কলকাতা থেকে: বাংলাদেশের ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দল জামায়াতকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সমর্থন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন চলমান লোকসভা নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী ও রাজ্য সদস্য মালা রায়। পাশাপাশি তিস্তা চুক্তি না হওয়ার জন্যও মমতাকে দুষেছেন তিনি।
রাজ্য কংগ্রেসের এই নেতা এও বলেছেন, সরকার গঠনের জন্য হয় কংগ্রেস, না হয বিজেপির পায়ে ধরতে হবে তাকে।
রোববার বিকেলে কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায় জনসংযোগকালে বাংলানিউজের কাছে
এভাবেই নিজের অভিমত তুলে ধরেন মালা রায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শত্রুতা করেছেন মমতা ব্যানার্জি। এটা করা কি তার ঠিক হয়েছে! শেখ হাসিনার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সময় থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক। কিন্তু সেই সম্পর্ক নষ্ট করে দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মালা রায় বলেন, মমতা মুখে যতই বিজেপির নামে বদনাম করুক, এই দলটির সঙ্গেই জোট করতে চলেছেন তিনি। সরকার গঠনকালে তাকে হয় বিজেপি না হয় কংগ্রেসের পা ধরতে হবে। সেক্ষেত্রে মতের মিল থাকায় বিজেপির সঙ্গেই যাবেন মমতা।
মমতা ব্যানার্জির বাংলাদেশ প্রীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনি মুখে সম্প্রীতির কথা বললেও কাজে তিনি তা নন। তিস্তা চুক্তি আটকে আছে একমাত্র তার জন্য।
মালা রায় বলেন, ছিটমহল সমস্যা সম্পর্কে কোন কথা তিনি বলছেন না। এতেই ধরে নিতে হয়, বিজেপি ও তৃণমূল সিটমহল সম্পর্কে একই মত পোষণ করে।
সবশেষে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তিস্তা চুক্তি হওয়া খুব জরুরি। কংগ্রেস এর নেতৃত্বাধীন এনডিএ-৩ সরকার ক্ষমতায় এলে খুব শীঘ্রই তিস্তা ও সিটমহল সমস্যা মিটবে।
কংগ্রেসের জয়ের বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন মালা রায়।
তিনি বলেন, গত দুবারের মত এবারও এনডিএ জোট সরকার গঠন করবে।
মালা রায় এর আগে বিধানসভায় কংগ্রেসের হয়ে তিনবার জয়ী হন। এবার লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতায় তার প্রতিপক্ষ বিজেপির তথাগত রায়, তৃণমূল কংগ্রেসের সুগত বসু, সিপিআইএমএলের ড. নন্দিনী মুখার্জি।
বাংলানিউজ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি কংগ্রেসের পক্ষে ভোট চাচ্ছিলেন।
তবে যতোই তিনি তার দলকে সরকার গঠনের পথে এগিয়ে রাখুক না কেন, লোকসভার চলমান ভোট জরিপ তা সমর্থন করছে না। ভোট পূর্ব সব জরিপেই এগিয়ে রয়েছে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি।
যদিও শেষ পর্যন্ত ভোটের ফলাফল কি হয় তা এখনই বলা মুশকিল, কিন্তু কোন দলই যে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না তা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে তাই ভোটের পর জোট সরকার গঠনের আলোচনাই আসছে ঘুরেফিরে। আর জোট সরকার হলে আঞ্চলিক দলগুলোর অবস্থান বড় দুই দল কংগ্রেস ও বিজেপির ভাগ্য গড়ে দিতে পারে। এক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
কিন্তু ভোটের পর মমতার দলের ঝুলিতে যে ক’টি আসন আসবে সেগুলো নিয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস নাকি বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবেন তা এখনই বলা মুশকিল। তবে বর্তমানে কংগ্রেস বা বিজেপি কোন দলের দিকেই ঝুঁকে নেই মমতা। একদিকে তিনি বিজেপিকে তুলোধুনো করছেন, অন্যদিকে কংগ্রেসের ভাইস-প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী মমতাকে জোটে নিতে অনীহা দেখাচ্ছেন।
কিন্তু রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। তাই শেষ পর্যন্ত কি ঘটে তা দেখতে আরো ক’টা দিন অপেক্ষা ছাড়া গত্যন্তর নেই।
** পশ্চিমবঙ্গে তারকাপ্রার্থী নিয়ে অস্বস্তি
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৪