দিল্লি থেকে: সকাল আটটা। ভারতের দূরপাল্লার অন্যতম ট্রেন রাজধানী এক্সপ্রেস এসে থামলো দিল্লিতে।
পাশে দাঁড়ানো পুলিশের কাছে একথা বলতেই হেসে উঠলেন তিনি। বললেন, এরা আগন্তুককে বিভ্রান্ত করে। আমরা চাইনা আপনারা তাদের হাতে পড়ুন। তাই এই সাইনবোর্ড।
আমার দিল্লি আসার কারণ জেনে নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন-কোন দলকে সমর্থন করছেন? মুচকি হেসে জানালাম- নিরপেক্ষ প্রতিবেদন তৈরি করতে এসেছি। কোন দলের প্রতি বিশেষ সমর্থন নেই।
এবার বেশ জোরে হেসে উঠে পুলিশ সদস্য রাজ নারায়ণ বললেন, আপনি তো আমাদের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মত কথা বললেন। জানেন তো স্যারজিও এবার নিরপেক্ষতার জন্য ভোট দিচ্ছেন না।
পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের কথোপকথন শোনা আরেক যাত্রী বলে উঠলেন, ঠিকই তো করেছেন। তিনি যে অবস্থানে আছেন, সেখান থেকে নিরপেক্ষতা দেখানো জরুরি।
রাতেই ভারতীয় মিডিয়া খবরটি প্রচার করেছিল। দিল্লি শহরে ঢুকেই সে খবর আবারও জানলাম। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি এবার ভোট দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করছেন না।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ভোটদানের পদ্ধতি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল আরো আগেই। কিন্তু তিনি পূর্বসূরিদের পথ বেছে নিয়েছেন। পিছিয়ে গেছেন ভোট দান থেকে। শুক্রবারই রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব বেণু রাজামণি একথা নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাজনীতিতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
বাংলাদেশের জামাই এবং বাঙালি সন্তান প্রণব মুখার্জি খাতা-কলমে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের ভোটার। দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া লেক যেখানে শেষ হচ্ছে, সেখানেই রাষ্ট্রপতির কলকাতার বাড়ি। ভোটার তালিকায় এই ঠিকানা নথিভুক্ত আছে তার।
দিল্লিবাসী অবশ্য এখবরে অবাক নন। কারণ, এর আগের রাষ্ট্রপতিরাও নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ভোট না দেওয়ার পথে হেঁটেছেন।
দিল্লির পাহাড়গঞ্জ এলাকায় ঢুকে আবারও একথার রেশ পেলাম। এক চায়ের দোকানেও রাষ্ট্রপতির ভোট নিয়ে আলাপ চলছিল। মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললেন, প্রণব মুখার্জি আবারও প্রমাণ করলেন তিনি এদেশের জন্য কতটা যোগ্য মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৪