কোহেতুর আমের ত্বক শিশুর চেয়ে নরম। গাছ থেকে পেড়ে তুলোয় শুইয়ে রাখতে হয়।
গণি খান নেই মানেন না কেউ। বরং মৃত্যুর পর আকাশে বাতাসে তিনি। ভাগ্নী মৌসম বেনজির নূর মামার অস্তিত্ব টের পান পরতে পরতে। রাস্তায় প্রচারের সময় মামা, মৌসমের কানে কানে বলেন, ভয় পাসনি। আমি তো আছি। মালদায় আমাকে আর কংগ্রেসকে কেউ হঠাতে পারবে না। আমার প্রতিনিধি হয়ে তুই মালদায় আলো ছড়াবি। মৌসম সাংসদ হওয়া ইস্তক সেটাই করছেন। লক্ষ্য, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। তিনি জানেন, এলাকায় যদি একজনও নিরন্ন থাকেন, তাঁর রাজনীতি ব্যর্থ। নতুন ব্রিজ, রাস্তা করে মৌসম বুঝিয়েছেন, মামদা গলদা চিংড়ির মতো পিছু হঠতে পারে, আবার প্রবল বিক্রমে অগ্রগামী হয় অন্যের তোয়াক্কা না করে। তার দাঁড়ানো জলে অন্য মাছ কাছে ঘেঁষতে সাহস পায় না। গতবার জিতেছেন। এবারেও রোখার কেউ নেই বলে মনে করছেন মৌসম।
মৌসম যে সাহসিনী সে বিষয়ে সন্দেহ নেই কারোই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। কলকাতার প্রবাসীপুরে মমতার ডেরায় গিয়ে বিশাল মিছিল করে চমকে দিয়েছেন মৌসম। তৃণমূলরা অবাক হয়ে ভেবেছে, যেখানে দিদির অনুমতি ছাড়া মশা-মাছি গলতে পারে না সেখানে মমতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করল কী করে মৌসম। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী লাগাম না টানলে থাকা যেতো না। মৌসমকে প্রথমেই মমতার বিরুদ্ধে সরাসরি সংগ্রামে নামাতে চাননি সোনিয়া। লম্বা দৌড়ে ঘোড়া ধীরে সুস্থে এগোক, সেটাই তাঁর কামনা।
মৌসমের প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিএমের খগেন মুর্মু। হবিবপুরের এমএলএ। মৌসমের মতে, প্রাসাদে নয়, তাঁর বাস মাটির কাছাকাছি। কোঠা বাড়ি, থোড়ো
চাল। দু’বেলা দু’মুঠো গরম ভাত হলেই যথেস্ট। আলপথ বেয়ে তিনি ছুটতেই কৃষক-শ্রমিকদের কাছে। তিনি তাদের বলছেন, সংসদে আমার যাওয়া মানে তোমাদের যাওয়া। আমাকে ভোট দিচ্ছ মানে, নিজেদেরই ভোট দিচ্ছ।
মালদার সরোবরে এবার পদ্মফুল ফুটেছে যথেষ্ট। তাতেই খুশি বিজেপি প্রার্থী সুভাষকৃষ্ণ গোস্বামী। দলের প্রতীক পদ্ম, পদ্ম দেখে তিনি আপ্লুত হলেও স্বপ্ন দেখতে ভয় পাচ্ছেন। মাটিতে যে পদ্মের চিহ্ন নেই। সেখানে অন্য অনেক ফুল। শুধু পদ্ম নেই। সুভাষের বক্তব্য, স্থলেও পদ্ম হয়।
ভুমি ব্যান্ডের অন্যতম গায়ক সৌমিত্র রায়, কৌনেকের বিপক্ষে তৃণমূল প্রার্থী। মাতা কৃষ্ণেন্দু আর সাবিত্রি দুই লেফটেন্যান্টকে পাঠিয়েছেন সৌমিত্রকে জয়ের রাস্তায় পৌছে দিতে। সৌমিত্র নিরুত্তাপ। রাজনৈতিক ভাষণ দানে অভ্যস্ত নন। গান শেখাতে বসলে এক পায়ে খাড়া। মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, বক্তৃতা দিতে পারব না। তার চেয়ে বরং আমি গাই, আপনারা শুনেন। কথা শেষ করেই গান ধরেছিলেন, বারান্দায় রোদ্দুর। আরাম কেদারায় বসে দুপা নাচিয়ে— তোমার দেখা নাই রে, তোমার দেখা নাই। গান শেষ হতে না হতেই লোকেও আর দেখা নাই। যারা এসেছিল তারাও পলাতক। সৌমিত্রর মন্তব্য, শহুরে প্রেমের ভাষা গ্রামের মানুষ বোঝে না। তাই আমার গান তাদের আর শেখাতে চাই না।
মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে সৌমিত্রর বাড়ি। দার্জিলিংলের স্কুলে পড়াশোনা। গ্রামে যাতায়াত করেছেন নিয়মিত। বাড়িতেই চাচা পিনাকী রায়ের ডিসপেনসারি। ডাক্তার হিসেবে এলাকায় পরিচয় আছে। সেই আর কতটুকু। ভ্রাতষ্পুত্রকে জেতানোর পক্ষে যথেস্ট নয়। সৌমিত্রর ইচ্ছে, মালদার মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা। যাতে বাংলা ব্যান্ডের গান তারা বুঝতে পারে। মালদার মানুষের বক্তব্য, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি নিয়ে আমরা বেশ আছি। তাদের গান নগরেই থাকুক। আমরা থাকি, আমাদের নিয়ে।
**বিরস বেনারস
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৪