কলকাতা থেকে ফিরে: ভারতের সদ্য সমাপ্ত ষষ্ঠদশ লোকসভা নির্বাচনে সব কটি এক্সিট পোলে বিজেপিকে এবার ১নম্বর সারিতে এগিয়ে রেখেছে। বিজেপিও সরকার গড়ার ব্যাপারে পুরোপুরি আস্থাবান বলে তাদের কর্মকাণ্ডেও প্রকাশ পেয়েছে।
তবে পুরোপুরি ফলাফল জানার জন্য আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পালা৷এখন শুধুই রাত টুকু পার হয়ে শুক্রবার সকাল হওয়ার অপেক্ষা মাত্র।
তাবৎ বিশ্বের মানুষ বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটির নয়া অধ্যায়ের যে সূচনা ঘটতে যাচ্ছে তা দেখার জন্য রুদ্ধশ্বাস ক্ষণ পার করছেন৷ রাত পোহালেই শুক্রবার। এদিন প্রকাশ হতে চলেছে ভারতের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল৷
অর্থাৎ একদিকে উৎসাহ ও উত্কণ্ঠা, অন্যদিকে প্রস্তুতি৷ সব মিলিয়ে ভারতসহ সর্বত্রই এমনই টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই ফলের স্পষ্ট আভাস মিলবে৷ তবে সম্পূর্ণ ফল পেতে এদিন সন্ধ্যে হয়ে যাবে৷
শুক্রবার সকাল আটটা থেকে ভোট গণনা শুরু হবে৷ গোটা দেশের ফলাফল প্রকাশ রাতের মধ্যেই শেষ করা যাবে বলে মনে করছে দেশটির নির্বাচন কমিশন৷
ভোটের আগে ও বুথ ফেরত সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে বিজেপি দিল্লির সিংহাসন দখল করতে চলেছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ মানুষের মনে এখন নানা প্রশ্ন৷ বাংলায় তৃণমূলের আসন সংখ্যা কত হবে? বাড়বে না কমবে।
কলকাতার হাটে-বাজারে, চায়ের স্টলে দেখেছি স্থানীয় মানুষের মনোভাবটা কী? অধিকাংশ মানুষের মনোভাব লক্ষ্য করে দেখেছি-ি এককভাবে দিল্লির মসনদ দখল করতে পারবে কি বিজেপি? নরেন্দ্র মোদির ঠিকানা কি হবে ৭ নম্বর রেসকোর্স? নাকি ক্ষমতা বিন্যাসে ফের তৃতীয় শক্তির উত্থান?
কলকাতার বনেদি আর ঐতিহ্যভাবে ধরা উত্তর কলকাতাকে। কলকাতার আদি বাসিন্দাদের বসবাস এ এলাকায়। একচেটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য এ এলাকাকে ঘিরে। নতুন কলকাতা শহর গড়ে উঠেছে দক্ষিণ কলকাতায়।
ধনী ব্যক্তিরা পুরাতন কলকাতা উত্তর ছেড়ে এখন চলে যাচ্ছেন দক্ষিণ কলকাতায়। কেননা সেখানে নির্মিত হয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত চিকিৎসা কেন্দ্র। অর্থাৎ হাত বাড়ালেই মিলছে মনের মতো চিকিৎসা ব্যবস্থা।
কিন্তু পুরাতন কলকাতা অর্থাৎ উত্তরের মানুষের মধ্যে নির্বাচনের ফলাফল ঘিরে বেশি উৎসাহটা বেশি চোখে পড়েছে। গণনা ঘিরে প্রার্থী থেকে কাউণ্টিং এজেণ্ট, পোলিং এজেণ্টদের মধ্যে চলছে দফায় দফায় বৈঠক৷
তুলনামূলকভাবে এবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে তারকা প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। বিভিন্ন কেন্দ্রের তারকা প্রার্থী যাঁরা ভোট মেটার পর কয়েকদিনের জন্য বাড়ি ফিরেছিলেন, তাঁরা হাজির হয়ে গিয়েছেন নিজেদের কেন্দ্রে৷ দেশজুড়ে বুথ-ফেরত সমীক্ষায় স্পষ্ট ইঙ্গিত বিজেপি কেন্দ্রে সরকার গঠন করার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে৷
একইসঙ্গে সাবেক শাসকদল কংগ্রেসের ফলাফল শোচনীয় হবে বলে এক্সিট পোল দেখিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠই পাবে না, ভোটের শতকরা হারও বাড়বে অনেকটাই বলে সমর্থকদের ধারণা। ভারতের অন্য রাজ্যের মতোই পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেসের ভরাডুবি হতে চলেছে ধারণা করা হচ্ছে৷ বামেদের অবস্থাও সুবিধের নয়৷
সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলা হচ্ছে, রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেতে পারে ২৮-৩১টি আসন৷ তবে সমীক্ষা যে ফলেরই ইঙ্গিত দিক না কেন, তৃণমূল শিবির সাফ জানিয়ে দিচ্ছে, সমীক্ষার থেকে অনেক ভাল ফল করবে তৃণমূল কংগ্রেস৷
রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের হিসাব, প্রায় ৩৬ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পাবে তারা৷ দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দলও হবে তৃণমূল৷ বিজেপি তাকিয়ে রয়েছে এ রাজ্যের ফলাফলের দিকে৷ কিন্তু কতটা প্রভাব রাজ্যে পড়বে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা যথেষ্ট আশা দেখাচেছন না৷
এদিকে গণনা কেন্দ্রগুলির প্রস্তুতি চরমে৷ কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে রাজ্যের প্রতি গণনা কেন্দ্রে৷ কড়া নিরাপত্তায় নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর গণনা পর্বও নির্বিঘ্নে পরিচালনা করতে কঠোর সুরক্ষা নেওয়া হয়েছে৷
নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর- ৩৯৪টি হল-এ গণনা চলবে৷ স্ট্রং রুম থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ইভিএমগুলিকে গণনাকেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে৷ কেন্দ্রের বাইরে থাকছে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি থাকবে রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ৷
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ৪২টি লোকসভা ও ছটি বিধানসভা উপনির্বাচনের ফল গণনা হবে রাজ্যের বিভিন্ন্ প্রান্তে৷ উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে৷ কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রের গণনা হবে জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ পলিটেকনিক কলেজ, সেণ্ট টমাস বয়েজ হাই স্কুল, শাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুল, বালিগঞ্জ গভর্নমেণ্ট স্কুল ও ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজে৷
এছাড়াও দার্জিলিং ও রায়গঞ্জের জন্য চারটি করে গণনাকেন্দ্র থাকছে৷ বাকি লোকসভা কেন্দ্রগুলির জন্য একটি করে গণনাকেন্দ্র করা হয়েছে৷ রাজ্যের মোট ৪২টি আসনের জন্য ৪৮টি জায়গায় থাকছে মোট ৬৯টি ভোট গণনা কেন্দ্র৷
সূত্রের খবর- সর্বোচচ ৩৩ রাউন্ড ও সর্বনিম্ন্ ১৬ রাউন্ড গণনা হবে৷ গণনা কেন্দ্রগুলিতে নজরদারির দায়িত্বে ৯৮ জন পর্যবেক্ষককে রাখছে নির্বাচন কমিশন৷ এর মধ্যে ৪৩ জন সাধারণ পর্যবেক্ষক ও ৫৫ জন অতিরিক্ত পর্যবেক্ষক৷
প্রতিটি কেন্দ্র পিছু ১০ জন মাইক্রো অবজারভার ও প্রতিটি টেবিলে থাকবেন একজন অ্যাসিস্ট্যাণ্ট ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার৷ আর গোটা গণনা প্রক্রিয়া ভিডিওগ্রাফি করা হবে৷
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৪