ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

সময় অসময় বিস্ময়

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৪
সময় অসময় বিস্ময় ভোটের প্রচারে মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখটা মাঝেমধ্যেই আমার ফেসবুকে ভেসে ওঠে। ভাল করে দেখে মনে হয়, কিছু যেন বলতে চাইছেন।

তাঁর ছবির নীচে যেসব কথা লেখা , সেসব নিতান্তই তুণমূল কংগ্রেসেরই কথা। মনে জমা কথা উগড়ে দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। ফুফু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কঠোর শাসনে তিনি বড় হচ্ছেন। ভ্রাতুষ্পুত্রকে মাতৃস্নেহে বেঁধে রেখেছেন মমতা। এখনই মিডিয়ার মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ দেন না। আর একটু পাকলে দেখা যাবে। দলের সবাই জানে, মমতার পর তৃণমূলের আগামী মুখ অভিষেক। মমতার পর তিনিই হবেন মূখ্যমন্ত্রী। অবশ্য দল যদি ক্ষমতায় থাকে তবেই।

দিল্লীতে যেমন সোনিয়া-রাহুল, উত্তর প্রদেশে মানেকা-বরুণ, কলকাতায় তেমন মমতা-অভিষেক। পশ্চিমবঙ্গে পারিবারিক শাসনের কথা আগের কোন মূখ্যমন্ত্রী ভাবেননি।   স্বাধীনতার পর প্রথম তিন মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন অকৃতদার— প্রফুল্ল ঘোষ, বিধান রায়, প্রফুল্ল সেন তিনজনের কেউই বিয়ে করেননি। প্রথম বিবাহিত মূখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। তাঁর পুত্র চন্দন রাজনীতির ত্রিসীমায় আসার সুযোগ পায়নি। জ্যোতি বসু সল্টলেকের বাড়িতে একা থাকতেন। পরবর্তী মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাম এভিনিউয়ের ছোট্ট ফ্ল্যাটে একমাত্র কন্যা সুচেতনা বাবার সঙ্গে থাকলেও রাজনীতি থেকে দূরে। পরিবেশ, পশু-পাখিতে আগ্রহ। মমতা বিয়ে না করলেও ভায়ের ছেলে অভিষেক তাঁর কাছে পুত্রের চেয়ে বেশি।   আর পাঁচটা দলের চেয়ে তৃণমূল একটু আলাদা। এটা নামে দল হলেও চলে মমতার কথায়। সেইজন্যই বলা হয়— তৃণমূলই মমতা, মমতাই তৃণমূল। বাকিরা চিৎ হয়ে পড়ে থাকা কচ্ছপের মতো। মমতা উল্টে সোজা করে দিলে গুটিগুটি চলবে, নয়তো একভাবে পড়ে থাকবে। মমতা সতীর্থদের বিশ্বাস করেননি। অন্যরাও জানেন না তাদের রাজনৈতিক আয়ু কতদিন।

অভিষেক চুপচাপ থাকলেও সব দিক লক্ষ্য রাখেন। মিছিলে থাকেন সবার আগে। প্রধান নেতারা পাল্লা দিতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়েন। তাঁরা জানেন, একবার পিছিয়ে পড়লে নাগাল পাওয়া কঠিন। অভিষেক এবার দক্ষিণ চবিবশ পরগণার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী। গতবার এই আসনে জিতেছিলেন সোমেন মিত্র। তখন ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে বা কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যাওয়াটা নেতাদের কাছে নতুন কিছু নয়। কংগ্রেস নেতাদের কাছে তৃণমূল শিবির ছিল স্বাস্থ্যনিবাস। কংগ্রেসে চোট পেয়ে সেখানে তারা আশ্রয় নিতেন। আবার স্বাস্থ্যোদ্ধারের পর কংগ্রেসে ফিরে যেতেন। সোমেনের বেলাতেও তাই। কংগ্রেস যখন তাঁকে পাত্তা দেয়নি, তিনি মমতার কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। কংগ্রেসের ডাক পেতেই ফের তৃণমূল ফেলে পুরোনো ঘরে ফিরেছেন।

MAMATAমমতা-সোমেনের রাজনৈতিক জন্ম কংগ্রেসে। একই সঙ্গে বেড়ে ওঠা। পারস্পরিক সহযোগিতায়, নয় দুরন্ত প্রতিযোগিতায়। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু মমতাকে আলোর বৃত্তে এনেছিল। ইন্দিরার সহানুভূতির হাওয়ায় সিপিএমের ডাকসাইড নেতা, লোকসভার সাবেক স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে লোকসভা নির্বাচনে মমতার প্রথম জয়। তাঁর ঊর্ধ্বগতি রুখে দিয়েছিলেন সোমেন। পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের সভাপতি হয়েই সোমেন সাংগঠনিক ক্ষমতা হাতে পেয়ে যান। অন্য নেতাদের  ওপর ছড়ি ঘোড়ানোর সুযোগ পান।

সহ্য করেননি মমতা। সোমেনকে সরিয়ে রাজ্য সভাপতি হওয়ার জন্য তিনি উঠেপড়ে লাগেন। সভাপতি নির্বাচনে পরাজিত হয়ে মমতা দলত্যাগের সিন্ধান্ত নেন। ১৯৯৮‘তে তিনি গড়ে তোলেন নতুন দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁর আশা ছিল, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমুল কংগ্রেসই হবে আসল কংগ্রেস। সেটা না হলেও তৃণমূলের চাপে মূল কংগ্রেস ক্রমশ দুর্বল। ভাগ্যের ফেরে কংগ্রেসে সোমেনের পায়ের তলার জমি সরতে থাকে। শেষে এমন অবস্থা হয় মমতার কাছে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

আবার রাজনৈতিকভাবে কিছুটা চাঙ্গা হয়েই সোমেন কংগ্রেসের দিকে পা বাড়ান। ডায়মন্ড হারবার ছেড়ে কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী তিনি। কঠোন প্রতিদ্বন্ধিতার মুখে পড়েছেন। সিপিএমের রূপা বাগচী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল  সিন্‌হা, তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে তাঁকে। গতবার জিতেছিলেন সুদীপ। এবার তাঁর জয় অনিশ্চিত। চার দলের ভোটের কাটাকাটিতে জয় কার ভাগ্যে যাবে বলা শক্ত। এ কেন্দ্রে ভোট ১২ মে। সব দলের তৎপরতা তুঙ্গে।

তুলনায় ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক অনেক নিশ্চিত। এখনও সেখানে মমতা হাওয়া। সিপিএম হারানো জমি উদ্ধারে ব্যস্ত। ‍অভিষেক জিতলে মমতার জন্যই জিতবেন, হারলেও মমতার জন্যই হারবেন। আপাতভাবে, তার কোনও দায় না থাকলেও পলিটিক্যালি ক্যারিয়ার নির্ভর করছে এই জয়ের ওপর। কোনও কারণে হারলে অন্ধকার হয়ে যাবে ভবিষ্যৎ। তাঁর আর কোন দিকে তাকানোর সময় নেই। সব ছেড়ে, মাটি কামড়ে পড়ে আছেন নিজের কেন্দ্রে।

 

বয়স যখন ১৮



বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।