কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে সবেমাত্র। খবরের কাগজ কিংবা টেলিভিশনের রিমোট ঘুরালেই কখনও নরেন্দ্র মোদী কখনও বা রাহুল গান্ধীর মুখ।
কখনও দুর্নীতি নিয়ে সোনিয়া গান্ধীকে বিদ্রূপের ছুরি চালাচ্ছে বিজেপি আবার কখনও নরেন্দ্র মোদীকে সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে তুলোধোনা করছে কংগ্রেস।
গোটা সংবাদ মাধ্যমের পাতা যেন একটা নির্বাচনী ‘রণক্ষেত্রে’ পরিণত হয়েছে। এরই ফাঁকে ভোট দেবার গণতান্ত্রিক অধিকারের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন নিবার্চন কমিশন।
মোদী, রাহুল গান্ধী , কেজরিওয়াল আর মাঝে মাঝে মায়াবতী, মুলায়েম সিং, জয়ললিতা আর লালু প্রসাদ যাদবকে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক।
এরমধ্যে রাজ্যের সাধারণ ভোটাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে সত্যিই কী এই নেতারা পারবেন মানুষের জীবনে কিছু পরিবর্তন আনতে? বা বিগত দিন গুলিতে কতটা সফল ভাবে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছেন এই নেতা-নেত্রীরা।
মনে পড়ে গেল কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি কবিতার কয়েকটি লাইন-
‘এই রাজা আসে ঐ রাজা যায়
জামা কাপড়ের রঙ বদলায়
দিন বদলায় না’—
কবিতার মতের সঙ্গে অনেকেই দ্বিমত হতে পারেন। প্রশ্ন তুলতেই পারেন ভোট দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে। এ প্রশ্ন নিয়ে ভোটারদের সামনে হাজির হয়ে দুই গোষ্ঠীর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এরমধ্যে একদল-যারা অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন কোন দলকে তারা ভোট দেবেন আর অন্যদল এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি। এই ‘কনফিউজড’র সংখ্যাও কিন্তু কম নয়!
কিন্তু কেন?
কাকে ভোট দিলে কে ক্ষমতায় আসবে? কার সঙ্গে কার জোট হবে ? কি নীতিতে দেশ চলবে এর কোনো পরিস্কার চিত্র পাঁচ দফা নিবার্চন হয়ে গেলেও এখনও উঠে আসেনি।
কিন্তু যা পাওয়া গেছে তা ‘কনফিউজড’ করার জন্য যথেষ্ট। তা হলো- আদৌ কি নির্বাচনের লড়াইয়ে নামা সব ভোট প্রার্থীরা যথেষ্ট যোগ্য।
কিন্তু ভোট না দিলেও গণতন্ত্র রক্ষার দায় থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। কিন্তু যদি একজন ভোটারের কোনো প্রার্থীকে যোগ্য বলে না মনে হয়?
এই সমস্যার সমাধান করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। সবোর্চ্চ আদালতের রায়ের ফলে প্রথম কোনো লোকসভা নিবার্চনে চালু হচ্ছে ‘না ভোট’।
সুপ্রিম কোর্টের ২০০৯ সালের একটি নির্দেশে ভোটের যন্ত্রে যোগ হয়েছে ‘না ভোট’ বা ‘নোটা’ এর বোতাম।
কিন্তু এই ‘না ভোট’ নিয়ে প্রচারের যথেষ্ট অভাব দেখা গেছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক দলগুলো প্রচারে একবারও মুখে আনেন নি ভোটারদের এই অধিকারের কথা।
কিছু কলেজ, অফিসে প্রচার হয়েছে বটে তবে নিবার্চন কমিশনের প্রচার সীমাবদ্ধ ছিল শহর অঞ্চলে। এছাড়া ‘না ভোট’ এর প্রচার চালিয়েছে কিছু সেচ্ছাসেবী সংগঠন, তাও শহর কেন্দ্রিক।
গ্রাম তো দূরের কথা মফস্বলেও বিরাট অংশের মানুষ জানেন না তাদের এই ‘নতুন’ অধিকারের কথা। কিন্তু একথা ঠিক ‘কনফিউজড’ নিবার্চক মণ্ডলীর একটা অংশ কিন্তু ভোট দেবে এই ‘না ভোটে’।
অন্তত শহর অঞ্চলের ব্যক্তিগত আলোচনায় কান পাতলে সেই রকমই শোনা যাচ্ছে।
শুধু ভারতে নয় অল্প বিস্তর নিয়মের ফারাকে ‘না ভোট’ –এর চল আছে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউনাইটেড কিংডম (ইউকে), আমেরিকা, পোল্যান্ডে।
আগামী দিনে আরও কয়েকটি দেশে ‘না ভোট’ চালু করার পক্ষে আন্দোলন চলছে।
অনেকেই মনে করছেন, যোগ্য নয় তেমন প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এবার একটি ভালো অংশের ভোটার ‘না ভোট’-এ ভোট দেবেন।
যদিও এই ধারণাকে ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা অংশ মনে করছেন লোকসভা নির্বাচনের পর রাজনৈতিক দল গুলোর কাজ-কর্মের উপর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব ফেলবে এই ‘না ভোট’।
এখন দেখার বিষয় হচ্ছে মোট কত শতাংশ ভোট পড়ে ‘না ভোট’-এ। তবে আশা করা যেতেই পারে ভারতের সামগ্রিক রাজনীতিতে এবং রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাজকর্মে তার একটি ইতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৪