ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

স্বপ্নে বিভোর শারদ

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৪
স্বপ্নে বিভোর শারদ শারদ পাওয়ার

সোজা ব্যাটে খেলাটাই ছিল ক্রিকেট কৌলিন্য। কেউ এলোপাথাড়ি ব্যাট চালালে তাকে অভদ্র-অসভ্য বলা হতো।

ক্রিকেট অভিভাবকরা মনে করিয়ে দিতেন, রান নয়, ক্রিকেটের সম্মানটাই বড়। ১৯২৮-এ ডন ব্র্যাডম্যান মাঠে নেমে সব রক্ষণশীলতা ভেঙে ক্রিকেটকে আধুনিক করেছিলেন। ক্রস ব্যাটে বাউন্ডারি পার। পুল শর্টে ছক্কা। তাঁকে দেখলে, বোলাররা ভয়ে সিঁটিয়ে যেত। তারা বল ছুঁড়ছে, না ফুল ছুঁড়ছে বোঝা যেত না। ক্রিকেটপ্রেমী শারদ পাওয়ার রাজনীতিতে নেমে প্রথম দিকটায় স্ট্রেট ব্যাটেই খেলেছেন। কংগ্রেসের কর্মী-নেতা হিসেবে নিয়ম মানতেন ষোলআনা। ধীরে ধীরে নিজের রাজ্য মহারাষ্ট্রে জনপ্রিয়তার জোয়ারে ভাসা। তাঁর হাত ধরে প্রতিপক্ষের সদস্যদেরও রাজনীতিতে প্রবেশ। কংগ্রেস-শারদ একাত্ম। নেহেরুর বাণী অক্ষরে অক্ষরে পালন— মার খাও, কিন্তু মেরো না। ‘ ন্যায়ের জন্য যারা  মারা খায়, মরে, মানুষ তাদের ভালোবাসে। আখেরে জিৎ তাদেরই হয়। সেই বিশ্বাসে অটল থেকে একসময় টলে গেলেন শারদ। বুঝলেন, একান্ত আনুগত্যই তাঁকে অনাহুত করে দিচ্ছে। তার চেয়ে জুনিয়ররা এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি পিছিয়ে পড়ছেন। বাধ্য হয়ে তিনি স্ট্রাটেজি পাল্টালেন। স্ট্রেট ব্যাট ছেড়ে ক্রশ ব্যাট চালাতে অভ্যস্ত হলেন। পরে পুল শর্টে ছক্কা হাকাতেই কংগ্রেস হতভম্ব। তিনি প্রশ্ন তুললেন, গান্ধী পরিবার থেকেই বারবার প্রধানমন্ত্রী হবেন কেন। শুধু উত্তরপ্রদেশ থেকে ৮ জন প্রধানমন্ত্রী। অন্য রাজ্যে কী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো কেউ নেই। মহারাষ্ট্র দেশের জন্য কম করেনি। ছত্রপতি শিবাজী থেকে আজ পর্যন্ত কত নেতার জীবন দিয়ে গেছেন, পরিবর্তে কিছু পাননি। মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাই তো ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী। রাজ্যে লোকসভায় আসনও কম নয়। সব মিলিয়ে ৪৮। তবে এ রাজ্যের নেতা প্রধানমন্ত্রী হত পারবেন না কেন? শারদের কথায় সাড়া দিল না কংগ্রেস। অভিমানে কংগ্রেস ছাড়লেন শারদ। তিনি আরও একটু ধৈর্য্য ধরলে ভাল করতেন। ১৯৯২-এ রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর অন্ধপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা নরসীমা রাও প্রধানমন্ত্রী হলেন। শারদ দলে থাকলে তিনিই হতেন। নেতাদের মধ্যে তিনিই ছিলেন শীর্ষে।


কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে কংগ্রেস ন্যাশনালিস্ট পার্টি গড়লেন শারদ পাওয়ার। দলের শেকড় গড়লেন মহারাষ্ট্রেই। ২০০৪-এ মনমোন সিং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শারদ আরও আঘাত পেলেন নিজের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য। কংগ্রেস ছাড়াই যে তাঁর উচিত হয়নি, সেটা হারে হারে টের পেলেন। এবার মনমোহন নয়, দলের সামনে রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস যদি সরকার গড়ে তিনিই প্রধানমন্ত্রী। তাহলে শারদের কী আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোন চান্সই নেই। আছে। ক্রিকেটের মতোই রাজনীতি বড় অনিশ্চিত। জিততে জিততে হারা, হারতে হারতে জেতাও বিচিত্র নয়। প্রধানমন্ত্রীত্বের কুর্শি ধরতে গিয়েও পিছলেছেন শারদ। তাই বলে হাল ছাড়বেন কেন?


vote_01প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যই নতুন দল গড়া। তা হওয়া না গেলে দলটার মানে কী। তা বলে তো চুপ করে বসে থাকা যায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস গড়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ধীরে ধীরে প্রধানমন্ত্রিত্বের দিকে এগোচ্ছেন। অভিজ্ঞ প্রবীণ নেতা হয়ে, হাত গুটিয়ে থাকতে পারেন না শারদ।
নরেন্দ্র মোদী টোকা দিয়েছিলেন শারদকে। বলেছিলেন, কংগ্রেস তো আপনাকে কিছু দিল না। বিজেপির শরিক হয়ে দেখুন আপনাকে কোথায় নিয়ে যাই। কথায় চিড়ে ভেজেনি। মোদী কী দিতে পারেন শারদকে। মোদী কী শারদকে প্রধানমন্ত্রীর গদী ছেড়ে দিতে পারবেন। শারদ যেটা চান সেটার জন্য মোদী তাঁর দলের প্রবীনতম নেতা লালকৃষ্ণ আদভানিকে পর্যন্ত ছুঁড়ে ফেলেছেন। নিজের দলেই মোদীকে নিয়ে বিতর্কের ঝড়। মোদীর দরকার, শারদের ন্যাশনালিটি কংগ্রেস পার্টির আসন। ২০০৯-এ তারা পায় ৯টি। এবার বাড়তে পারে। যদি ১৫টির বেশি পায়, মোদীর এলডিএ সরকার গড়তে কাজে লাগবে।


মোদীর চাল ধরতে অসুবিধে হয়নি শারদের। তিনি ঝুঁকেছেন তৃতীয় ফ্রন্টের দিকে। কংগ্রেস বা বিজেপি যদি সরকার গড়তে না পারে, সুযোগ পাবে তৃতীয় ফ্রন্ট। ১১টি দল, তৃতীয় বিকল্প নিয়ে বৈঠক করেছে। শারদ তাতে যোগ দেননি। আগে থাকতে কোনও কমিটমেন্টে যেতে তিনি রাজি নন। নির্বাচনের পর পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা। তৃতীয় জোটে এখনও কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রোজেক্ট করা হয়নি। কেউ দাবিও জানাননি। শারদের প্লান, তৃতীয় বিকল্প সরকার গড়তে চাইলে, কংগ্রেসের সাহায্য লাগবে। কংগ্রেস যাতে সমর্থন দেয় তার ব্যবস্থা তিনি করবেন। পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর পদটি তাঁকে দিতে হবে। এটা অনেক দূরের স্বপ্ন। তবু স্বপ্ন ছাড়া তো মানুষ বাঁচে না। প্রধানমন্ত্রীর পাওয়ারের খোয়াব ছাড়া শারদই বা বাঁচবেন কীভাবে।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।