ঢাকা: ভাবী প্রধানমন্ত্রী তো কী? গুরুকে ভোলা যায় কখনো। তাহলে তো অমঙ্গল হবে।
তিনি তো ঠুনকো হতে পারেন না- হতে বিশাল হৃদয়ের। উদারতা-আত্মবিশ্বাস না থাকলে দেশ পরিচালনা করা যায়? এ সব কথা মাথায় রেখে জনসমক্ষে গুরু আদবানির পা ছুয়ে প্রণাম করলেন ভারতের হবু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দামোদর।
এই গুরুর হাত ধরেই তো রাজনীতিতে হাতে খড়ি মোদীর। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই সবারই জানা নরেন্দ্র মোদী ও লালকৃষ্ণ আদবানির বিরোধের কথা। এ নিয়ে বিজেপির অন্দরে ও বাইরে নানা আলোচনা শোনা গিয়েছে বহুবার ৷ জ্যেষ্ঠ নেতা হিসেবে আদবানির দাবি ছিল এবার প্রধানমন্ত্রী হবেন।
কিন্তু যখন দেখলেন দলের মধ্যে অধিকাংশ নেতা-কর্মী মোদীর পক্ষে। তখন বিজেপি রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। দলের সিনিয়র নেতাদের অনুরোধে ফের রাজনীতিতে নামেন। তবে তা ছিল নামমাত্র। তেমন সক্রিয় তৎপরতা দেখা যায়নি। যেমনটি তাকে আগে বরাবর দেখা গিয়েছে।
শুধু তাই নয- লোকসভা দাঁড়াতে আসন নিয়েও মতভেদ দেখা দেয়। ফের দলের সবার হস্তক্ষেপে মোদী দলের দেওয়া আসনেই নির্বাচন করেন।
এতোসব কাণ্ড ঘটার পরও শনিবার দিল্লিতে দলের সদর দফতরে এসে জনসমক্ষে গুরু আদবানির পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিলেন দেশের দেশজয়ী ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ আদবানিও প্রত্যুত্তরে জড়িয়ে ধরলেন তাঁকে৷
এতেই সকলের কাছে বার্তা গেল মোদীর সঙ্গে আদবানির দূরত্ব অবশেষে কমল৷ এদিন মোদী তাঁকে সম্মান জানিয়ে গুরুত্ব দেওয়াতে স্বাভাবিকভাবে খুশি আদবানি৷ কিন্তু, এরপরেও মোদী সরকারে আদবানির ভূমিকা কী হবে সে প্রশ্নের ২০ তারিখের পর পাওয়া যাবে।
অবশ্য বিজেপি অন্দরের খবর, নিজের মন্ত্রিসভায় আদবানিকে রাখতে চান না মোদী৷ পরিবর্তে লোকসভার অধ্যক্ষের মতো ‘সম্মানজনক' পদে আদবানিকে জায়গা করে দেওয়ারই ইচ্ছা রয়েছে তাঁর৷ মোদীর এই ইচ্ছাতে সঙঘ পরিবারেরও সায় রয়েছে৷ কারণ, সঙঘ চায় না মোদী-সরকারে ক্ষমতার দ্বিতীয় কোনও কেন্দ্রবিন্দু তৈরি হোক৷ শনিবার বিজেপির সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আগামী মঙ্গলবার মোদীকে সংসদীয় দলনেতা নির্বাচন করা হবে৷
মোদীর প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের আগেই সেই কাজ সেরে ফেলার জন্য সেদিনই দিল্লিতে দলের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক ডেকেছে বিজেপি৷ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদীর. শপথ গ্রহণের দিনও সেদিন ঠিক করা হবে বলেও জানিয়েছেন দলের সভাপতি রাজনাথ সিং৷
অবশ্য এদিন দলীয় বৈঠকের পাশাপাশি এনডিএতে থাকা দলগুলির নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন মোদী৷ তাঁর মন্ত্রিসভায় কারা কারা স্থান পেতে চলেছেন, সেদিনই তা চূড়ান্ত হবে৷
শনিবার প্রায় একঘণ্টা ধরে বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক চলে৷ বিজেপির পক্ষ থেকে এদিনের বৈঠকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়৷ যেখানে মোদীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও তাঁর নেতৃত্বে বিজেপি যে বিপুল জয় পেয়েছে তা উল্লেখ করে ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে৷
একইসঙ্গে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে দেশবাসীকেও৷ সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকের পরে মোদী, রাজনাথ, আদবানি, মুরলীমনোহর যোশী, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি সকলে মিলে সংবাদমাধ্যমের সামনে মঞ্চেও আসেন৷ সেখানেই রাজনাথ জানান, "শপথ গ্রহণের দিন এখনও চূড়ান্ত হয়নি৷ ২০ তারিখে বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে তা ঠিক করা হবে৷"
তিনি আরও বলেন, বিজেপির সংসদীয় বোর্ড মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সফল প্রচার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য৷ তবে বৈঠকে মোদী এদিন বেশি কথা বলতে চাননি৷ কেবল ভোটারদের ধন্যবাদ দিয়েছেন৷
অবশ্য মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তাঁর নিজের রাজ্য গুজরাটের জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের কাজও সেরে ফেলতে চায় বিজেপি৷ গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের কাজকর্ম দেখার জন্য বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক তাওয়ারচন্দ গেইলটকে দলের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও এদিন জানান রাজনাথ৷
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৪