ঢাকা: দিল্লির সিংহাসনে কে বসবেন এ নিয়ে বিশ্বের তাবৎ মানুষ তাকিয়ে আছেন ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দিকে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটির ১৬তম লোকসভা নির্বাচন শুরু হচ্ছে ৭ এপ্রিল থেকে।
এনডিটিভি’র সমীক্ষায় বলা হয়েছে সর্বোচ্চ আসন পেতে যাচ্ছে বিজেপি। তারা নাকি ২৫৯ আসন পেয়ে শীর্ষস্থান দখল করবে। যদিও শীর্ষ দুই- দল কংগ্রেস এবং বিজেপিতে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোন্দল দেখা নেয়।
তবে অন্ধ্রপ্রদেশে আসন রফা নিয়ে দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে একসঙ্গে লড়ার সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি ও তেলুগু দেশম পার্টি। রোববার টিডিপি সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নাইডুর বাসভবনে দীর্ঘ ক্ষণ আলোচন করেন বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকরসহ দলের আরও দুই শীর্ষ নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, তেলঙ্গানার আটটি লোকসভা ও ৪৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে ও সীমান্ধ্র অঞ্চলের পাঁচটি লোকসভা ও ১৫টি বিধানসভা কেন্দ্রে লড়বে বিজেপি। আসন রফা হলেও কে কোন কেন্দ্রে লড়বে তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
চন্দ্রবাবু নাইডু বলেন, “খুব শিগগিরই দু’দলের আসনের তালিকা ঘোষণা করা হবে। ” রাজ্যে টিডিপি-বিজেপি জোট নিয়ে টানাপোড়েন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে জাভড়েকর ও চন্দ্রবাবু জানান, জাতীয় স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে শেষ হাসিটা কার ঝুঁলিতে ভরবে সে ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে ১৬ মে অবধি।
সোয়াশ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের লোকসভা নির্বাচন পৃথিবীর মানুষের কাছে এক মহাযজ্ঞ। ভারতের ভোটারের সংখ্যা ৮০ কোটির ওপর। যে কারণে লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ আন্দোলিত হয়।
নানা ধর্ম-বর্ণ মানুষের ভাষাভাষী দেশটির নানা উৎসব, হরেক পার্বণ উদযাপিত হলেও ভোট উৎসবের উত্তেজনা আলাদা মাত্রা এনে দেয়।
প্রথম দফার নির্বাচন শুরু হবে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা ও আসাম দিয়ে। একইদিনে কোন রাজ্যের সব কটি আসনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হবেনা। মূলতঃ নিরাপত্তাজনিত কারণের দিকে লক্ষ্য রেখেই ধাপে ধাপে রাজ্যগুলোতে নির্বাচন হবে।
আগামী ১৭ এপ্রিল শুরু হবে আমাদের কাছের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ। ভোট নেওয়া হবে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং কেন্দ্রে।
২৪ এপ্রিল ভোট রায়গঞ্জ, মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ এবং বালুরঘাট কেন্দ্রে।
৩০ এপ্রিল ভোট হবে বর্ধমান পূর্ব এবং দুর্গাপুর, বোলপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুর, হুগলী, আরামবাগ এবং বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে।
ভোটের আগে শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় পৌঁছান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভিএস সম্পত। রোববার সকালে সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরাl ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয়েছে কমিশনে l
শহরে আসার পরই প্রথম পর্বের নির্বাচন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তাঁরা উত্তরবঙ্গে তিন জেলাপ্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন৷ ছিলেন আইজি আইনশৃঙ্খলা অনুজ শর্মাও৷ প্রথম দফার নির্বাচনে নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন৷
উত্তরবঙ্গে কেএলও জঙ্গিদের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কমিশন৷ নির্বাচন পর্বে কেএলও উপস্থিতি যাতে কোনও উদ্বেগের কারণ না হয় তা নিশ্চিত করতে তিন জেলা লাগোয়া আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন৷
জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কীভাবে সাজানো হবে তা নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে এদিনের বৈঠকে৷ ইতোমধ্যেই রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছে ১২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী৷
বৈঠকে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের কেএলও অধ্যুষিত এলাকাগুলির নিরাপত্তা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা৷ এ ছাড়াও দার্জিলিং-এর বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বৈঠকে পর্যালোচনা করেছে কমিশনের ফুল বেঞ্চ৷
এদিকে কলকাতার সোনাগাছি অভিযানের জেরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে লুকিয়ে রাখা হিসাব বহির্ভূত কোটি কোটি কালো টাকার যাবতীয় তথ্য জানতে পুলিশ, শুল্ক দফতর, সিইও দফতর ও কলকাতার আয়কর কর্তাদের সঙ্গে পৃথক একটি বৈঠক করেন আয়কর বিভাগের কমিশনার পি কে ড্যাশ৷
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সোনাগাছির নিষিদ্ধ পল্লিতে হানা দিয়ে দুই কোটি টাকা ও বিপুল স্বর্ণালঙ্কার বাজেয়াপ্ত করেন আয়কর দফতরের গোয়েন্দারা৷ সে সম্পর্কে একটি তদন্ত রিপোর্ট আয়কর কর্তারা জমা দেন বৈঠকে৷ পাশাপাশি শহরের অন্য কোন এলাকায় বেআইনি টাকার লেনদেন চলছে তা নিয়ে আয়কর দফতরের কর্তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আয়কর কমিশনার পি কে ড্যাশ৷
সোমবার (৭ এপ্রিল)ত্রিপুরা ও আসামের পরেই ৯ এপ্রিল অরুণাচল প্রদেশ, মনিপুর ,মেঘালয়, মিজোরাম এবং নাগাল্যন্ডের ৭টি লোকসভা আসনে ভোট হবে।
১০ এপ্রিল নির্বাচন হবে বিহার, ছত্তিশগড় হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড, কেরল,কর্ণাটক, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, লাক্ষা দ্বীপ, আন্দামান-নিকবোর দ্বীপপুঞ্জ এবং দিল্লির কয়েকটি কেন্দ্রসহ দেশের মোট ৯২টি লোকসভা কেন্দ্রে ।
১২ এপ্রিল আসাম ,ত্রিপুরা এবং সিকিম এই তিন রাজ্যের ৫টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে।
১৭ এপ্রিল ভোট হবে বিহার, ছত্তিশগড়, গোয়া, জম্মু-কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মনিপুর, উড়িষ্যা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের ১২২টি লোকসভা কেন্দ্রে।
২৪ এপ্রিল আসাম, বিহার ,জম্মু–কাশ্মীর , মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তামিলনাড়ু ,কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ কেন্দ্রশাসিত পন্ডিচেরীর ১১৭ টি আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে।
৩০ এপ্রিল ৯টি রাজ্যের ৮৯ টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গসহ বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল দারা, দিউ, দমন এবং নগর হাভেলিতে লোকসভা নির্বাচন হবে।
৭ মে ৭টি রাজ্যের ৬৪টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, হিমাচলপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরখণ্ড, উত্তর প্রদেশ ছাড়াও ভোট হবে পশ্চিমবঙ্গে।
১২ মে নির্বাচনের শেষ দিন ভোট হবে বিহার, উত্তর প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে।
৭ মে ভোট হবে ঝাড়গ্রাম, আসানসোল, মেদেনিপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে। ১২ মে ভোট হবে বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বনগাঁ, ব্যারাকপুর, বারাসাত, বসিরহাট ,জয়নগর, মথুরাপুর , ডায়মন্ড হারবার, তমলুক, কাঁথি এবং ঘাটাল কেন্দ্রে।
১২ মে ভোট হবে কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ, যাদবপুর এবং দমদম কেন্দ্রেও।
১৬ মে ফলাফল ঘোষণা। দেশের ৮১ কোটি ৪৫ লাখ ভোটার এই নির্বাচনে ভোট দেবেন। এরমধ্যে প্রায় ৪৯ শতাংশ মহিলা ভোটার।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৪