ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

জলসেচে দুর্নীতির দায়ে মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা

মুম্বাই সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১২
জলসেচে দুর্নীতির দায়ে মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা

মুম্বাই: জলসেচ প্রকল্পে দুর্নীতিতে ফেঁসে যাওয়া মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।

ভারতের কৃষিমন্ত্রী ও এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ারের ইস্তফার জেরে দলটির মধ্যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, যা মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-এনসিপি সরকারের সামনেও অনিশ্চয়তা তৈরি করে দিয়েছে।



অজিত পাওয়ারের ইস্তফার পরেই রাজ্য মন্ত্রিসভার এনসিপি’র অন্য ২০ মন্ত্রীও তাঁদের ইস্তফাপত্র দলের রাজ্য সভাপতি মধুকর পিছডের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ারের সঙ্গে সংঘাতের জেরই অজিতের ইস্তফা বলে জানা গেছে দলীয় সূত্রেই।

মহারাষ্ট্রে গত দশ বছরে ৭০ হাজার কোটি রুপি খরচ করা হয়েছে জলসেচ প্রকল্পে। এর মধ্যে একটা বড় অংশের অর্থ এসেছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকেও। এই বিপুল অর্থ খরচের পরেও রাজ্যের মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ এলাকা নতুন করে জলসেচের আওতায় এসেছে গত এক দশকে। এর মধ্যে বেশিরভাগ সময়ে দায়িত্বে ছিলেন অজিত পাওয়ারই।

১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী থাকার সময়ে অজিত পাওয়ার বহু কোটি টাকার দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে বিপুল হইচই হয়। তথ্যের অধিকার আইন প্রয়োগ করে সরকারি তথ্যেই দেখা যায়, ঐ দশ বছর সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও জলসেচ প্রকল্পের কাজ রাজ্যে হয়েছে সামান্যই।

অভিযোগ উঠেছে, অজিত পাওয়ার এই সময়ে ২০ হাজার কোটি রুপি ৩৮টি জলসেচ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছিলেন বেআইনিভাবে। চলতি মরসুমে মহারাষ্ট্রে তীব্র খরার কারণে এই বিপুল দুর্নীতি আরও বেশি করে সবার সামনে চলে আসে। পরিস্থিতির চাপে জলসেচ প্রকল্প নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার কথা ঘোষণা করে দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চৌহান।

এই নিয়ে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস-এন সি পি সংঘাত চরমে পৌঁছায় রাষ্ট্রপতি ভোটের পর। শারদ পাওয়ার এবং প্রফুল প্যাটেল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক বয়কট করা শুরু করেন। অজিত পাওয়ার, ছগন ভুজবলসহ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ চাপা দিতে তখন সুর চড়ায় এনসিপি।

কেন্দ্র-রাজ্যের সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি, মুখ্যমন্ত্রী চৌহানের ইস্তফা দাবি করে এনসিপি। শেষ পর্যন্ত সোনিয়া গান্ধী থেকে প্রধানমন্ত্রী, দফায় দফায় বৈঠকের পরে সেই যাত্রায় দুই দলের মধ্যে মিটমাট হয়। তবে এক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন বলেই মনে করা হচ্ছে। শারদ পাওয়ার বা প্রফুল প্যাটেল কেউই এবার এই নিয়ে কংগ্রেসকে দোষারোপ করেননি।

মঙ্গলবার বিকেলে আচমকাই ইস্তফার কথা জানিয়ে দেন অজিত পাওয়ার। তার সরকারি বাসভবন ‘দেবগিরি’তে বসে সাংবাদিকদের অজিত বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে ইস্তফার চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন থেকে শুধুমাত্র একজন বিধায়ক। এরপর তিনি দাবি করেন, কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নেই। অযথা কেন এই দায় নেব? অভিযোগ থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কেনো মন্ত্রিত্ব বা পদ নেব না।

এই ঘোষণার পরে শারদ পাওয়ার একটি টিভি চ্যানেলে জানিয়ে দেন, তার ভাইপো স্বাধীনভাবে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পিছনে দলের পূর্ণ সমর্থন আছে। পাশাপাশি জানিয়ে দেন অন্য কোনো মন্ত্রীর ইস্তফার ‘অনুমতি’ দেওয়া হয়নি। জোরের সঙ্গে পাওয়ার জানিয়ে দেন অজিত পাওয়ারের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যে কংগ্রেস-এন সি পি সরকারের সামনে কোনো সঙ্কট নেই।

এনসিপি রাজ্য সভাপতি মধুকর পিছডে অন্য মন্ত্রীদের ইস্তফার বিষয়টিকে হালকা করে বলেন, দলনেতার ইস্তফার প্রতি সংহতি জানিয়ে মন্ত্রীরা প্রতীকী ইস্তফা দিয়েছেন।

শারদ পাওয়ারের সঙ্গে সঙ্ঘাতের জেরেই অজিতের ইস্তফার খবর খারিজ করে দিয়েছেন দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রফুল প্যাটেল।

অজিত পাওয়ারকে সরিয়ে শারদ পাওয়ারের মেয়ে সুপ্রিয়া সুলেকে উপমুখ্যমন্ত্রী করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত কি না জানতে চাইলে প্যাটেল বিষয়টিকে ‘বাজে কথা’ বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, চিন্তাভাবনা করেই অজিত পাওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং দল তাঁকে পূর্ণ সমর্থন করছে।

তবে পাওয়ার এবং প্রফুল প্যাটেলের দাবি আর বাস্তবের মধ্যে বেশ খানিকটা ফারাক আছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে এদিন আচমকা অজিতের ইস্তফার খবরে হতচকিত হয়ে যান পৃথ্বীরাজ চৌহান।

সোমবার রাতেই নয়াদিল্লিতে শারদ পাওয়ারের সঙ্গে টানা দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চৌহান। সেখানে জলসেচ প্রকল্পের দুর্নীতির তদন্তের বিষয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয় দীর্ঘক্ষণ। বৈঠকে তাঁরা উদ্বেগ জানিয়েছেন বলেই কংগ্রেস সূত্রে খবর। এনসিপি সূত্রেও জানা গেছে পৃথ্বীরাজ চৌহান সামগ্রিক পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলেন শারদ পাওয়ারকে। আরটিএ আইনের জেরে প্রকৃত তথ্য আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে দেন পাওয়ারকে।

সোমবারের এই বৈঠকের খবর পৌঁছায় অজিতের কাছে। তারপরেই ইস্তফার সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। ইস্তফা দিয়ে অজিত পাওয়ার একই সঙ্গে শারদ পাওয়ার এবং কংগ্রেসের উপর চাপ তৈরির কৌশল নিলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে অজিত পাওয়ার এদিন এই কথা মানতে চাননি।

তিনি বলেন, “আমি কোনো চাপ তৈরির কৌশল নিচ্ছি না। শ্বেতপত্র প্রকাশ করা নিয়েও আমার কোনো আপত্তি নেই। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।