কলকাতা থেকে: মৌলবাদ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ার। বাংলাদেশে মৌলবাদীরা শক্তিশালী হলে সেটি ভারতের জন্য শুভকর হবে না।
বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে কলকাতায় ‘মুক্ত ভাবনা না মৌলবাদ’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার ‘সৈয়দ নৌসের আলী’ প্রেক্ষাগৃহে শুক্রবার বিকেলের ওই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাদেশ থেকে আলোচক হিসেবে অংশ নেন লেখক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম। এতো বড় বিজয় বাঙালি আর কোনোদিন অর্জন করেননি। এ বিজয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ভাবে ভারত সমস্ত দিক থেকে সহায়তা করেছিল।
বাংলাদেশের সংবিধানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান ভারতের সংবিধানের খুব কাছাকাছি। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতিকে বন্ধ করার রাস্তা আছে।
* কলকাতায় বিজয় দিবসের আলোচনা সভা
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন রাষ্ট্রকে সব সময় ধর্মের থেকে দূরে রাখতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর পাকিস্তানপন্থিরা ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছেন। ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা সরকার আবার মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যকে জাগ্রত করার চেষ্টা করেছেন।
সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে জামায়াত প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করে বলে দাবি করেন তিনি। এ সংগঠনটির আয় বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বলে জানান তিনি। তিনি জানান, মোট প্রায় ৫০ বিলিয়ন পাউন্ড বাংলাদেশের মৌলবাদীদের জন্য খরচ হয়।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ভারতের মত কোনো দেশে যেকোনো রাজনৈতিক দলের কাছেও এটা কল্পনার অতীত। তিনি জোরের সঙ্গে দাবি করেন, পাকিস্তান জামায়াতের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের পরাজয়ের বদলা নিতে চাইছে।
এই প্রসঙ্গে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও ভারত সরকারেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আবেদন জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মৌলবাদের কুফল সব থেকে বেশি পশ্চিমবঙ্গে এসে পড়বে।
নঈম নিজাম বলেন, মুক্ত চিন্তাকে সমর্থন করে বাংলাদেশের সরকারে এমন একটি দল রয়েছে।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশে ৫৪হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রায় প্রায় ৯৮ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। এদের একাটা বড় অংশ জামায়াতে যোগ দেন।
তিনি দাবি করেন, ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মৌলবাদীদের রসদের জন্য খরচ করা হয়। বাংলাদেশে মৌলবাদীরা শক্তিশালী হলে তা পশ্চিমবঙ্গের জন্যও সমূহ বিপদ ডেকে আনবে।
১৯৭১ সালে যেভাবে ভারতের জনগণ ও ভারত সরকারকে বাংলাদেশের পাশে পাওয়া গিয়েছিল মৌলদের বিরুদ্ধে লড়াইতেও সেভাবেই বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে পাশে চান বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মৌলবাদকে রুখতে না পারলে গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয়। বাংলাদেশে মৌলবাদীদের প্রভাব পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা ভারতে পড়বে।
তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলাদেশের উন্নয়ন চায়। কিছু ক্ষেত্রে ভারত সরকার রাজ্যকে না জানিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়াতে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী দিনে বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসবে এবং গণতন্ত্রের ভিত আরও শক্ত হবে।
‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি’ আয়োজিত আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতের লোকসভা সদস্য স্রী সৌগত রায়, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের পক্ষে প্রথম সচিব তোফাজ্জেল হোসেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর