দিল্লির রাইসেনা হিলসের প্রাসাদোপম রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রণব মুখার্জি কি শান্তিতে ঘুমোতে পারছেন? বয়স হলে এমনিতেই ঘুম কমে। প্রণবও ব্যতিক্রমী নন।
২০০৯-এ লোকসভা নির্বাচনে তিনি প্রার্থী ছিলেন জঙ্গীপুরে। মানুষ তাঁকে প্রাণভরে ভোট দিয়ে জিতিয়েছে। আগে তিনি সংসদের উচ্চকক্ষে নির্বাচিত হয়েছেন অন্য রাজ্য থেকে। সরাসরি মানুষের ভোটে নির্বাচিত হওয়া এই প্রথম। মানুষের ভালবাসা পেলে খুশি তো হবেনই। যে কোনও পদের চেয়ে ভালবাসার দাম অনেক বেশি। সংসদ হয়েও মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। পদত্যাগ করে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হয়েছেন। ভোটে জিতে রাষ্ট্রপতি হতেও অসুবিধে হয়নি। তাঁর জয়ে সবচেয়ে খুশি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসিনা শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন প্রণব মুখার্জিকে। প্রায় সব দেশই তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। হাসিনার আবেগটা ছিল আলাদা। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে নয়, ছোট বোনের মন নিয়ে বড় ভাইকে পাঠান শুভকামনা। বাংলাদেশের জন্য প্রণব যতটা ভেবেছেন, করেছেন কেউ তা কল্পনাও করতে পারেনি। এখনও তাঁর মনে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক স্বপ্ন।
রাজার পর রাজপুত্রের রাজা হওয়া যেমন সহজ, গণতন্ত্রে তেমন নয়। প্রণব তনয় অভিজিৎ এবার জঙ্গীপুরে বাবার শূন্য আসনে প্রার্থী। মানুষ বাবাকে জিতিয়েছে বলে তাঁকেও জেতাবে এরকম কোনও কথা নেই। এই আসনে উপনির্বাচনে অভিজিৎ জিতেছিলেন মাত্র আড়াই হাজার ভোটে। যে কেন্দ্রে ভোটার প্রায় ১৪ লাখ, সেখানে জয়ের ব্যবধান মাত্র এতটুকু। কই প্রণবের বেলায় তো তা হয়নি। তিনি জিতেছেন লক্ষাধিক ভোটে। ভোটারদের বাবাকে যতটা পছন্দ, ছেলেকে ততটা নয়।
এক্ষেত্রে বাবা-ছেলের তুলনা টানা ভুল। প্রণব রাজনীতিজ্ঞ। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় তিনি প্রাজ্ঞ। রাজনৈতিক যোগ্যতায় তাঁর ধারে কাছে পৌঁছানোর ক্ষমতা কোনও রাজনীতিকের নেই। যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষের দাবিদার, তাঁরাও প্রণবকে সমীহ করেন। প্রণবের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক শিক্ষক ছাত্রের মতো। প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ সবে রাজনীতিতে পা দিয়েছেন। ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার, হয়েছেন রাজনীতিক।
এলাম-দেখলাম-জয় করলাম, এমন স্তরের মানুষ নন অভিজিৎ। তুখোড় বক্তা, চতুর কৌশলী তিনি নন। তাঁর প্লাস পয়েন্ট তাঁর ব্যবহার। রাষ্ট্রপতির পুত্র বলে অহঙ্কার নেই বিন্দুমাত্র। মানুষের সঙ্গে মেশেন সহজসরল ভাবে। নিজের মুখেই স্বীকার করেন, তাঁর বাবা কোথায়, আর তিনি কোথায়? অভিজিতের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের মুজাফফর হোসেন। কেন্দ্রে ৭০ শতাংশ মুসলমান। সেই হিসেবে মুসলমান প্রার্থীরা কিছুটা অ্যাডভান্টেজ থাকে। তার মানে এই নয়, মুসলমান হলেই জিতবেন। তাই যদি হত প্রণব মুখার্জি জিতেছিলেন কী করে। জঙ্গীপুরে ধর্ম কোনও ফ্যাক্টর নয়। যাঁকে মানুষ মন থেকে বেশি বিশ্বাস করবে তিনি জিতবেন। ধর্মের খেলাটা বরাবরই খেলে বিজেপি। গতবারও খেলেছিল। তাতে ভোট কিছুটা এদিক-ওদিক হয়েছিল। বিজেপির কোনও সুবিধে হয়নি। এবারের তৃণমূল প্রার্থী নুরুল ইসলাম ছিলেন বসিরহাটের এমপি। তাঁকে তুলে জঙ্গীপুরে এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নুরুলের হাল দুর্বল। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গেলে ঘর গোছাতে সময় তো লাগবেই। অভিজিৎ রাজনৈতিক কচকচানির মধ্যে না গিয়ে পরিষ্কার জানিয়েছেন, সাড়া বছর ফাঁকি দিয়ে শেষ ক’দিন রাত জেগে পড়ে পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার মতো ছাত্র আমি নই। বাবাকে দেখে শিখেছি সাফল্যের কোনও শর্টকার্ট পথ নেই। ছেলের এই কথাতেই আশ্বস্ত প্রণব। তিনি নিশ্চিত, সস্তায় বাজিমাৎ করে অচিরেই হারিয়ে যাওয়ার মতো নয় অভিজিৎ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৪