ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ভারতে ভোটের নতুন রেকর্ড, বিজেপিই এগিয়ে

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৪
ভারতে ভোটের নতুন রেকর্ড, বিজেপিই এগিয়ে

দিল্লি থেকে: ভারতে একমাস আগে শুরু হওয়া নির্বাচনযুদ্ধ শেষ হল সোমবার। একমাসে নয় দফা নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করে সবার নজর এখন ১৬ মে তারিখে।

এ দিনই আসবে একমাসের ফসল। জানা যাবে ভোটের ফলাফল। ভারতের সঙ্গে পুরো বিশ্ব জানবে কে বসবে দিল্লির মসনদে।

শেষ দফা ভোটের পর জানা গেলো, নতুন রেকর্ড গড়েছে ভারতের জনগণ। ১৬তম লোকসভা নির্বাচনে ৬৬.৩৮ শতাংশ ভোট পড়েছে দেশটিতে। এর আগে ১৯৮৪-৮৫ সালের সর্বোচ্চ ৬৪.০১ শতাংশ ভোটের রেকর্ড হয়েছিল।

তবে ভোট শেষ হতে না হতেই সোমবার সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা ভোটের ফল কি হতে পারে তার আভাস দিয়েছে। বুথ-ফেরত ভোটারদের মতামতের ভিত্তিতে ‘এক্সিট পোল’ নামের এ সমীক্ষায় এগিয়ে আছে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ
জোট। সব হিসেবেই নরেন্দ্র দামোদর মোদীর নামই এসেছে বারবার।

তারা বলছে, ব্যাপক ভরাডুবি হতে পারে কংগ্রেসের। তৃতীয় প্রধান শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেস।

তবে এই এক্সিট পোলের ফল নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে রাজনৈতিক দল কংগ্রেস। দলটির মুখপাত্র শাকিল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, এক্সিট পোলের বিতর্কে যোগ দেবে না কংগ্রেস। ২০০৯ সালের নির্বাচনের আগেও মিডিয়ার এক্সিট পোল হিসেব কংগ্রেসকে তার প্রাপ্ত আসনের চেয়ে ৬৮ আসন পিছিয়ে রেখেছিল।

ভারতের বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের এক্সিট পোলের হিসাব বলছে, বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) পেতে পারে ২৪৯টির মত আসন। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের (ইউপিএ)দখলে থাকতে পারে ১৪৮টি আসন। মোট ৫৪৩টি আসনের বাকি ১৪৬টি আসন যাবে আঞ্চলিক দলসহ বাকিদের ভাগে।

ভারতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ভোটিং ওপিনিয়ন অ্যান্ড ট্রেন্ডস ইন ইলেকশন রিসার্চ (সি-ভোটার) তাদের সমীক্ষায় বলেছে, বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) লোকসভায় ২৮৯টি আসন পেতে পারে।

নির্বাচনে সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ ফল নিয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট পাবে ১০১টি আসন।

সি-ভোটার লোকসভার ৫৪৩টি নির্বাচনী আসন থেকে এক লাখ ৬৬ হাজার ৯০১ জনের মতামত নিয়ে তারা এ জরিপ করেছে বলে জানিয়েছে।

এদিকে সিসেরোর আরেকটি বুথ-ফেরত জরিপে বলা হয়েছে, এনডিএ জোট ২৬১ থেকে ২৮৩টি আসন পেতে চলেছে। যেখানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য তাদের প্রয়োজন ২৭২ আসন।

সমীক্ষার হিসেব বলছে, ভারতের সবচেয়ে বেশি আসনধারী উত্তর প্রদেশে এবার কংগ্রেসের ভরাডুবি হবে। বাজিমাত করবে বিজেপি। ২০০৯ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট যেখানে ২৪টি আসন পেয়েছিল, এবার তা কমে ১০টিতে নামবে। সেবার এ-রাজ্যে কম আসন পাওয়ার দুর্নাম ঝেড়ে বিজেপি পেতে পারে ৪৫-৪৮টি আসন।

এক্সিট পোলের ফলাফল আরো বলছে, পূর্ব ভারতে বিজেপি ৩৮টি এবং কংগ্রেস ১৮টি আসন পাবে। অন্যরা পাবে ৬১টি আসন। উড়িষ্যায় কংগ্রেসের ঝুলিতে থাকবে ৫টি আসন। যেখানে ২০০৯ সালে দলটি ৬টি আসন পায়।

৪০টি আসনের রাজ্য বিহারে এবার বিজেপি ২১টি আসন পাবে বলে বলছে মিডিয়া সমীক্ষা। এখানে কংগ্রেসের জন্য ৪টি আসন থাকবে বলে জানাচ্ছে তারা।

রাজস্থানে বিজেপি ২৪টি, কংগ্রেস মাত্র ২টি আসন পেতে পারে বলে পূর্বাভাস মিলেছে। তবে আরো অবাক করা তথ্য, দিল্লিতে ৭ আসনের একটিও কংগ্রেসের থাকছে না বলে মনে করা হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ২৬টি আসন পেলেও কংগ্রেস পাবে ৪টি আসন। গুজরাটেও বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে থাকবে বিজেপি।

তারা পাবে ২২টি আসন, কংগ্রেস পাবে ৪টি। ঝাড়খণ্ডে বিজেপি ৭টি এবং কংগ্রেস পাবে ৬টি আসন। কর্ণাটকে বিজেপি পাবে ১৮টি, কংগ্রেস ৯টি আসন পেতে পারে। পাঞ্জাবের ১৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি পাবে ৭টি। আর কংগ্রেস পাবে ৬টি আসন। মধ্যপ্রদেশে বিজেপি পাবে ১৬টি আসন। এ আসনে কংগ্রেস পাবে ১১টি আসন। হিমাচল প্রদেশে বিজেপি ৪টি আসন পেলেও কংগ্রেস কোনো আসন পাবে না।

তবে এই সমীক্ষা নির্বাচনের ফল নয়, বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এটি আভাস মাত্র। কারণ এই সমীক্ষার ফলের অনেক হেরফের হয়। তবে সাধারণত যেদল বা জোট এগিয়ে থাকার কথা বলা হয়, সে-জোটই সরকার গঠন করে। তাই এসব সমীক্ষার গুরুত্ব অবশ্যই রয়েছে।

এদিকে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস লোকসভা নির্বাচনে বাজিমাত করতে যাচ্ছে বলেও আভাস মিলেছে। বুথ ফেরত ভোটারদের সমীক্ষায় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দল ৩১টির বেশি আসন পেতে পারে বলে জানানো হয়। এই সমীক্ষা সত্য হলে তৃণমূল কংগ্রেসই হবে এবারের লোকসভার নির্বাচনে এককভাবে বেশি আসন পাওয়া তৃতীয় দল। কারণ, বিজেপি ও কংগ্রেসের পর এতবেশি আসন আর কোনো দলের পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে সমীক্ষায়। পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ছাড়াও বামফ্রন্ট ৭টি, কংগ্রেস ৪টি এবং বিজেপি ২টি আসনে জয় পেতে পারে।

২০০৯ সালে ১৫তম লোকসভা নির্বাচনে এককভাবে ২০১টি আসন পায় কংগ্রেস। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি পায় ১১২টি আসন। কংগ্রেস পরে কয়েকটি আঞ্চলিক দলকে সঙ্গে নিয়ে দিল্লির মসনদে বসে।

প্রায় ১২৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে ভারতে এবার ভোটারের সংখ্যা ৮১ কোটি ৪৫ লাখ। গত একমাস ধরে ২৯ রাজ্যের এসব ভোটার নয় দফায় নিজ নিজ এলাকার প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোট দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৪

** দিল্লি থেকে সার্বক্ষণিক ফল জানাবেন জেসমিন পাপড়ি

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।