ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

নেতৃত্বের শূন্যতা

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৪
নেতৃত্বের শূন্যতা ছবি: প্রতীকী

ডিজিটাল ক্যামেরায় ক্লিক করলেই ছবি। কম্পিউটারে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে প্রিন্ট।

১৮৩৭-এ ‘দাগেরোটাইপ’ ক্যামেরায় ছবি তোলা মানে ছিল ধৈর্য্যের পরীক্ষা। এক্সপোজার পনের মিনিটের। যার ছবি উঠবে, তাকে ততক্ষণ কাঠের মতো বসে থাকতে হত। একটু নড়াচড়া করলেই গেল। ছবি নয়ছয়। আগেকার দিনে ফটো তোলার মতো গোটা ভারতটাকে দাঁড় করিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন। ভোটে এক্সপোজারের মেয়াদ ১২ মে। দিনটা পার না হওয়া পর্যন্ত চিত্র পরিস্ফুট হওয়ার নয়। কেন্দ্র থেকে রাজ্য সরকার ক্ষমতাশূন্য। পুলিশ, প্রশাসন কমিশনের হাতে। মানুষ অধীর। কী হচ্ছে, কী হবে, ভেবে কূল পাচ্ছে না। ভোট প্রার্থীদের অবস্থা আরও করুণ। অনেকটা সুকুমার রায়ের কবিতার সেই রাজার মতো, রোদে রাঙা ইটের পাঁজা, তার ওপরে বসল রাজা, চেঁচিয়ে বলে বৃষ্টি নাম, নইলে কিছু মিলছে না।

ভোটের গরমকে ছাপাচ্ছে বৈশাখি উত্তাপ। তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। সবাই দোয়া করছে, আল্লাহ ম্যাগ দে পানি দে। সাড়া নেই। অনেকের ধারণা, এটা পাপী-তাপীদের পুড়িয়ে মারার ব্যবস্থা। ৭ এপ্রিল ভোট শুরু। ৯, ১০, ১২, ১৭, ২৪, ৩০ এপ্রিল। সাত দফা ভোট শেষ। বাকি আরও দু’দফা আর ১২ মে। ১৬ মে কেয়ামত। মানে শেষ বিচারের দিন। জানা যাবে কার ভাগ্যে কী। প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটারদের পরীক্ষার রেজাল্ট। পছন্দের প্রার্থী না জিতলে, হতাশা থাকবেই।

এখনও পর্যন্ত কোথাও একটি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের আশা কম। জনমত সমীক্ষায় বিজেপির দিকে পাল্লা ভারী হলেও তারা একক গনিষ্ঠতা পাবে এরকম গ্যারান্টি  কেউ দিচ্ছে না। কংগ্রেস ভাবছে, আমরা যদি না পরি, বিজেপিও যেন না পারে, তার চেয়ে তৃতীয় বিকল্পের সরকার হওয়া ভাল। বিজেপি দেশের লাগাম ধরবে, সহ্য করা যায় না।

vote_01কংগ্রেস মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি নির্বাচনের আগেই আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। সরাসরি কোন প্রস্তাব না দিলেও তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। উদ্দেশ্য একটাই, হেরেও হার বাঁচানোর প্রয়াস। যেভাবেই হোক বিজেপির হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া। কংগ্রেস ঠারেঠোরে বোঝাতে চাইছে। তাকেও প্রধানমন্ত্রিত্বের দরকার নেই। আঞ্চলিক দলগুলো থেকেই কেউ প্রধানমন্ত্রী হোন। তারা বাইরে থেকে সমর্থন করবে। এ ব্যাপারে কংগ্রেসের ট্রাক রেকর্ড মোটেও ভাল নয়। একের পর এক অংকগ্রেসী নেতাকে তারা সমর্থন দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কুর্শিতে বসিয়েছে। দুদি বাদেই সমর্থন প্রত্যাহার করে চেয়ার উল্টে দিয়েছেন। চরণ সিং, বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং, চন্দ্রশেখর কংগ্রেসের শিকার। তাঁদের গাছে তুলে মই কেড়েছে কংগ্রেস। ১৯৯৬-তে জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করার কথা ওঠে। সিপিএম, শঙ্কার মেঘ দেখেই তাঁকে প্রধঅনমন্ত্রী হতে দেয়নি। দু’দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়ে দু’কূল হারাবেন। একবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে ফিরে আসাটা লজ্জার।

অবস্থা পাল্টেছে। রাজনীতি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। দশ বছর টানা ক্ষমতার রয়েছে কংগ্রেস। এতদিন সরকারে থাকাটা কম কথা নয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া ওঠাটা স্বাভাবিক। তার ওপর দুর্নীতির দাগও লেগেছে কংগ্রেসের গায়ে। তৃতীয়বার জোরজার করে ক্ষমতা দখল করতে গেলে জনপ্রিয়তা আরও কমবে। কংগ্রেস ক্ষমতালিপ্সু বলে কথা উঠবে। জনতাকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে তখন স্বৈরতন্ত্র ছাড়া উপায় থাকবে না। তাতে সব থেকে বেশি ক্ষতি হবে রাহুল গান্ধীর। বর্তমানে কংগ্রেসের মূল ভিত্তি। সামান্য ভুলে তাঁর ভবিষ্যত অন্ধকারে লুকোবে। মানুষ তাঁকে একবার ফেলে দিলে ফের উঠে আসার রাস্তা বন্ধ। তাই অতিরিক্ত সাবধানী কংগ্রেস।

রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী করতে খুব বেশি ব্যস্ত নন সোনিয়া গান্ধী। তিনি চান, রাহুল আরও সময় নিক। নিজেকে তৈরি করুক। সামনে দিন তো পড়েই আছে। নরেন্দ্র মোদী যদি প্রধানমন্ত্রী হন, লোকে বুঝে যাবে কত ধানে কত চাল। বিপদ থেকে বাঁচতে, বাধ্য হয়ে তারা কংগ্রেসমুখি হবে।

অঙ্কটা বুঝতে পারেননি মহারাষ্ট্রের তরুণ কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বিরাজ চৌহান। নির্বাচনের আগে আঞ্চলিক দলগুলোকে এক হাত নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ওরাই যত নষ্টের গোড়া। কেন্দ্রে স্থিতিশীল সরকার গঠনে তারাই বাধা। যদি কংগ্রেস বিজেপি দু’টি দল নির্বাচন নড়ত সমস্যা হতো না। দুয়ের মধ্যে একটি দল ক্ষমতা আসতো। পাঁচ বছর অন্তর পাল্টাপাল্টি চলত নির্বিঘ্নে।

আঞ্চলিক দলগুলো যে আকাশ থেকে পড়েনি, সেটা বোঝেননি চৌহান। আঞ্চলিক সমস্যা কাটানোর দাবিতে তাদের জন্ম। সেই সুবাদে বিভিন্ন রাজ্যে তারা সরকার গড়েছে। এটাই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। নির্বাচনের শেষ দিকে চৌহানের ভুল ভেঙেছে। সাংবাদিকদের ডেকে বলেছেন, আঞ্চলিক দলগুলোই এবার সরকার গড়ুক। চাইলে কংগ্রেস সমর্থন দেবে। এখন কথা হচ্ছে, আঞ্চলিক দলগুলোকে এক করবে কে। এ যায় উত্তরে তো সে যায় দক্ষিণে। একই রাজ্যে একাধিক আঞ্চলিক দলের মধ্যে বিরোধ তীব্র। কেউ কাউকে এক সেন্টিমিটার মাটিও ছাড়বে না। সবদলকে এক মঞ্চে আনার মতো নেতা কোথায়?

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।