ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

অপ্রতিরোধ্য অমর্ত্য

অমিত বসু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৪
অপ্রতিরোধ্য অমর্ত্য

গনগনে আগুন ঢালছে বৈশাখী আকাশ। সূর্য মধ্য গগনে।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্যের পা পড়ল শান্তিনিকেতনের পোড়া মাটিতে। রাঙা মৃত্তিকা পুড়ে পুড়ে ব্রাউন। নিজের ঘরে ঢুকলেন। সঙ্গে সাংবাদিক মেয়ে অন্তরা। পরখ করলেন ঘরের আনাচ কানাচ। লম্বা শ্বাসে মায়ের পরশ পেলেন। দেরি না করে চললেন স্টাফ ক্লাবে নিজের ভোটটা দিতে। ইভিএমে পছন্দের প্রতীকের পাশে বোতামটা টিপলেন। কোন দল অমর্ত্যরে দামী ভোটটা পেল জানা গেল না। ‘লোটা’ মানে ‘না’-এর সুইট টিপে ভোটটা নষ্ট করেননি। কাউকে না কাউকে দিয়েছেন। কাকে দিলেন বললেন না। বলার কথাও নয়। গোপনীয়তা ফাঁস করা অসমীচীন। বন্ধু, লোকসভার সাবেক স্পীকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গী হওয়ার কথা ছিল। কলকাতা থেকে তিনি আসেননি। বলেছেন, অসুস্থতার কারণেই ভোট দিতে যাওয়া হল না। সত্যিই কী তাই। মনে অভিমান পুষে রাখেননি তো। সিপিএমের নেতা হয়েও জীবন সায়াহ্নে দল থেকে নির্বাসিত। আঘাতটা বুকে বাজারই কথা। ২০০৮-এ কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের সম্পর্ক ছিন্নটা মানতে পারেননি। দলের নির্দেশ সত্ত্বেও স্পীকার পদে ইস্তফা দিতে রাজি হননি। পরিণতিতে বেশহারা। মুখের ওপর সিপিএমের দরজা বন্ধ। এত বড় অপমানের পর সেই সিটিএমকে ভোট দিতে কম সময় দেয়নি। অন্য দলের প্রতীকের পাশের বোতাম টিপতেও আঙুল কাঁপার কথা। তাঁর চেয়ে দূরে থাকা ভাল। ইভিএম শান্তিনিকেতনে, তিনি কলকাতায়। একই ইভিএমে অমত্যের ভোট ছাপ পড়েছে।

দীর্ঘ ১২ বছর ভোট দেননি অমর্ত্য। হঠাৎ কী হল, সব কাজ ফেলে সুদূর লন্ডন থেকে কলকাতা হয়ে শান্তি নিকেতনে ছুটে গেলেন ভোট দিতে। এ কী বেখেয়ালে সময় নষ্ট। ভোট দেওয়ার পর তিনি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদী ভাল নয়। সংখ্যালঘুরা ভীত হয় এমন কারোও প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত নয়। তাছাড়া, মোদী সাধারণ মানুষের নয়, ব্যবসায়ীদের মনের মানুষ। সেই সরকারই কাম্য, যে সরকার শিক্ষা আর স্বাস্থ্যের দিকে বেশি নজর দেয়।

তাহলে কী মোদীকে ঠেকাতেই সাতসমুদ্রে তেরো নদী পেরিয়ে ছুটে এসেছেন অমর্ত্য। তাই যদি হয়, তাঁর একটা ভোট কী মোদীকে আটকাতে পারবে। তা না পারুক মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদটা তো ছড়াবে। অমর্ত্য যখন বলছেন, মোদী ঠিক নন, তখন অন্যেরাও বিষয়টা নিয়ে নিশ্চয়ই ভাববে। মোদী পরাজয় যারা আচ্ছন্ন তারা সৎ সত্যটা চিনে নেওয়ার সুযোগ পাবে।

অর্থনীতিকে মানবকল্যাণমুখী করাটাই অমর্ত্যের উদ্দেশ্য। তাঁর গবেষণার বিষয়ও তাই। মোদী চলেছেন উল্টো রাস্তায়। তিনি যে উন্নয়নের মডেল তৈরি করেছেন সেখানে শিল্পপতিদের লাভ-লোকসানের ভোট। গরীব গুর্বোরা ব্রাত্য। কে না খেয়ে মরল, কাদের শিক্ষার আলো জুটল না, তার পরোয়া নেই। উন্নয়নের ঘোড়াকে চাবুক মেরে ছোটাও। তার পায়ের ফুতে ধুলো উড়ুক। সামনে পড়া লোক ছিটকে যাক। এই দৃশ্যই তুলে ধরেছেন মোদীপন্থী। অর্থনীতিবিদ জগদীশ ভাগবতী। তিনি বলেছেন মোদী যে ঘোড়া ছোটাচ্ছেন সেটা কোথায় পৌঁছিবে আমরা জানি না। বিশ্বনন্দিত অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি সেটা চাক্ষুষ করতেই পারেন। সাধারণ মানুষের পক্ষে অতটা বোঝা সম্ভব নয়। তারা ধান্ধা জাহান্নামের দুঃস্বপ্ন তাদের চোখে। যারা মোদীর ঘোড়ার ল্যাজ ধরেছেন তারাও জানে না ঘোড়ার গন্তব্য।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।