বাগযুদ্ধে ভূপতিত নরেন্দ্র মোদী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রিয়াঙ্কার কাছে চূড়ান্ত পতন।
প্রিয়াঙ্কার কথার পিঠে আর কোনও কথা বলার সাহস দেখাননি মোদী। তিনি বুঝেছেন, এরপর কোনও কথা বলা যায় না। বললে লজ্জা আরও বাড়বে। পরাজয়টা নীরবে মেনেই অন্য কর্মসূচীতে মন দিয়েছেন। প্রিয়াঙ্কা সুনামিতে যখন বিজেপি ছিন্নভিন্ন, তখন সোনিয়ার বাসভবন দিল্লির ১০ জলপথেও তুলনাহীন তুফান। জানলা-দরজা বন্ধ থাকা সত্ত্বেও যে ঝড়টা ভেতরে ঢুকছে সেটা প্রিয়াঙ্কা ঝঞ্ঝা। কংগ্রেসের প্রায় সবার দাবি দলের সামনে প্রিয়াঙ্কাকে রাখলে মোদী সমেত গোটা বিজেপি উড়ে যেত। সোনিয়া যে সত্যিটা জানেন না, বা জানতেন না তা নয়, তিনি এড়িয়ে যেতে চান রাহুলের মুখ চেয়ে। মেয়েটা সম্মুখে এলে ছেলেটা যাবে কোথায়। তার ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার। সারাটা জীবন বোনের তাঁবেদারি করতে হবে। মায়ের কথায়, প্রেমিকার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সংসারী না হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন রাহুল। রাজনীতির জন্যই এই আত্মত্যাগ। তারপরও রাজনীতিতে যদি পেছনের সিটে বসতে হয়, বাঁচার কোনও মূল্য থাকবে।
প্রিয়াঙ্কাকে আটকে রাখা হয়েছে রায়বেরিলি আর আমেটিতে। মা আর বড় ভাইয়ের দুর্গ রক্ষাই তাঁর কর্তব্য। এর বাইরে যাওয়ার হুকুম নেই। বিজেপি জানে, আজ নয় কাল প্রিয়াঙ্কা পূর্নোদ্যমে আত্মপ্রকাশ করবেনই। তাঁকে ধরে বেঁধে রাখার সাধ্য কারো নেই। শুধু কংগ্রেস নয়, অধিকাংশ মানুষের পছন্দ প্রিয়াঙ্কা। সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হয়ে সেক থাই উচ্চারণ করেছেন, টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, একমাত্র প্রিয়াঙ্কাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য।
মানুষের মন কাড়তে অসুবিধে হয়নি বিজেপির। তারা জানে, প্রিয়াঙ্কার মেঘে বিজেপি ক্রমশ অন্ধকারে ঢাকবে। তাই প্রিয়াঙ্কাকে জব্দ করতে না পেরে আক্রমণে শান দিচ্ছে তাঁর স্বামী রবার্ট ভদ্রার বিরুদ্ধে। তাঁকে জমি কেলেঙ্কারিতে জড়াতে চাইছেন। হরিয়ানা, রাজস্থানে জমি দখলে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে রর্বাটের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেছে। তাতে রয়েছে এক লাখ থেকে রবার্টের ৩০০ কোটি টাকা করার গল্প। বর্তমানে রাজনীতিকদের সম্পদের তুলনায় টাকার পরিমাণটা এত কম যে মানুষের নজর কাড়েনি।
মোদীর রাজ্য গুজরাটে দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধী বলেছেন, মোদীর প্রচারের খরচ যোগাচ্ছে গৌতম আদানি। আদানিকে এক টাকা বর্গমিটারে জমি দেওয়া হয়েছে। যে দামে একটা টফির বেশি কিছু পাওয়া যায় না। আদানির সম্পদ এখন তিন হাজার কোটি থেকে বেড়ে ৪০ হাজার কোটি দাঁড়িয়েছে।
মোদী আর আদানি মিলে সাফাই গাওয়া সত্ত্বেও তাঁদের যুক্তি বিশ্বাস্য হয়ে ওঠেনি। মোদী যে নামমাত্র মূল্যে শিল্পপতিদের জমি, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেন, তা সর্বজনবিদিত। সেইজন্যই শিল্পপতিরা গুজরাটে শিল্পস্থাপনে আগ্রহী হয়। টাটা যে সিন্দুর থেকে ন্যানো কারখানায় গুজরাটে নিয়ে যায় তার কারণ একই।
নির্বাচনের শেষ পর্বে মোদী যথেষ্ট কোণঠাসা। মোদী হাওয়া বলতে আর কিছু নেই। যা পড়ে আছে সেটা হচ্ছে, মোদীর সাম্প্রদায়িক ভাবনার কঙ্কাল। তাও ছিন্নভিন্ন। সেগুলো জোড়াতালি দিয়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন মোদী। এখনও অনেকে ভূতের ভয় পায়। সাম্প্রদায়িকতার ভীতি কবে মন থেকে চলে গেছে। সবাই বুঝেছে ধর্মীয় বৈচিত্র্যই ভারতের ঐশ্বর্য। ধর্মের নামে মানুষকে ভাগ করার চেষ্টা বৃথা। পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, সাম্প্রদায়িকতার সুড়সুড়ি দিলে মাথা ভেঙে দেব। মোদী যেকথা শুনেছেন। মনেও দেখেছেন। তবু সাম্প্রদায়িকতার ভাঙা কঙ্কালটাকে নড়িয়ে চড়িয়ে ভোটের ফায়দা দেখছেন। এটা খেলা নয়, খেলা ভাঙার খেলা। পরাজয়ের গন্ধ পেয়েই তিনি বেপরোয়া।