কলকাতা: ভারতে ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম দফা ভোট বুধবার। আর বাঙালি অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গে এটা তৃতীয় দফার ভোট।
শেষ দফা প্রচারে হাওড়া ও হুগলিতে ঝড় তুললো তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি৷ প্রচারের দিক থেকে বাদ রইল না বীরভূম, বোলপুর, বর্ধমানও। শ্রীরামপুরে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী গায়ক বাপ্পী লাহিড়ীও কম গেলেন না।
বুধবার রাজ্যের চারটি জেলার ৯টি কেন্দ্র- হাওড়া, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুর, হুগলি, আরামবাগ, বীরভূম, বোলপুর, বর্ধমান-দুর্গাপুর ও বর্ধমানে (পূর্ব) ভোট৷
প্রচণ্ড গরম, রোদের তাপে ঘামে ভিজে যাচ্ছে শরীর৷ কিন্তু সেই গরমকে উপেক্ষা করেই সকাল থেকে প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা৷ হাতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা৷
এদিকে অবাধ ও শান্তিতে ভোট করতে তত্পর নির্বাচন কমিশন৷ তাই মাওবাদী হানা রুখতে বীরভূম জেলায় আকাশপথে নজরদারি শুরু করেছে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার৷ বীরভূম-ঝাড়খণ্ড সীমান্ত বরাবর আকাশপথে নজরদারি চলছে।
একই সঙ্গে ৩০ এপ্রিল নির্বাচনের দিন মাওবাদী এলাকায় ভোটকর্মীদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন জেলা পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান৷
গত ২৪ এপ্রিল বীরভূমের সীমান্তবর্তী ঝাড়খণ্ড এলাকায় মাওবাদী হামলায় ৩ ভোটকর্মীসহ মোট ৫ জন নিহত হন৷ এরপরই পুলিশ ও কমিশনের পক্ষ থেকে বীরভূমের মাও-অধ্যুষিত আট থানা এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়৷ বীরভূম সীমান্তের ১০৮ কিলোমিটার জুড়ে রোববার থেকে লং মার্চ শুরু করেছে আধা-সামরিক বাহিনী৷
এছাড়া মহম্মদবাজারের সারেন্ডা গ্রামে আলাদা করে আধাসামরিক বাহিনীর ক্যাম্প করা হয়েছে৷ কারণ ওই সীমান্তের সাত-আট কিলোমিটারের মধ্যে ঝাড়খণ্ডের সারসা গ্রামের ভগবানপুর জঙ্গলে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা৷
ঝাড়খণ্ড পুলিশের দাবি, মাওবাদীদের সাঁওতাল পরগনা জোনাল কমিটির নেতৃত্বেই এই হামলা চালানো হয়৷ এই জোনাল কমিটিতে বীরভূমের বেশ কিছু মাওবাদী সদস্য আছে৷ মাওবাদীদের সাঁওতাল পরগনা জোনালের সীমানা নলহাটি থেকে খয়রাশোল পর্যন্ত বিস্তৃত৷
তাই নির্বাচনের আগে মাও হানা রুখতে দুই রাজ্যের মধ্যে যৌথ বৈঠক হয়েছে৷ তবে ঝাড়খণ্ডের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় বেলা চারটে পর্যন্ত নির্বাচনের সময় নির্ধারিত করা হয়েছিল৷ ঠিক ছিল, ৩০ এপ্রিল দিনের আলো থাকতে ভোটিং মেশিন ও ভোট কর্মীদের নিরাপদ স্হানে পৌঁছে দেওয়া হবে৷
বীরভূমের মাও অধ্যুষিত এলাকার ২২৩টি বুথে সকাল সাতটা থেকে সন্ধে ছ'টা পর্যন্ত স্বাভাবিক ভোটগ্রহণ চলবে৷
ভয়-শঙ্কা উড়িয়ে ভোটের আগে দুই কেন্দ্রে দাপিয়ে বেড়ালেন বিভিন্ন্ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা৷ একদিকে তৃণমূল যেমন মিঠুন-দেবের মতো তারকাদের এনে চমকে দিল জনতাকে৷ তেমনই পিছিয়ে ছিল না সিপিএমও৷ দলের প্রার্থীর সমর্থনে বিভিন্ন্ এলাকায় ঘুরে বেড়ালেন সিপিএমের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি৷ কংগ্রেস ও বিজেপির প্রার্থীরা প্রচার করলেও, তবে এদিন তাঁদের সমর্থনে কোনো হেভিওয়েটরা আসেননি৷
অন্যদিকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অভিনেতা তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল কেন্দ্রের প্রার্থী অভিনেতা দেবকে প্রচারে এনে সকলকে চমকে দেন৷ এরপর যেখানেই প্রচারে গিয়েছেন মুকুল রায় ও দেব, সেখানেই উপচে পড়েছে ভিড়৷
বর্ধমানের ভাতারে তৃণমূলের জনসভায় উপস্হিত ছিলেন দলের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য মিঠুন চক্রবর্তী৷
এদিকে তৃণমূল যখন তারকাদের এনে প্রচার করছে, তখন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী শেখ সাইদুল হকের সমর্থনে প্রচার করেন দলের রাজ্যসভার এমপি সীতারাম ইয়েচুরি৷ তিনি জানান, কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকার গঠনের সম্ভাবনা কম৷ তাই আগ বাড়িয়ে তৃতীয় ফ্রণ্টকে সমর্থনের ইচ্ছা প্রকাশ করছে কংগ্রেস৷
কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা সলমন খুরশিদ তৃতীয় ফ্রণ্টকে সমর্থনের কথা বলার পর দুর্গাপুরে এক সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানান সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতা সীতারাম ইয়েচুরি৷
তিনি আরও জানান, ভারতবর্ষের সংসদীয় রাজনীতিতে যারাই লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়ে লড়াই করেছেন তারা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি৷ এবারও মোদির ভাগ্যে প্রধানমন্ত্রী পদ জুটবে না৷ নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির প্রবল সমালোচনা করে সীতারাম ইয়েচুরি জানান, দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিরা সারা দেশে গুজরাট মডেল চালু করতে চান৷
ইয়েচুরি জানান, পুঁজিপতিদের ব্যাপক ছাড় দেয় গুজরাট সরকার৷ তাই বিজেপির পিছনে এবার ভোটে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিরা৷ অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুজরাট সারা দেশে নিচের দিক থেকে ষষ্ঠ স্থানে বলেও এদিন জানান সিপিএমের রাজ্যসভার এমপি৷ এবার ভোটে বিজেপি বা কংগ্রেসের সরকার গঠনের সম্ভাবনা নেই বলে জানান সীতারাম ইয়েচুরি৷
তিনি জানান, ২০০৫-র গুজরাট দাঙ্গার পরও তৃণমূল এনডিএ-র সঙ্গে ছিল৷ এবারও তারা সুযোগ পেলে এনডিএ-কে সমর্থন করবে৷ তৃণমূল কোনওভাবেই দেশে তৃতীয় বৃহত্তম দল হতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোট কাটাকাটি নয়৷ সিপিএম এ রাজ্যে নীতির ভিত্তিতে জিতবে৷ যেভাবে গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ হচেছ এর প্রতিবাদেই মানুষ সিপিএমকে ভোট দেবে৷
শ্রীরামপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সকাল থেকেই অভিনেত্রী পদ্মিনী কোলাপুরীকে নিয়ে বিশাল এলাকাজুড়ে রোড শোয়ের আয়োজন করেছেন৷ এদিনই হুগলি জেলার দুই প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামছেন মুকুল রায়, মিঠুন চক্রবর্তী, মদন মিত্র৷
হাওড়ার তৃণমূল প্রার্থী ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে রয়েছেন রোড শোয়ে৷ উলুবেড়িয়ার তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুলতান আহমেদের মিছিলে স্লোগান উঠেছে ‘সুলতান বাবা জয় হো৷' বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের মিছিলেও স্লোগান উঠেছে, ‘জনতার রায় শতাব্দী রায়৷' আসানসোলে ভোট ৭ মে৷
কংগ্রেস, বিজেপি ও সিপিএম প্রার্থীরা রোদ উপেক্ষা করে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন্ জায়গায় প্রচারের কাজ সারেন৷ আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী ইন্দ্রাণী মিশ্র এদিন আসানসোল ও কুলটির বিভিন্ন্ এলাকায় প্রচার করেন৷ আসানসোলের বিভিন্ন্ এলাকায় ঘোরেন সিপিএম প্রার্থী বংশগোপাল চৌধুরি ও বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়৷
বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৪