ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ভোট কেটেছেন কেজরিওয়াল

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৪
ভোট কেটেছেন কেজরিওয়াল কেজরিওয়াল / ছবি : ফাইল ফটো

দিল্লি থেকে: ৪৯ দিনের মাথায় দিল্লির শাসনভার ত্যাগ করেছে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও হয়তো একক সংখ্যার বেশি আসন জুটবে না তাদের।

তবুও আম আদমি পার্টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভারতের রাজনীতিতে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ের আলোচনায় এমনই আভাস মিলছে।

দুর্নীতি বিরোধী মনোভাবের কারণেই হঠাৎ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই আঞ্চলিক দলটি বড় দলগুলোর ভোটব্যাংকে ভাগ বসিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বোদ্ধারা।

তবে তারা বলছেন, প্রকাশ্য মোদী বিরোধী নেতা কেজরিওয়ালের দল আম আদমি বিজেপির নয়, ক্ষতির কারণ হয়েছে অন্যতম বৃহত্তম দল কংগ্রেসের। কংগ্রেসের মুসলিম ভোটব্যাংক তার দিকেই ঝুঁকেছে বেশি। সেই সঙ্গে জুটেছে ভারতের গরীব ও মধ্যবিত্তদের ভোটও।

একথার প্রমাণ মেলে দিল্লির অটো রিকশাচালক সেলিম খানের কথায়।

তিনি বলেন, দিল্লির মুসলমান মানেই কংগ্রেসের সমর্থক, এবার সেই ধারণা মুছে গেছে। গত ৬০ বছর ধরে আমরা কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের জীবনের কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং ছোটখাট প্রয়োজন মেটাতেও ঘুষ দিতে হয়েছে। সেটা বিজেপির শাসনামলেও। দুটো দলের কোনটাই ভাল নয়। তাই এবার ভোট আম আদমিকে দিয়েছি।

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ডামাডোল শেষে চলছে হিসেবের পালা। ফলাফল পূর্ব সমীক্ষায় মিডিয়া ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপিকে এগিয়ে রাখার পাশাপাশি হঠাৎ জনপ্রিয় হওয়া দল আম আদমিকে রেখেছে একেবারে পেছনের সারিতে। বলা হচ্ছে, দলটি সারা দেশে ৩ থেকে ৭টি আসন পেতে পারে। কিন্তু তাতেও কিছু যায় আসছে না কেজরিওয়াল ভক্তদের।

সোমবার দিল্লির রাস্তায় সেলিম খানের অটোতে চড়ে মুসলিম প্রধান এলাকা তুর্কমান গেটে গেলে পাওয়া যায় আরো অনেককেই। তারা জানান, প্রতিবারই মুসলমানরা একচেটিয়া কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়ে থাকে। তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। কেজরিওয়াল ৪৯ দিনের দিল্লি শাসনে দুর্নীতি কমানোর চেষ্টা করেছেন। গরীবের ভাগ্য বদলানোর কাজ করতে চেয়েছেন। তাই কেজরিওয়ালের প্রতীকে ভোট দিয়েছি।

দিল্লি জামে মসজিদের সামনে বসে কথা হয় আরো কয়েকজনের সঙ্গে। সেখানে মোহাম্মদ নজির আহমেদ বলেন, আমিও কেজরিওয়ালকে ভোট দিয়েছি। ৬৩ বছরের জীবনে এই প্রথম কংগ্রেসের বাইরে ভোট দিলাম।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেওয়া নেতা কেজরিওয়ালের দলকে ভোট কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেজরিওয়াল ৪৯ দিনের মাথায় ক্ষমতা ছেড়ে ভুল নয়, ভাল করেছেন। দেশে যা অবস্থা তাতে ৪৯ দিন নয়, ৪৯ বছর ক্ষমতায় থাকলেও তিনি কিছু করতে পারতেন না। কংগ্রেস ও বিজেপির বড় বড় সাপ তাকে গিলে খেয়ে ফেলত।

গিয়াসউদ্দিন বলেন, এবার আমার এলাকার মুসলিম ভোট ৬০ শতাংশ পেয়েছে কংগ্রেস, ৩০ শতাংশ গেছে আম আদমিতে। বাকী ১০ শতাংশ বিজেপিসহ অন্যান্য দলে যেতে পারে। তবে আম আদমি না থাকলে পুরো ৯০ শতাংশ ভোট যেত কংগ্রেসের ঝুলিতে। আমাদের অন্য কোনো উপায়ও ছিল না। নতুন হিসেবে কেজরিওয়ালকে বেছে নিয়েছি। দেখি তিনি কি করেন।

শুধু মুসলমান নয়, নেহেরু স্টেডিয়ামের উল্টো পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় অনিল নামের আরেক বাস চলকের সঙ্গে।

তিনিও বলেন, আম আদমিকে ভোট দিয়েছি। কেজরিওয়াল অল্পদিন ক্ষমতায় থেকে তেমন কিছু করে দেখাতে পারেন নি, তবে তার চেষ্টা দেখে বিশ্বাস করেছি। দেখা যাক, কি করতে পারেন তিনি।

নয়াদিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক এলাকায় বসবাসরত বাঙালি সুজিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমরা যারা চতুর্থ শ্রেণীর নাগরিক, তারা এবার আম আদমিকে বেছে নিয়েছি। এ দলটি একটি আসনও যদি না পায়, তাহলেও পরের বার তাকে ভোট দেব আমরা।

বিভিন্ন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ আসনের ভোটারদেরকেও বহু পুরাতন আঞ্চলিক দলগুলোকে ফেলে আম আদমির দিকে ছুটে যেতে দেখা গেছে।

মোদী ও কেজরিওয়ালের আসন বারানসিতেও তো এই ভোটের হিসেব জটিল হয়ে ওঠেছে।

বারানসির রিকশাচালক শ্রীনিবাস যাদব বলেন, আমি মায়াবতীর সমাজবাদী পার্টির সমর্থক ছিলাম, তবে কেজরিওয়ালের ডাকে এবার তার দলকে ভোট দেব। দেশ থেকে দুর্নীতি তাড়াতে হবে।

দুর্নীতির বিষয়কে জোর দিয়ে দিল্লির তরুণ ভোটার আদিল বলেন, বিজেপি বা কংগ্রেস যেই আসুক পেট্রোল, ডিজেল, পেঁয়াজের দাম বাড়ায়। অথচ কেজরিওয়াল অল্পদিনেই দাম কমিয়েছিলেন। ছোটখাট কাজ করতেও ঘুষ দিতে হত। অথচ কেজরিওয়াল যে কয়দিন দিল্লি শাসন করেছেন সে কয়দিন রাস্তার পুলিশও অটোগুলোর থেকে ঘুষ নিত না।

ছাত্র কিংবা শিক্ষিত সমাজও ঝুঁকেছে আম আদমির দিকে। গড়পড়তা রাজনীতিতে বিরক্ত দিল্লির ছাত্র সমাজও কিসের যেন টানে ছুটে গেছে কেজরিওয়ালের দিকে।

রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শ্রীনিবাস প্রতাপ রায় বলেন, নিয়মিত রাজনীতির বাইরেও যে স্বচ্ছ ও  দেশপ্রেমের রাজনীতি হতে পারে সেটি কেজরিওয়াল করে দেখাচ্ছেন। বড় দলগুলোর চাপে তার বৃদ্ধি ভালভাবে না হলেও তিনি মানুষের মন কেড়েছেন। একটি পরিবর্তন আমরাও চাই। নতুন মুখ হিসেবে কেজরিওয়াল মন্দ নন।

বড় দলের ভোটব্যাংকে কেজরিওয়ালের হামলার আলাপ সুশীল সমাজেও লক্ষ্য করা যায়। দিল্লির প্রবীণ সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী বলেন, কেজরিওয়াল এ সময়ের ডার্ক হর্স। তিনি দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে এত আসন পেয়ে জয়ী হবেন তা কেউ ভাবেনি। এবারও তেমনটি হতে পারে।

কেজরিওয়ালের দল আম আদমি দূর করতে পারে বলে সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরনের বিশ্বাস তৈরি করেছেন। এদলে গরীব মানুষ প্রভাবিত হয়েছে। এক্সিট পোলের হিসেব আম আদমিকে যত অল্প আসনই দিক না কেন, ভারতের রাজনীতিতে নতুন ফেনোমেনা কেজরিওয়াল। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৪

** দিল্লি থেকে সার্বক্ষণিক ফল জানাবেন জেসমিন পাপড়ি
** ভারতে ভোটের নতুন রেকর্ড, বিজেপিই এগিয়ে

** ফল ঘোষণার আগেই জয়-পরাজয়ের আভাস

** ভারতের মসনদে জোটের ঘূর্ণিপাক

** আঞ্চলিক তকমা মুছতে কৌশলী মমতা

** বারানসিতে কংগ্রেসের এক মাসের ভুল

** ভোট দিচ্ছেন না বর্তমান রাষ্ট্রপতিও

** অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়াইয়ে কেজরিওয়াল

** বাংলাদেশসহ প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করছেন মোদী

** বারানসি যুদ্ধে কৌশলী মোদী আবেগী কেজরিওয়াল

** ফের আচরণবিধি ভাঙলেন মোদী!

** আমেথি থেকেই ভারত গড়ার অঙ্গীকার মোদীর

** বাংলানিউজকে কংগ্রেস নেত্রী মালা : জামায়াতকে সমর্থন করেছেন মমতা

** গান্ধী রেওয়াজেই আমেথিতে রাহুল জোয়ার

** পশ্চিমবঙ্গে তারকাপ্রার্থী নিয়ে অস্বস্তি

** ‘আর্থিক প্যাকেজে’ মোড়‍ানো বিজেপির জোটবার্তা

 

বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।