথেষ্ট উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করলেও বার বার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ জটিলতায় তা সম্ভব হচ্ছে না।

২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় সফরসঙ্গী হওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েও শেষ মুহূর্তে মমতা যাননি তিস্তার পানি বন্টনে রাজ্য নায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হবে, এ অভিযোগে। যদিও সেই সফরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে ৬ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত হয় সীমান্ত প্রটোকল চুক্তি। যার মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়টি ছিল। কিন্তু কবে এ বিনিময় সম্পন্ন হবে তা উল্লেখ করা হয়নি।

এরপরই পশ্চিমবঙ্গের তিস্তার পানি বন্টনে হিস্যা কতো হবে তা দেখার জন্য বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে দিয়ে একটি এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন মমতা। এ কমিটির কাজ ছিল শুকনো মৌসুমে তিস্তার গতি প্রবাহ পরিমাপ করে দেখে বাংলাদেশকে কতোটা পানি দেওয়া সম্ভব তা নিরূপণ করা। কিন্তু আজও সে সংক্রান্ত কোনো রির্পোট জমা পড়েনি রাজ্য সরকারের হাতে। এ রির্পোটের ওপর ভিত্তি করেই রাজ্যের দাবি জানানোর কথা।

সম্প্রতি ইরানের তেহরানের ন্যাম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এ দু’টি বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন।

তিস্তার পানি বন্টনের ইস্যুতে মমতাকে রাজি করার পাশাপাশি সদ্য শেষ হওয়া সংসদের বাদল অধিবেশনে সীমান্ত প্রটোকল চুক্তির জন্য আলোচনা ও ঐকমত্যে পৌঁছাতে চাইছিল ইউপিএ সরকার। কারণ, ভারতের সংবিধান সংশোধন না করে সীমান্ত প্রটোকল চুক্তির বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

কিন্তু বাদল অধিবেশনে ভারতের কয়লা ব্লক সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট অধিবেশনই বানচাল করে দেয়। এরপরই মনে করা হচ্ছিল, আসন্ন শীতকালীন অধিবেশন চুক্তিটি পেশ করা হবে। মমতা ব্যানার্জির সমর্থন প্রত্যাহারের পর ওই অধিবেশনে ইউপিএ’র বিরুদ্ধে অনাস্থাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সংসদ উত্তাল হবে, তখন আদৌ এ চুক্তিটি আলোচনা করা যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আন্দোলনরত ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহসম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত মারাত্মক অভিযোগ করেন।

তিনি শুক্রবার বাংলানিউজকে বলেন, মমতা ব্যানার্জি তিস্তা চুক্তি, ছিটমহল বিনিময়ের বরাবরের বিরোধী। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, এফডিআই নয়, তিনি সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যহার করেছেন, এ চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন যাতে তাকে না করতে হয় সে জন্যই। কারণ, এফডিআই তার দলও সমর্থন করে। তৃণমূলের নির্বাচনী ইশতেহারে তা পরিষ্কার।

তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি, ছিটমহল বিনিময়ের বিরোধিতাকারী দল বিজেপি তার পুরানো বন্ধু। তাদের সঙ্গে নতুন করে সখ্যাতা গড়ে তোলার জন্যই তার এই সমর্থন প্রত্যাহার। ১৯৯২ সালে ১৯ জুন তিন বিঘা চুক্তির বিরোধিতা করে বিজেপির তৎকালীন শীর্ষ নেতা মুরলী মনোহর যোশী কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে বক্তব্য রাখেন। এরপরই ২১ জুন মেখলিগঞ্জে আজকের মুখ্যমন্ত্রী তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী একই ভাবে তিন বিঘা চুক্তির বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন।

ক্ষুব্ধ দীপ্তিমান বলেন, ‘‘তিনি যদি এতোই আন্তরিক হতেন, তাহলে আমাদের সঙ্গে দেখা করতেন। গত ১৪ মাসে আমরা তার সঙ্গে ৬ বার দেখা করতে চেয়েছি। কোচবিহার সফরে এসেও দেখা করেননি। ভারতে অবস্থিত ছিটমহলের ৯০ শতাংশ মানুষ সংখ্যালঘু। তিনি তো সংখ্যালঘুদের জন্য অনেক কিছু করছেন। তাহলে এদের জন্য এটা কি করলেন?’’

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।