ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

আঞ্চলিক তকমা মুছতে কৌশলী মমতা

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৪
আঞ্চলিক তকমা মুছতে কৌশলী মমতা মমতা ব্যানার্জি

দিল্লী থেকে: তৃণমূল কংগ্রেসের শরীর থেকে ‘আঞ্চলিক’ দলের তকমা মুছতে চান দলটির কর্ণধার ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। নিজের দলকে সর্বভারতীয় রূপ দিতে চান তিনি।

এজন্য বেশ কৌশলীও হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সরকার প্রধান।

এর আগের লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়খণ্ডে তার দলের প্রার্থী জয়ী হন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঝাড়খণ্ড আলাদা হয়ে যাওয়ায় তাই লাভ হয়েছে মমতার। এখন তিনি দলের নামের আগে সর্বভারতীয় তকমা সাঁটতে পারছেন। যদিও নির্বাচন কমিশনের খাতায় সর্বভারতীয় হিসেবে নাম ওঠেনি তৃণমূলের।

তাই এবার সর্ব ভারতীয় দল হওয়ার আবশ্যিক শর্তগুলো মানতে পশ্চিমবঙ্গসহ মোট ১৭টি রাজ্যে তৃণমূলের প্রার্থী দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।

কারণ, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী ছয়টি রাজ্য থেকে কোন দলের প্রতিনিধি পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করলেই কেবল ওই দল সর্বভাতীয় দলের খেতাব পাবে। তবে এখানেই শেষ নয়। এ দরজায় সর্ব ভারতীয় কক্ষে প্রবেশ করতে না পারলে আছে আরো এক দরজা। কোন দলের চার রাজ্যের চার প্রার্থী প্রত্যেকে কমপক্ষে ৬ শতাংশ ভোট পেলেও সেই দরজার চাবি পাওয়া সম্ভব।

এবারের নির্বাচনে এই চাবি সংগ্রহও অন্যতম লক্ষ্য মমতার।

মমতা এবার পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি উড়িষ্যা, মধ্য প্রদেশ, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, কেরালা, মহারাষ্ট্র, ছত্রিশগড়, বিহার, অরুণাচল, আসাম, ঝাড়খণ্ড, আন্দামান ও নিকোবর দীপপুঞ্জ, সিকিম, মনিপুর, ত্রিপুরা এবং গোয়ায় বিভিন্ন সংখ্যক প্রার্থীকে তৃণমূলের টিকিট দিয়েছেন।

দিল্লি ও কলকাতার রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মমতা এসব প্রার্থীকে জেতার জন্য টিকিট দেননি। দিয়েছেন কোন রকমে ৬ শতাংশ ভোট পাওয়ার জন্য। এবার না হলেও যাতে পরেরবার এসব প্রদেশে আরো ভাল ফল করতে পারেন-এ লক্ষ্যেই এগুচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের এই ডাকসাইটে নেত্রী। যিনি দিদি নামেই দেশব্যাপী পরিচিত।

এবার পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছেন মমতা। এরপরেই আছে উত্তর প্রদেশে। এ রাজ্যের মোট ৮০টি আসনের ১৯টিতে প্রার্থী দিয়েছে তার দল।

ত্রিপুরা পূর্ব এবং ত্রিপুরা পশ্চিম আসনের দু’জন পেয়েছেন তৃণমূলের টিকিট। মনিপুর রাজ্যের দুটি আসনেই আছে তৃণমূল প্রার্থী। সিকিমের একটিতেই, ঝাড়খণ্ডের ১৪টির মধ্যে পাঁচটিতে, আসামে নয়টিতে, অন্ধ্রপ্রদেশে ৪২টি আসনের মধ্যে একটিতে, বিহারে চল্লিশটির মধ্যে দু’টিতে, মধ্য প্রদেশে ২৯টি আসনের একটিতে, উড়িষ্যায় ২১টির মধ্যে একটিতে, ছত্রিশগড়ে ১১ আসনের দু’টিতে, মহারাষ্ট্রে ৪৮টির মধ্যে একটিতে, কেরালায় ২০টি আসনের দশটিতে, গোয়ায় দু’টি আসনের একটিতে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। এছাড়া কেন্দ্র শাসিত দিল্লির সাতটি আসনের সবক’টিতেই, আন্দামান ও নিকোবরে একটিতেই প্রার্থী দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।

তবে পুরো রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের মত এবারের ১৬তম লোকসভা নির্বাচনেও সর্বভারতীয় কৌশলের পরিচয় দেননি তিনি। নিজ রাজ্যকেই প্রাধান্য দিয়ে চালিয়েছেন নির্বাচনী প্রচার। রাজ্যের একাধিক আসনে ভোটারদের মন গলাতে নিয়ে এসেছেন তারকা প্রার্থী। শুধু তাই নয়, মুসলিম ভোট পেতেও তিনি নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। নিজে হিন্দু হয়েও মাথায় কাপড় তুলে হাজির হয়েছেন মুসলমানের ইফতারে। হাত তুলে মোনাজাত করেছেন তাদের কাতারে বসে। আবার গরীব মুসলমান মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার সুবিধার্থে সাইকেলও বিলি করেছেন।

এসব করে যখন রাজ্যে নিজের দলের পাকা অবস্থান আছে বলে মনে করেছেন, নজর দিয়েছেন অন্য রাজ্যের দিকে।

তবে খোঁজ নিতে গেলে বিভিন্ন এলাকার অধিবাসীরা জানান,  পশ্চিমবঙ্গের বাইরের প্রার্থীরা খুব বেশি ধোপে টিকবে না। উদাহরণ দিতে গিয়ে উত্তর প্রদেশের বারানসির এক ভোটার বলেন, এখানে তৃণমূলের কংগ্রেসের প্রার্থীর নাম ইন্দিরা তেওয়ারি। কিন্তু এখানে তার ভোট পাওয়া খুব শক্ত হবে। কারণ, বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী, আম আদমির অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বহেনজি খ্যাত মায়াবতী এবং মোলায়েম সিং যাদবের দলও আছে এখানে। তিনি বেশ হেসে বলেন, কাশীতে বেশ কিছু বাঙালি পরিবার বসবাস করে, তারাই তৃণমূলের ভরসা। তারা ভোট না দিলে ইন্দিরার জামানত বাজেয়াপ্তও হতে পারে।

এই যখন ভোটের অবস্থা তখন নামমাত্র কেন তৃনমূল প্রার্থী দেওয়া-প্রশ্ন করেছিলাম আমেথিতে কর্মরত এক সাংবাদিকের কাছে।

তিনি বলেন, কংগ্রেস প্রার্থী সোনিয়া গান্ধী ও বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বড় প্রার্থীদের বিপরীতে প্রার্থী দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে নাম ছড়াতে চান মমতা ব্যানার্জি। আঞ্চলিক দলকে দেশব্যাপী জনপ্রিয় করতে এটি তার কৌশল মাত্র। কতটা লাভবান হবেন তিনি সেটি দেখতে আর মাত্র কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।