নিজের ঘরের ছেলে-মেয়ে বউয়ের ওপর বিশ্বাস না করে কার ওপর বিশ্বাস করবেন লালু প্রসাদ যাদব। অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছেন, বাইরের লোক কখনও আপন হয় না।
এতো পরিশ্রম ধাতে সইবে না বলে সতীর্থরা বারণ করেছিলেন। তিনি শোনেননি। তাঁর সাফ কথা, নিজের ছেলেমেয়েকে বাদ দিয়ে রাজ্যের মানুষকে ভালবাসতে পারব না। এবারের ভোটে তিনিও প্রার্থী। তাঁর প্রচারের ফানুস ফুটো করার কম চেষ্টা হচ্ছে না। তিনি অটল। তাঁর দল, রাষ্ট্রীয় জনতা দল বা আরজেডি’তে কানাকানি। সবারই প্রশ্ন, লালু এটা কী করছেন? রাজনীতিটাকে ঘরবন্ধী করতে চাইছেন কেন? একটু বাইরের দিকে তাকান। সমালোচকদের মুখে ঝামা ঘষেছেন রাবড়ি দেবী। বলছেন প্রার্থী ঘরের কী বাইরের, সেটা বড় কথা নয়, যোগ্যতাই বিবেচ্য।
পুষ্করিণীতে গামছা ছুঁড়ে ফেললে টুপ করে ডোবে না। ডুবতে সময় নেয়। লালু প্রসাদও আস্তে আস্তে তলিয়েছেন। বিহারের জনতা দল ইউনাইটেড বা ডেডিইউ আর বিজেপি জোট তাঁর পায়ের তলার জমি কেড়েছে। একসময় প্রবাদ ছিল,সামোসামে আলু আর বিহারে লালু চিরকালীন। তাঁকে সরানোর ক্ষমতা কারো নেই। সেই লালু যখন ২০০৯-এর নির্বাচনে হারলেন, চমকে ওঠে সারা দেশ। মুসলমান অধ্যুষিত ভাগলপুর আসনেও হারল লালুর দল। এবার এই দুই কেন্দ্রে প্রার্থী লালুর স্ত্রী-কন্যা। লালুর চ্যালেঞ্জ, দেখি এদের কে হারায়।
বিহারে রাজনৈতিক চিত্র বদলে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। বিহার, বিজেপিকে মানতে রাজি, মোদীকে নয়। গতবারের লোকসভা নির্বাচনে জেডিইউ নেতা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জোট বেঁধেছিলেন বিজেপির সঙ্গে। তাতে সুবিধাই হয়েছিল। লোকসভার ৪০টি আসনের মধ্যে জিতেছিলেন ৩২টিতে। বিধানসভার ২৪৩ আসনের ২০৬টিতে জয় ছিনিয়েছিলেন। জয়ের উল্লাসে খেয়াল হয়নি আসন জিতলেও ভোটের গড় নামতে শুরু করেছে। জেডিইউ-বিজেপি জোট পেয়েছে মাত্র ৩৯ শতাংশ।
তার মানে ৬১ শতাংশ তাদের বিপক্ষে। অঙ্কটা মাথায় ঢুকতেই বিজেপি সংসর্গ ত্যাগ করেছেন নীতীশ। ততদিনে ঢেউয়ের ওলটপালটে লালুর গামছা আবার ভেসে উঠেছে।
লালুর উল্লাস মুসলমান সহানূভূতির জোরেই। যাদব-মুসলমানরা এক ব্রেকেটে আটকে ছিলেন। তারাও মনে করেছিল লালু তাদের। লালু ভালবাসার প্রতিদানও দিয়েছিলেন। যেটা কেউ পারেনি, লালু সেটা করে দেখিয়েছিলেন। লালকৃষ্ণ আদভানির রামরথ তখন দেশময় অবাধে ছুটছে, রুখেছেন লালু। ১৯৯২-এ বাবরি সমজিদ ধ্বংসের পরই বিজেপিকে নস্যাৎ করতে মারিয়া হয়েছিলেন উত্তর প্রদেশের মুলায়ম সিং যাদব, বিহারের লালুপ্রসাদ যাদব। তাঁরা সফলও হয়েছিলেন। উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে হারিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। নীতীশ কুমার উন্নয়নের ধোঁয়া তুলে বিজেপিকে হাত ধরে টেনে আনেন বিহারে। পরে মোদী যখন বিজেপির মুখ হয়ে উঠলেন, তখন দ্বিধায় পড়লেন। তিনি নিশ্চিত হলেন, আর যাই হোক ২০০২-এ গুজরাট দাঙ্গার দাগ যার ভাবমূর্তিতে, বিহার তাঁকে গ্রহণ করবে না। তিনি বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। লালু নতুন উদ্যমে ফিল্ডে নেমে পড়েছেন। এবার কংগ্রেস আর ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধে ২৭টি আসলে প্রার্থী দিয়েছেন লালু। শরিকদের দিয়েছেন মাত্র চারটি আসন। বাকীগুলোতে আরজেডি-র হেভিওয়েট প্রার্থী। মুসলমান আর যাদবদের ভোট নিশ্চিত করতে চান তিনি। মূখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার একা পড়ে গেছেন। জনসভায় চিৎকার করে বলছেন, সাম্প্রদায়িকতা রুখতে যদি সরকারকে কুরবানি দিতে হয় দেব। শুনে সবাই বলছে, নীতীশের হুশ হতে এতো সময় লাগল।
জাত-পাত জর্জরিত বিহারে, বিজেপির প্রার্থী হিসেবে আছে উচ্চ সম্প্রদায়ের হিন্দুরা। ভূমিহার, রাজপুত, ব্রাক্ষণরাই তাদের প্রার্থী। ছ’জন মুসলামানকে প্রার্থী করেও বোঝাতে চেয়েছে, তারা ধর্মনিরপেক্ষ। ভোটের পর বিহার জাতীয় রাজনীতিতে একটা বড় জায়গা নেবে। সরকার গঠনে তাদের ভূমিকা থাকবে। এক বছর পর নীতীশ কুমারের আরও বড় পরীক্ষা। রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে নামতে হবে। তখনই ঠিক হয়ে যাবে তিনি মূখ্যমন্ত্রী থাকবেন কীনা। স্ত্রী-কন্যাকে সামনে রেখে লালু প্রসাদ যাদবও আশায় আশায় দিন গুনছেন।
**চোখ ছলছল ছিটমহল
**বিয়ের গেরোয় মোদী
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৪