কলকাতা: বিজেপির হাত ধরে জীবনে প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তাও যেন-তেন মন্ত্রী নয়-ভারতের শক্তিশালী মন্ত্রণালয় রেল।
ছাত্র জীবনে কংগ্রেসের ছাত্রফ্রন্টে নাম লিখিয়ে রাজনীতিতে নেমেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি এমনই মন্ত্রী ছিলেন যে তখনকার প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী পর্যন্ত মমতার কালীঘাটের পৈত্রিক বাড়িতে বেড়িয়ে গিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় মমতার মা‘কে প্রণাম করে আর্শীবাদ নিয়েছিলেন বাজপেয়ী।
রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে জোট বেঁধেছিলেন তার পুরানো ঘর কংগ্রেসের সঙ্গে। ফের মন্ত্রী হয়েছিলেন একই মন্ত্রণালয় অর্থাৎ রেলের।
নানা ইস্যুতে বনিবনা না হওয়ায় লোভনীয মন্ত্রীত্ব ছেড়ে কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগ। তুলোধুনা করলেন কংগ্রেসকে। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে নি:শর্ত সমর্থন দিয়ে বাংলার উপকারই করেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। এজন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গবাসীর মন জয় করেছেন। যে ভুলটা করেছিল সিপিএম জ্যোতি বসুকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে না দিয়ে। একেবারে ৩৩ বছরের রাজ্য শাসন থেকে গ্লানির বিদায়।
কেন্দ্রে সরকার গড়তে তৃণমূল কংগ্রেস না বিজেপিকে সমর্থন দেবে এনিয়ে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা চলছে পশ্চিমবঙ্গবাসীর মধ্যে। হয়তো পশ্চিমবঙ্গবাসীর মনের কথা বুঝতে পেরে মমতা আসন্ন ৭ মে ও ১২ মে‘র নির্বাচনী দিক মাথায় রেখে ঘোষণা দিলেন কাকে তিনি সরকার গড়তে সমর্থন দেবেন।
তাই কেন্দ্রে সরকার গড়তে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের জোট সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলকে হারাতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে অশুভ জোট হচ্ছে।
কেননা পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস সভাপতি কেন্দ্রে রেলমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরীর বিস্ফোরক অভিযোগ, গত দুতিন মাস ধরে তৃণমূলের দুই রাজ্যসভার সংসদ সদস্য ঘনঘন বিজেপি সভাপতির বাড়িতে যাচ্ছেন। অধীরের দাবি এতেই স্পষ্ট তৃণমূল-বিজেপির অঘোষিত গাঁটছড়া হচ্ছে। দিনকয়েক ধরেই তৃণমূল বিজেপির গোপন আঁতাত নিয়ে সরব ছিলেন সিপিএম। কলকাতার নৈহাটির জনসভায় সেই অভিযোগকে কার্যত সিলমোহর দিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি মৈত্রীর বার্তা দিয়েছিলেন তিনি।
রাজনাথ সিংয়ের বার্তার পরই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চোধুরী। তাঁর অভিযোগ তৃণমূলের রাজ্যসভার দুই সংসদ সদস্য প্রায়ই বিজেপি সভাপতির বাড়ি যাচ্ছেন।
এখানেই শেষ নয়। একধাপ এগিয়ে অধীর চৌধুরীর আরও দাবি, সারদা কাণ্ডে ইডি বা সিবিআই তদন্ত যাতে না হয় বিজেপির কাছে সে আশ্বাসও পেয়েছে তৃণমূল।
গোপন আঁতাতের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলীয় ওয়েবসাইটে তৃণমূল এমপি ডেরেক ওব্রায়েন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এভাবে- অধীর চৌধুরী চরম মিথ্যাবাদী। তৃণমূল বিজেপির হাত ধরবে কিনা তার উত্তর মিলবে ষোলোই মের পর। তবে, জোট সম্ভাবনা নিয়ে চতুর্থ দফা ভোটের আগে সরগরম এ রাজ্যের রাজনীতি।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৪০ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৪