ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

যশোদার অশ্রুকণা

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৬ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৪
যশোদার অশ্রুকণা

কমলা জমি, সবুজ নক্সা পাড় শাড়ি। হাতে-গলায় সোনার অলঙ্কার নেই এতটুকু।

বাঁ হাতে রিস্টওয়াচ। সিএনজি থেকে নামার আগে সময়টা দেখলেন। দুপুরের কড়া রোদ্দুরেও স্থির। তাপ উত্তাপ নেই। একা একা সারা জীবন ঝড়ঝঞ্ঝা সয়েছেন যশোদাবেন। ৪৯ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। দু’দিন যেতে না যেতেই দূরত্ব। তারপর আর দেখা হয়নি এক সেকেন্ডের জন্যও। মোদীর রাজনৈতিক সংসারে যশোদার ঠাঁই হয়নি। স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে বাঁচা সহজ নয় তখনও, এখনও। তবু তিনি আছেন তাঁর মতো। পড়শীরা সান্ত্বনা দিয়েছেন। বলেছেন, সংসারে এটাই নিয়ম। অতি বড় সুন্দরী না পায় বর, অতি বড় ঘরণী না পায় ঘর। এসব কথা কানে তোলেননি যশোদা। বাজে সংস্কারে বিশ্বাস নেই। যশোদার রূপকে ছাপিয়েছে তাঁর ব্যক্তিত্ব। গুজরাটের লোকসভা নির্বাচনে উজালা কেন্দ্রে শহরের লাগোয়া কোটকুভার বুথে যখন ভোট দিতে ঢুকলেন যশোদা, অজস্র টিভি ক্যামেরা তাঁর ওপর আছড়ে পড়ল। গুজরাটের সব চ্যানেলে লাইভ টেলিকাস্ট। সবাই তাঁকে দেখছে। কিছু শুনতে চাইছে তাঁর মুখ থেকে। সাংবাদিকরা প্রশ্নের ঝড় তুলছে। তিনি নীরব। চার্লি চ্যাপলিনের নির্বাক ছবির মতো। চার্লির ছবিতে যে চঞ্চলতা থাকে, সেটাও নেই। সাংবাদিকের কাছ থেকে উড়ে এল প্রশ্ন, কাকে ভোট দিলেন, বিজেপি না কংগ্রেসকে। কোনও সাড়া নেই। ভাবলেশহীন মুখে ভোট দিয়ে সিএনজিতে চড়ে বসলেন। ফর ফর করে ফড়িংয়ের মতো তাকে নিয়ে উড়ে গেল পলকা ত্রিচক্র যান।

তিনি মৌন থাকলেও লোকে চুপ থাকবে কেন। যখন হাতে গরম কাবাব, তা মুখে না তুলে কেউ ছাড়ে। আক্রমণের তীর মোদীর দিকে। সবারই এক কথা, মোদী উড়ছেন কপ্টারে। ছুটছেন বিলাসবহুল কারে। স্ত্রীর বেলায় সিএনজি।

না, দোষটা মোদীর নয়। লোক মারফৎ গাড়ির অফার দিয়েছিলেন স্ত্রীকে। উনি নেননি। কেন নেবেন। অচেনা, অন্যলোকের সাহায্য নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি স্বামী ছিলেন, এখন তো নয়। বর্তমানের মোদী সম্পূর্ণ অজানা, অচেনা। তিনি ভালবাসেন শুধু কুর্শি। রাইফেল শ্যুটারের মত তাঁর একমাত্র টার্গেট প্রধানমন্ত্রিত্ব। দল বা সঙ্গের লোকজন কেবল লক্ষ্য পূরণের বাহন। মোদী যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাঁর পাশের জায়গাটা কী যশোদাবেনের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে।
এবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় যশোদাবেনকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করেছেন মোদী। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম। হয়তো এতে তাঁর রাজনৈতিক ফ্যায়দা হবে বলেই করেছেন। খাতা-কলমে মেলেছেন বলে এই নয়, মন থেকেও মেনেছেন। হৃদয়ে পুনর্বাসন দিলে একবার অন্তত ফোন করে জিজ্ঞেস করতেন, যশোদা, ভাল আছো তো।

শিক্ষকতা করেই জীবনটা কাটিয়েছেন যশোদা। বয়স এখন ৬২। অবসর নেওয়ার পর আরও একা। ছাত্রছাত্রীদের কোলাহলে যখন দিন কাটত, ভাল লাগত। নিঃসঙ্গতা মুছে তারাই সঙ্গী। ভোট দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় মুক্তোর মত অশ্রু চোখের কোণে চিকচিক করছিল। ক্লোজ-আপ শটে সেটা লুকোনো যায়নি। শাশুড়ি হীরাবা কিন্তু গান্ধীনগরে ভোট দিয়েছেন হাসতে হাসতে। ভি চিহ্ন দেখিয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এবার শুধু মোদী, আর কেউ নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।