নরেন্দ্র মোদী ৬৩, লালকৃষ্ণ আদভানি ৮৬। পাক্কা ২৩ বছরের গ্যাপ।
রাজনীতিতে অবসরের কোনও বয়স হয় না। আমৃত্যু কাজ। সব সময় যে কাজ করতে হবে তার কোনও মানে নেই। প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখলেই চলবে। ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের হালটা ধরতে চেয়েছিলেন আদভানি। হাল কেড়ে নেন মোদী। তাঁর যুক্তি ছিল, তারুণ্যের জোয়ার না আনলে বিজেপি বাঁচবে না। বর্ষীয়ান নেতা আদভানি নেপথ্যে থাকুন। পরামর্শ ছিল, রাস্তা দেখান। ভিড় ঠেলে সবার সামনে এসে দাঁড়ানোর দরকার নেই। বয়স হলে নায়ককে বাবার রোলে ভাল মানায়। মোদীর কথায় সায় দিয়েছে আরএসএস। যাদের পাঠশালায় মোদীর রাজনৈতিক পাঠ, তাদের সমর্থন পেয়ে মোদী উল্লসিত। আদভানি কোণঠাসা।
নির্বাচনে মোদীর নায়কত্ব প্রমাণিত। মোদীর জোরেই যে বিজেপি জিতেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আদভানি যতই বলুন, এটা দলের জয়, সাফল্যটা মোদীর একার। এই প্রথম একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি। অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। শরিকদের ওপর ভরসা করে সরকার চালাতে হয়েছে।
মোদী বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁকে খুনের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছিল। সিবিআই মুক্তি দিয়েছে। মোদী যে পাঁচবার পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী সফর করেছেন, সেটা তাঁর পরামর্শেই। তাতে তিনগুণ ভোট বেড়েছে। দুটি আসন এসেছে। এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্র ভবানীপুরে তৃণমূলকে হারিয়েছে বিজেপি। সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে একটি লোকসভা কেন্দ্র। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে একটি বিধানসভা কেন্দ্র হচ্ছে ভবানীপুর। যেখানে মমতার বাড়ি, সেখান থেকে জিতে তিনি মুখ্যমন্ত্রী, সেখানেই তৃণমূল পরাজিত বিজেপির কাছে।
২১ মে প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদী, সঙ্গে থাকবেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। আদভানি মন্ত্রী হচ্ছেন না। বুড়ো বয়সে জোয়ান ছেলের হুকুম মানতে নারাজ। তাঁকে কোথায় রাখা যায় তাই নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে। স্পীকার হতে পারেন, জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়াটাও অসম্ভব নয়। অরুণ জেটলিকে অর্থমন্ত্রী দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি অমৃতসরে পরাজিত। মধ্যপ্রদেশের বিদিশা থেকে বিপুল ভোটে জিতেছেন সুষমা স্বরাজ। তাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেওয়ার কথা হচ্ছে। সুষমা যদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন বাংলাদেশের পক্ষে ভাল। বাজপেয়ীর মানসকন্যা সুষমা বাংলাদেশের সহকর্মী। ছিটমহল, তিস্তা সমস্যা চাইলেই মেটাতে পারবেন। তাঁকে আটকানো মমতার পক্ষে কঠিন। মমতা নেগেটিভ, সুষমা পজিটিভ। মোদী যদি সুষমাকে দূরে সরিয়ে রাখেন তাহলে সরকারের ক্ষতি।