ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

লোকসভা ভোট

প্রচারে তোপ, পাল্টা-তোপ

সুকুমার সরকার, কলকাতা থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৪
প্রচারে তোপ, পাল্টা-তোপ ছবি: (ফাইল ফটো)

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভোটারের দেশ ভারতে জাতীয় নির্বাচন চলছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে প্রধান প্রধান জাতীয় ও আঞ্চলিক দলগুলো ইশতেহার ঘোষণা করেছে।

এসব ইশতেহারে ‘নিয়ম করেই’ ভোটারদের মন জয় করতে গণতন্ত্র, কর্মসংস্থান, ট্যাক্স হ্রাস বা উন্নয়নমূলক প্রকল্প তুলে ধরেছে।

কথা ছিল, সেসব নির্বাচনি অঙ্গীকারের ফিরিস্তি আমজনতার সমানে তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করবে কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমুল কংগ্রেস, সিপিআই (এম) এর মতো শক্তিশালী দলগুলো। কিন্তু কোথায় কী! নির্বাচনি অঙ্গীকার নিয়ে কথা বলার চেয়ে রাজনৈতিক নেতারা একে অপরকে তোপ আর পাণ্টা-তোপেই নির্বাচনকে ভিন্ন মাত্রায় জমিয়ে তুলেছেন।

এই তোপ আর পাল্টা-তোপের খেলা জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেও যেমন চলছে, ঠিক তেমনি আঞ্চলিক নেতারাও এ কাঁদা ছোড়াছুঁড়ি করছেন আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে এনে। তোপ আর পাল্টা-তোপে অবশ্য প্রতিপক্ষের অনিয়ম আর দুর্নীতির ফিরিস্তিই অন্যতম হাতিয়ার।

‘উগ্র হিন্দুত্ববাদী’ সংগঠন ভারতীয় জনত‍া পার্টি-বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী আর কংগ্রেসের ‘পোস্টার বয়’ রাহুল গান্ধী তো একে অপরকে বিভিন্ন ইস্যুতে সুযোগ পেলেই বিঁধছেন, কটাক্ষ করছেন।

বাদ নেই পশ্চিম বঙ্গের ভোটের মাঠও। সেখানে অবশ্য তোপ আর পাল্টা-তোপের খেলা জমে উঠেছে ‘সারদা চিট ফান্ড’কে কেন্দ্র করে। শাসক দল তৃণমূল আর তার নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে এই ইস্যুতে একসুরে বিঁধছেন বিরোধী ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি-(মার্কসবাদী)- সিপিআই-এম ও কংগ্রেস। এ ঘটনায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
 
ভারতের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের নবম দফার মধ্যে ইতোমধ্যে পঞ্চম দফা ভোটপর্ব শেষ হয়েছে। আর বাকি  ৪ দফা। ষষ্ঠ দফার ভোট ২৪ এপ্রিল। সপ্তম দফা ৩০ এপ্রিল। অষ্টম দফার ভোট ৭ মে এবং শেষ দফার নির্বাচন হবে ১২ মে।

দিল্লির মসনদে কে বসবেন তা জানা যাবে ১৬ মে।

রাহুল-মোদী তরজা
রাজস্থানে রবিবার নির্বাচনি প্রচারে গিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী।

মোদী বক্তব্যের খেই ধরে  রাহুল গান্ধী বলেন, মোদী দেশের চৌকিদার নন, উনি ব্যবসায়ী। উনি ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের চৌকিদার।

অপরদিকে রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করে ছত্তিশগড়ের সরগুজায় এক জনসভায় নরেন্দ্র মোদী বলেন, “যিনি নিজের কেন্দ্রের দায়িত্ব সামলাতে পারেন না তিনি কীভাবে দেশকে নেতৃত্ব দেবেন। ” 

এদিকে আবার বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিংকে প্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে রবিবার আবেদন জানিয়েছে কংগ্রেস ও জেডিইউ। দেওঘরের মোহনপুর থানায় এ ব্যাপারে একটি এফআইআর করা হয়েছে।

গিরিরাজ আগের দিন বিহারে এক জনসভায় বলেছিলেন, নির্বাচনের পর মোদী বিরোধীদের পাকিস্তানে চলে যেতে হবে।

সারদা চিট ফান্ড
ভোটের মুখে সারদা চিট ফান্ড ইস্যু আবার পশ্চিম বঙ্গে সামনে চলে আসছে। আর এ ইস্যু সামনে আনায় প্রবল প্রত্যাঘাত করছেন তৃণমুলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রবিবার তিনি সরাসরি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন ৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু চিদম্বরমই নয়, নাম না করে রাহুল গান্ধীসহ দলের অন্য নেতাদের বিরুদ্ধেও তোপ দাগলেন৷ এ নিয়ে রায়গঞ্জের সভায়  ক্ষোভে ফেটে পড়েন মমতা৷

সারদা কর্ণদার সুদীপ্ত সেনের লেখা চিঠিতে চিদম্বরমের পরিবারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷ সেই প্রসঙ্গ তুলে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, অর্থমন্ত্রী মিটিং করে বলছেন পশ্চিম বঙ্গে নির্বাচনের আগে তৃণমূলের লোকেদের ধরে নিয়ে এসো৷ আমাদের ধরবে? আগে তো নিজেদের সামলাও৷

সারদা নিয়ে রাজ্য সরকারের কড়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে মমতা জানিয়ে দেন, কাশ্মীর থেকে কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের গ্রেফতার করে আনা হয়েছে৷

মমতা বলেন, এমনকি নিজ দলের সংসদ সদস্যকেও জেলে পাঠানো হয়েছে৷ চিট ফান্ড রুখতে বিল বিধানসভায় পাস করিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠালেও তা বারবার ফেরত পাঠানো হচ্ছে৷ যাতে আইন করা না যায়৷

এর আগে মালদহের পানসির সভা থেকে রাহুল গান্ধী চিট ফান্ড নিয়ে আক্রমণ করেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে৷ এদিন রাহুল বলেন, "সারদা-কাণ্ড বড় কেলেঙ্কারি৷ ২০ লক্ষ মানুষ এতে প্রতারিত হয়েছেন৷

আর যায় কোথায়, রাহুলের এমন বক্তব্যের পরই সুর সপ্তমে তোলেন মমতা৷

কংগ্রেসকে তুলোধুনা করে মমতা জানিয়ে দেন, যাঁরা চিট ফান্ড নিয়ে নির্বাচনের আগে কথা বলছেন, তাঁরাই তো সব ‘সারদামণি' নেতা৷ সিপিএমের আমলে চিট ফান্ড তৈরি হয়েছে৷  

তৃণমূল নেত্রী বলেন, এবার দিল্লিকে ‘সবক' শেখাবই৷ দিল্লি এসে বাংলার পায়ে পড়বে৷ বাংলা দিল্লির কাছে যাবে না৷" এদিন প্রথমে গোয়ালপোখর এবং পরে রায়গঞ্জ ও ইংলিশবাজারে সভা করেন মমতা৷

অপরদিকে বর্ধমানের পানাগড় জনসভায় সিপিএম নেতা গৌতম দেব তৃণমূল কর্মীদের সিপিএমে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে তীব্র আক্রমণ করেন।

বর্ধমান-দুর্গাপুরের সিপিএম প্রার্থী সাইদুল হকের সমর্থনে নির্বাচনী জনসভায় এসে সারদা কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে গৌতম দেব বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাওয়াই স্যান্ডেল পড়েন, সততার শেষ নেই। ”

মালদাহের ‘জমিদার’
এদিকে উত্তর দিনাজপুর ও মালদহ দীর্ঘদিন ধরেই কংগ্রেসের দখলে৷ মালদহে গিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায় সাবেক মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা গণি খান চৌধুরী পরিবারের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছিলেন। এবার তার পাল্টা জবাব দিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অধীর চৌধুরী।

মমতা সেখানে গিয়ে বলেন, "এখান থেকে জিতে দিল্লি গিয়ে শুধু দিল্লির লাড্ডু খায়৷ মালদহের কথা বলে না৷ ফের নির্বাচনের সময় ফিরে এসে ভোট চায়৷" এবার এই আসনগুলিতে ‘পরিবর্তন' এর ডাক দেন মমতা৷

হবিবপুর, মালতীপুর ও হরিশ্চন্দ্রপুরের সভায় গণি খান চৌধুরীর পরিবারের দুই সদস্য তথা মালদহের দুই বিদায়ী কংগ্রেস সংসদ সদস্যের নাম মুখে না আনলেও, তৃণমূল নেত্রী বলেছিলেন, “ওঁরা ভাবেন, মালদহের মানুষ ওদের ভোট দিতে বাধ্য। এবার সব জমিদারি চলে যাবে। ”

জেলার মোথাবাড়িতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পাল্টা জবাব, বরকতদা (গনি খান চৌধুরী) জমিদার হতে পারেন, তবে তিনি কোনও দিনই জমিদারি ফলাতেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মালদহে এসে বরকতদাকে আক্রমণ করেছেন। এটা কাম্য নয়।

মালদহের মানুষ সব কিছু সহ্য করতে পারেন। কিন্তু, বরকতদাকে অপমান করা সহ্য করতে পারেন না। তাঁর বক্তব্য- যতদিন আজমীর শরিফ থাকবে, মৈনুদ্দিন চিস্তির নাম থাকবে। তেমনি মালদহ যত দিন থাকবে, সেখানে গনি খানের নামও থাকবে।

কলকাতায়ও বাদ নেই মোদীর দিকে তির ছুড়তে। কলকাতার রাস্তায় সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেস তাদের চিকায় লিখেছে গোদরা কাণ্ডের জন্য মোদী দায়ী।

ভারতের মোট লোকসংখ্যা ১২১ কোটি। এরমধ্যে ভোটার ৮১ কোটি ৪০ লাখ। তারা  ৫৪৩টি আসনে ভোট দেবেন পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করতে।

নয় পর্বের এ ভোট শেষ হতে ৩৫ দিন সময় লাগবে। দিল্লি দখল করতে হলে যেকোনো দলকে ২৭২টি আসনে জয় পেতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।