ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

হলদিয়া বন্দর কর্মকর্তাদের অপহরণ নিয়ে বির্তকে মমতা সরকার

কলকাতা ব্যুরো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১২

কলকাতা: রাজ্যের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া বন্দরের পরিচালন সংস্থা এবিজির শীর্ষ ৩ কর্মকর্তাকে অপহরণের অভিযোগ সামনে আসার পর যেন টাটাদের সিঙ্গুর ছেড়ে যাওয়ার ঘটনার মতোই চরম অস্বস্তিতে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার।

গত কয়েক দিন ধরেই ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের কাজে ফেরানোর দাবিতে এবিজি গ্রুপের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে চলেছিল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি।

সংস্থার কাজে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠছিল। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়েছে তৃণমূলের সাংসদ হেভিওয়েট নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নামও৷

এবিজি গ্রুপ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে হলদিয়ার দুই নম্বর এবং আট নম্বর বার্থে পণ্য খালাসের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে, তার জন্য গত ১৯ অক্টোবর রাজ্য সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। আইএনটিটিইউসি’র দাপট চলছিলই। এমনকি এবিজির কর্মরত শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে এই শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে।

শেষ পর্যন্ত প্রায় ১৭ লাখ ৫ হাজার রুপি ব্যয় করে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে এবিজি। সেই মতো গত শনিবার বন্দরের ভিতরে ও বাইরে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়। এরপরই অভিযোগ উঠে ৩ কর্মকর্তাকে অপহরণ করা হয়েছে।

এবিজি’র সিইও গুরপ্রীত মালহি অভিযোগ করেন, রোববার দিবাগত রাত ১টা নাগাদ হলদিয়া টাউনশিপের শঙ্খিনী আবাসনের সদর দরজা ভেঙে ঢুকে মাঙ্কিক্যাপ-মাফলারে মুখ ঢাকা জনা পঞ্চাশ দুষ্কৃতি তাদের তিন কর্মকর্তাকে তুলে নিয়ে যায়। তারা হলেন ক্যাপ্টেন মনপ্রীত জলি, জগদীশ বেহেরা ও ভূষণ পাটিল। ভূষণের স্ত্রী ও শিশুকন্যাকেও অপহরণ করা হয়।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই ৫ জন অপহৃতকে রাতভর হলদিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানোর পরে রোববার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ মেচেদা স্টেশন থেকে হাওড়ামুখী প্রথম মেচেদা লোকালে বসিয়ে দুষ্কৃতিরা চলে যায়। যাওয়ার সময়ে শাসিয়ে যায়, ফের হলদিয়ায় পা রাখলে ফল খুব খারাপ হবে। তাদের শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ এবিজি’র।

কলকাতায় ফিরে আসার পরে রোববার সন্ধ্যায় তিন আধিকারিকই বিশাখা পত্তনমে চলে গিয়েছেন। এ ঘটনার পরে এবিজি’র পক্ষে যে আর হলদিয়ায় কাজ করা কঠিন, সিইও তেমন ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার পর এ রাজ্যে শিল্প স্থাপনে কেউ আগ্রহী হবেন কি না, বিভিন্ন বণিকসভার পক্ষ থেকে সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।

এ ঘটনার সমালোচনায় যেমন সরব রাজ্য সরকারের সাবেক শরিক কংগ্রেস থেকে বিরোধী সিপিএম, তেমনি রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে রাজ্যের শিল্প মহলও৷

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির হস্তক্ষেপ দাবি করে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব৷ হলদিয়া প্রসঙ্গে তৃণমূলকে ‘সাইলেন্ট ব্রিগেড’ বলে কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সী৷ আরেক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেছেন,হলদিয়া বন্দরের পরিস্থিতির জন্য দায়ী তৃণমূলই৷

এ ইস্যুতে রাজ্য সরকারের তীব্র বিরোধিতায় সামিল হয়েছে প্র্রধান বিরোধী জোট বামফ্রন্টও।

রাজ্য সরকারকে ‘লক্ষ্মীছাড়া সরকার’ বলে মন্তব্য করে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, সবকিছু জেনেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় রাজ্য সরকার৷

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।