যাব বলে না যাওয়াটা খারাপ। তার চেয়ে আগে থাকতে যাব না বলে দেওয়া ভাল।
ইন্দিরার পর কংগ্রেস শুন্য হয়ে পড়ে নেতৃত্বের অভাবে। রাজীব গান্ধী রাজনীতি শিখতে শিখতেই সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। রাহুল গান্ধীর বয়স তখন মাত্র ১৯, পিয়াঙ্কার ১৮। এত অল্প বয়সে কংগ্রেসের হাল ধারা ছিল অসম্ভব। রাজীবের পর নরসীমা রাও প্রধানমন্ত্রী হয়ে সরকার চালাতেই হিমসিম খেয়েছেন। কংগ্রেসের যোগ্য নেতা হয়ে উঠতে পারেননি। অন্ধপ্রদেশ থেকে উঠে আসা নরসীমা জাতীয় স্তরে ব্যর্থ। অন্যের পরামর্শে নিজের ঘাটতি পূরণের চেষ্টাও করতেন না। নিজে যা ভাল বুঝতেন তাই করতেন। ১৯৯২-এ তার ভুল সিদ্ধান্ত দেশকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়। করসেবকদের হাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়। ঘটাবার আগে বার বার তাকে সতর্ক করেছিলেন তখনকার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। তিনি ছিলেন বিচক্ষণ রাজনীতিক। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল তাঁর নখদর্পণে। ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়াটা তাঁর কাছে ছিল খুবই সহজ। অবস্থা আঁচ করেই দিল্লি ছুটে গিয়ে নরসীমাকে অযোধ্যায় সেনা নামানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, দেরি হলে অযোধ্যা নাগালের বাইরে চলে যাবে। কর্ণপাত করেননি নরসীমা। করলে কলঙ্কিত ইতিহাস থেকে রক্ষা পেত ভারত।
এ ঘটনার পর কংগ্রেস মৃত্যু শয্যায়। সংসদীয় আসনের বিচারে সব থেকে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশ ছিল কংগ্রেসের পকেটে। পকেট ফুটো হয়ে সেই যে রাজ্যটা বেরিয়ে গেল, আর ফিরল না। ২০০৯-এ মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়েও রাহুল গান্ধী বিফল। অনেক কসরৎ করে ৮০টির মধ্যে মাত ২১টি উদ্ধার। বেশিরভাগ প্রধানমন্ত্রী এসেছেন উত্তর প্রদেশ থেকে। এখনও বলা হয় উত্তরপ্রদেশ যার, ভারত তার। সোনিয়া গান্ধী, রাহুল দুজনেই উত্তর প্রদেশ থেকে নির্বাচন করছেন। সোনিয়া প্রার্থী শাশুড়ি ইন্দিরা গান্ধীর আসন রায়বেরিলিতে। রাহুল দাঁড়িয়েছেন বাবা রাজীবের কেন্দ্র আমেটিতে। এই দুটি আসনে কংগ্রেসের জয় নিশ্চিত। বাকি আসন অনিশ্চিত। নরেন্দ্র মোদীরও ভাগ্য পরীক্ষা উত্তর প্রদেশেই।
মুসলমান ভোট বিজেপির ধরা-ছোঁয়ার বাইরে জেনেই হিন্দু-অধ্যুষিত তেলেঙ্গানা বা বারানসীতে তিনি ভোটপ্রার্থী। উত্তরপ্রদেশ দখল করতে বিজেপি ঝাঁপিয়েছে পূর্ণোদ্যমে। উচ্চবর্ণের হিন্দু ভোট তাদের ভরসা। জাত-পাত-বর্ণে জর্জরিত উত্তরপ্রদেশ, আঞ্চলিক দলকে প্রশ্রয় দিয়েছে অনেক বেশি। তার জন্যই মুলায়েম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টি, মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির মতো আঞ্চলিক দলের উত্থান। জাতীয় রাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব যথেষ্ট।
উত্তর প্রদেশের পর আসনের হিসেবে এগিয়ে মহারাষ্ট্র। সেখানে লোকসভার আসন ৪৮। পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে ছয়টা বেশি। রাজ্যটি কংগ্রেসের দখলে। মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। সহযোগী দল ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি বা এলটিটি। তার নেতা শারদ পাওয়ার কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে দলটি গড়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার। মহারাষ্ট্রে তার প্রভাব আগের চেয়ে অনেক কমেছে। তিনি নিজে ক্যান্সারে আক্রান্ত। ছোটাছুটি করার সামর্থ্য কম। সোনিয়া গান্ধীও অসুস্থ। তিনিও কর্কট রোগের শিকার। আমেরিকায় চিকিৎসার পর কিছুটা ভালো আছেন। তবে সক্রিয়তা কমেছে। প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশ করাটা ধাতে সয় না। মহারাষ্ট্রের গুরুত্বের কথা ভেবেই সেখানের একাধিক জনসভায় হাজির হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন সোনিয়া। যাবে বলেও শেষমেশ যেতে পারলেন না। কেন এলেন না তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠলো। অসুস্থতার বিষয়টাকে গুরুত্ব দেওয়া হলো। বিজেপি সেটাকেই মূলধন করতে চাইলো। প্রচারে ঝড় তুলে বলতে শুরু করলো, যে দলের সভানেত্রী অসুস্থ, সে দল নির্বাচন লড়বে কীভাবে। মায়ের শূন্যস্থান পূরণ করতে রাহুল মহারাষ্ট্রে চক্কর কেটেছেন। তাতে বিজেপি অনেকটা নিরাশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৪