আগরতলা (ত্রিপুরা): এক ঐতিহাসিক সমাবেশের সাক্ষী হয়ে থাকল আগরতলার আস্তাবল ময়দান। রোববার এখানেই বামফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বিধান সভা নির্বাচন উপলক্ষে এর আগে সিপিএমের অঙ্গ সংগঠনগুলো সমাবেশ করেছে আস্তাবল ময়দানে। কিন্তু এদিনের জমায়েত আগের সব কয়টি জনসভাকে ছাড়িয়ে যায়। শুধু লক্ষাধিক মানুষের সমাগমই নয়, এদিনের জনসভা তার বৈচিত্র্যময়তা এবং সৌন্দর্যের দিক থেকেও নজর কাড়ে সবার।
এদিনের সমাবেশ থেকে আওয়াজ তোলা হল শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়নের জন্য গড়ে তুলুন সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারসহ বামফ্রন্টের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত বলেন, “৩৫ বছর আগে আমি ১৯৭৮ সালে প্রথম রাজ্যে আসি। সেবার রাজ্যে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার গঠন হয়েছিল। সেবার প্রথম দেখা ত্রিপুরার সঙ্গে আজকের ত্রিপুরার কোনো মিল নেই। আজকের ত্রিপুরা অনেক এগিয়ে গেছে। উন্নয়নের এই অগ্রধারাকে আরও এগিয়ে নিতে বামফ্রন্টের কোনো বিকল্প নেই। ”
প্রকাশ কারাত আরও বলেন, “সারা দেশ আজ তাকিয়ে ত্রিপুরার দিকে। সারা দেশের নারীরা ভয়ঙ্কর আক্রমণের মুখে। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার সরে যাবার পর নারীদের উপর আক্রমণ বেড়ে গেছে। কিন্তু তার কোন বিচার হচ্ছে না। শুধু নারী কেন দেশের সব মানুষ আজ কেন্দ্রীয় সরকারের আক্রমণের শিকার। ”
প্রকাশ কারাত কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এই সরকার গরিবের কথা ভাবছে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটছে অথচ সরকার নিরুত্তাপ। তারা দেশের বাজার খুলে দিচ্ছে একচেটিয়া পুঁজির কাছে। ”
তিনি জানান, ত্রিপুরায় আন্দোলনের দীর্ঘ এবং গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। আমরা নিশ্চিত ত্রিপুরা আগামী নির্বাচনে রায় দেবে বামপন্থার পক্ষে, মানুষের পক্ষে। ”
মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, “বামফ্রন্টের বিকল্প আরও উন্নত বামফ্রন্ট। রাজ্যের মানুষের কাছে আমরা সেই উন্নত বামফ্রন্ট সরকার দিতেই বদ্ধ পরিকর। ”
ত্রিপুরায় নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়ছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, “এখানে নারীদের উপর কোন ঘটনা ঘটলে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করে। নারীরা এ রাজ্যে সবচেয়ে সুরক্ষিত। অনেক রাত পর্যন্ত নারীরা রাস্তায় ঘোরা ফেরা করেন। কোথাও কোনো সমস্যা হয় না। ত্রিপুরা আজ গোটা ভারতে আদর্শ রাজ্য। ”
বামফ্রন্টের এ নেতা জোর দিয়ে বলেন, “মানুষকে মানুষ হিসেবে বাঁচার অধিকার দিয়েছে বামফ্রন্ট। এখানে আমরা মানুষের অধিকার যেমন সুরক্ষিত করেছি তেমনি কাজের ব্যবস্থা করছি। শ্রমিকের কাজ যেন থাকে সে ব্যাপারটিও আমরা মাথায় রাখছি। ”
মানিক সরকার বলেন, “ত্রিপুরায় কোন শ্রমিক কাজ হারায় না। ঋণের দায়ে কোন কৃষকে আত্মহত্যা করতে হয় না। এখানে সারাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার পার্থক্য। এখানে বামফ্রন্ট সরকার বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলছে। ”
তিনি কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, “এরা নির্বাচনের জেতার জন্য সন্ত্রাসবাদী আইএনপিটির সঙ্গে আঁতাত করছে। রাজ্যের মানুষের উন্নয়নের প্রশ্নে কংগ্রেসের কোন বক্তব্য নেই। তারা শুধু যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় আসতে চায়। রাজ্যের মানুষ এদের ভোট দিয়ে নিজের সর্বনাশ করবে না। ”
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, eic@Banglanews24.com