ঢাকা: সামনেই লোকসভা ভোট। এই ভোটকে লক্ষ্য রেখে ইউপিএ-২ সরকার অন্তর্বর্তী বাজেটে উদার অর্থনীতির পথ খুলে রাখলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি. চিদম্বরম৷ বাজেটে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্ট হয়ে উঠল মনমোহনী সংস্কারের ছাপ৷
অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারও লোকসভা ভোটের দিকে নজর রেখেই জনমোহিনী রাজ্য বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
বাড়ছে পরিকল্পনা খাতে ব্যয়। নিজস্ব কর থেকে প্রাপ্ত রাজস্বও বাড়বে বলে আশা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সব মিলিয়ে বাজেট ঘাটতি ৯ কোটি টাকার মধ্যে বেঁধে রাখা যাবে বলে অমিত মিত্র মনে করেন। তাঁর দাবি, ‘বাংলা যা করছে আজ, ভারতে তা করবে কাল। ’
অর্থমন্ত্রী পি. চিদম্বরমের এটি ছিল তার জীবনের নবম বাজেট ভাষণ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করতে গিয়ে তিনি ঘোষণা করলেন আয়কর পরিকাঠামোয় কোনও পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। সোজা কথায় এদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যে বাজেট পেশ করলেন তা সবটাই ছিল আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে। মধ্যবিত্তের ব্যবহৃত নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের উপর কর ছাড় দেয়া হয়েছে।
ভোটের দিকে তাকিয়ে উত্পাদন শুল্ক কমালেন ৷ স্বীকার করলেন অর্থনীতির বেহাল দশাও৷ কিন্তু ভোটের দিকে তাকিয়ে বাজেট করলেও বঞ্চিত হয়েছে বাংলা৷ যার প্রতিবাদে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশের সময়ই ওয়েলে নেমে ক্ষোভ জানান তৃণমূল কংগ্রেস সংসদ সদস্যরা৷ এই অন্তর্বর্তী বাজেটে বড় গাড়ি, দেশীয় মোবাইল, দেশীয় সাবান, ফ্রিজ, টিভি, স্কুটারের দাম কমার কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী৷
ভোট টানতে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির মতো ‘অপ্রিয়' সিদ্ধান্ত নেননি অর্থমন্ত্রী৷ ঘোষণা করেছেন তিনটি শিল্প করিডর তৈরির কথা৷ মুম্বই-বেঙ্গালুর, চেন্নাই-বেঙ্গালুর এবং অমৃতসর-কলকাতা এই তিনটি শিল্প করিডর৷
বাংলার জন্য এই শিল্প করিডর ছাড়া অন্তর্বর্তী বাজেটে কিছুই প্রায় জোটেনি৷ সার্বিকভাবে প্রাথমিক এবং উচ্চ শিক্ষার খাতে জোর দেওয়া হয়েছে। রাজ্যগুলিকে সাহায্যের পরিমাণ ১.৩৬ লক্ষ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৩.৩৮ লক্ষ কোটি ঘোষণা করা হয়েছে৷
সেনাবাহিনীতে একপদ এক পেনশন নীতি চালু করলেন চিদম্বরম৷ যার জন্য প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ হয়েছে পাঁচশো কোটি৷ প্রতিরক্ষা, জাতীয় সড়ক, টেলিকমিউনিকেশন ক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে৷ উত্তরাখণ্ডসহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির জন্য বারোশো কোটি অনুদান ঘোষণা করা হয়েছে৷ প্রতিটি ব্যাঙ্কের প্রতি শাখায় এটিএম খোলা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী৷
এবারের অন্তর্বর্তী বাজেটে জোর দেওয়া হয়েছে ছোট শিল্প, শিশু উন্ন্য়নের উপর৷ প্রতিরক্ষা ও আরপিএফ খাতে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে৷ পরিসেবা কর কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে৷
রাহুল গান্ধীর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি বাজেটে প্রতি ক্ষেত্রে ফুটে উঠেছে৷ রাহুল দেশের তরুণ সমাজকে কাছে টানার ক্ষেত্রে বারে বারেই জোর দিয়েছেন৷ সেই মতকে গুরুত্ব দিয়ে ছাত্র ঋণের বিষয়ে নীতি পরিবর্তন করা হয়েছে৷
পড়াশোনার সময় ঋণের সুদ সরকার দেবে বলে ঘোষণা হয়েছে৷ অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন উন্নয়নের হার কমেছে৷ বিশ্বমন্দার প্রভাব পড়েছে ভারতের অর্থনীতিতে৷ চিদম্বরম আশাবাদী ডলারের তুলনায় টাকার দাম কমার আর আশঙ্কা নেই৷
চিদম্বরমের দাবি বিনিয়োগের হার খুব একটা কমেনি৷ সরকার, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সেবি যৌথভাবে টাকার পতন রোধ করেছে৷ একইসঙ্গে চিদম্বরমের মন্তব্য "কোনও একজনের পক্ষে দেশের অর্থনীতির হাল ফেরানো সম্ভব নয়৷ এটা যৌথ প্রক্রিয়া৷
এদিকে ইউপিএ-২ সরকার থাকবে মাত্র তিন মাস৷ পরবর্তী সরকার এই বাজেট মানবে কি না সেটাও প্রশ্ন৷ একমাত্র যদি ইউপিএ-৩ তৈরি হয় তাহলেই চিদম্বরমের এই বাজেট কার্যকর হতে পারে৷
বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪