ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

অন্যের ব্যর্থতায় ফিরবে বাম দলের কপাল!

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৪
অন্যের ব্যর্থতায় ফিরবে বাম দলের কপাল! ছবি: সংগৃহীত

Jasmin_papriআসানসোল থেকে:  পশ্চিমবঙ্গকে দুর্নীতি আর শোষণ ছাড়া কিছুই দেয়নি বামদলগুলো। তাই খুব শিগগিরই নির্বাচনে তাদের ভাল করার সুযোগ নেই।

তবে যদি অন্য দলগুলো রাজ্য শাসনে ব্যর্থ হয়, মানুষ তখনই কেবল ‘বিকল্প’ হিসেবে বামদের বেছে নিতে পারে।

৩৪ বছর পশ্চিমবঙ্গ শাসনের পর গত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে পরাজিত বামলগুলোর আবার ক্ষমতায় ফেরার সম্ভ‍াবনা এভাবেই বর্ণনা করল কলকাতার সাধারণ মানুষ।

রাস্তা-ঘাট, ট্রেন, পার্কে আলাপ হওয়া সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গকে পিছিয়ে দিয়েছে বামেরাই। এক সময় বলা হত ‘পশ্চিমবঙ্গ আজ যা ভাবছে, পুরো ভারত তা ভাবে পরের আগামীকাল (‘হোয়াট বেঙ্গল থিংস টুডে দ্য রেস্ট অব ইন্ডিয়া থিংকস টুমরো। ’)।   কিন্তু সে কথাটি এখন আর সত্য নয়। অনেকের মতে, এর একমাত্র কারণ বামশাসন।

তারা বলছে, মুখে দুর্নীতিমুক্ত থাকার কথা বললেও বামশাসন ছিল দুর্নীতি আর ক্যাডারবাজির সুবর্ণ সময়।

অতিদর্প, অহংকার, লোভ আর অন্তর্কোন্দল বামদলকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য অনেকের।

এক সময়কার শ্রমিকদরদী পার্টি শিল্পপতিদের পার্টিতে পরিণত হয়েছে বলেও মনে করছেন তারা।
 
কলকাতা থেকে বেনারসের ট্রেন ‘বিভূতি’ এক্সপ্রেসে বসে কথা হয় উত্তর প্রদেশে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আশিস চ্যাটার্জির সঙ্গে।

বাম দলের কথা তুলতেই বেশ ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, আজ পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে গেছে বামদের কারণেই। তারা ক্ষমতায় এসে শিশুশ্রেণি থেকে ইংরেজি তুলে দিল। চালু করল ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে। এতে ছেলেমেয়েরা ইংরেজিতে পিছিয়ে গেল। আর বহুভাষার এদেশে ইংরেজিতে পেছানো মানে সব দিকেই পিছিয়ে যাওয়া।  
তবে আসানসোলের বাসিন্দা নিবারণ ভট্টাচার্য বাম শাসনের প্রথম ২৪ বছরের প্রশংসাই করলেন। কিন্তু বাম শাসনের শেষ ১০ বছরকে ‘পতনের বছর’ বললেন তিনি। নিন্দা করলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শাসনামলেরও।

তিনি বলেন, প্রথম ২৪ বছর জ্যোতিবসুর সময়ে অন্তত প্রশাসনে তার নিয়ন্ত্রণ ছিল। বুদ্ধদেব কোনো উন্নয়নকাজ তো করেনইনি, তার উপর আবার ক্যাডারবৃত্তিকে লালন করে গেছেন মনোযোগ দিয়ে।

এর আগে কলকাতার মার্কুইজ স্ট্রিটে সদ্য-সিনিয়র-সিটিজেন-হওয়া অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক অলোকেশ রায় বলেন, ৪০ বছর ধরে রাজনীতি বুঝি। এই দীর্ঘ সময়ে দেখলাম যারা বেশিদিন ক্ষমতায় থাকে তাদের জনপ্রিয়তা তলানিতে চলে যায়। কারণ, তারা নিজেদের মালিক মনে করে। বামফ্রন্ট তাই করেছে। ৩৪ বছরের শাসনের শুরুর দিকে বেশ ভাল করেছিল তারা। কিন্তু শেষ ১০ বছরে তাদের কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে গেছে রাজ্য। বামদের ভরাডুবি একারণেই।

তাছাড়া চারিত্রিক গুণাবলিতে ও দক্ষতায় বাম নেতারা আগের মত নেই বলে অভিযোগ আনেন তিনি।
 
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখন দুই প্রধান রাজনৈতিক দল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-সিপিআই.এম এর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট ও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। ১৯৭৭ সালের ২১ জুন জ্যোতি বসুকে মুখ্যমন্ত্রী করে প্রথমবারের মতো বামফ্রন্ট এখানে সরকার গঠন করে। এরপর একে একে ছয়টি সরকারের পূর্ণ মেয়াদ অতিক্রম করে বামফ্রন্ট। ২০০৬ সালে সপ্তমবারের মতো ক্ষমতায় বসে। সেবার বিধানসভা নির্বাচনে ২৩৫টি আসন দখল করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসে। বিগত ৩৪ বছর এই বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছে। এই সরকার ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম মেয়াদের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকার।

কিন্তু ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, ২২৬টি আসন দখল করে বামফ্রন্টকে পরাজিত করে মমতা ব্যানার্জির  নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করে। এখন পশ্চিমবঙ্গ চলছে তৃণমূলের শাসনে।

বাংলাদেশে সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।