নয়াদিল্লী থেকে: ষোলতম লোকসভা নির্বাচনে ভারতের অন্যতম প্রাচীন দল জাতীয় কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয়ের দায় দলের সবার। একা সোনিয়া গান্ধী বা রাহুল গান্ধীর নয়।
দলের বাধার মুখে তাই মা-ছেলে পদত্যাগ না করতেও পারেন বলে বিভিন্ন সূত্র বলছে।
সোমবার ভারতের কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কথা রয়েছে। সে বৈঠকেই দলীয় পদ থেকে তারা পদত্যাগ করতে পারেন বলে বিভিন্ন সূত্রে এর আগে জানা গেছে।
তবে কংগ্রেসর ওয়ার্কিং কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য মনে করছেন নির্বাচনে পরাজয়ের দায় কংগ্রেসের সব নেতা কর্মীর ওপর বর্তায়। এ দায় ঘাড়ে নিয়ে দলের স্বার্থে সোনিয়া ও রাহুলের পদত্যাগ করা ঠিক হবে না। যদি তারা পদত্যাগের প্রস্তাব দেন তাও সেদিন মানা হবে না।
শুক্রবার ভারতের ষোলতম লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। এরপরদিনই কংগ্রেসের নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমেগুলো জানায়, সোমবার দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সোনিয়া এবং রাহুল পদত্যাগের প্রস্তাব দেবেন। তবে সে প্রস্তাব গ্রহণ করা নাও হতে পারে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির অন্যমত সদস্য দিগ্বিজয় সিং বলেছে, লোকসভা নির্বাচনে এ ভুরাডুবির জন্য পুরো কংগ্রেসই দায়ী। কংগ্রেসের কোনো নেতা বা কর্মী এর দায় এড়াতে পার না। সোনিয়া বা রাহুল গান্ধী এ দায় নিজেদের ঘাড়ে নিতে পারেন না। গান্ধী পরিবারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত কংগ্রেস সমর্থকদের কষ্ট দিবে। তাই তারা পদত্যগের প্রস্তাব দিলেও তা মানা হবে না।
গণমাধ্যমে কংগ্রেসের আরেক সিনিয়র নেতা কমল নাথ বলেছেন, রাহুল গান্ধী গত আট মাস ধরে দলের নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করেছে। তাই তার ওপর কংগ্রেস সরকারের ব্যর্থতার দায় পরতে পারে না। কংগ্রেস সরকারের ব্যর্থতার কারণে এ ভরাডুবি হয়েছে। এখন এ অবস্থা থেকে আমরা কিভাবে উঠতে পারবো তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
গান্ধী পরিবারের আস্থাভাজন এ নেতা আরো বলেন, রাহুল কংগ্রেসের সহ সভাপতি। দল চাইলেই কেবল তাকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারবে। তিনি নিজে চাইলেও কংগ্রেসের সহসভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারবেন না।
দুর্নীতির ইস্যূর কারণে কংগ্রেসের পরাজয় হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে পুনরায় দেশের মানুষের আস্থা ফেরাতে কংগ্রেসকে আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এজন্য নেতা-কর্মীদের কাজ করার পরামর্শ দেন।
সোমবার সকাল ১০টায় জাতীয় কংগ্রেসের নয়াদিল্লীর ২৪ আকবর রোডের প্রধান কার্যালয়ে দলটির সর্বোচ্চ কমিটি ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ কমিটির সদস্য ৪২ জন। এদের মধ্যে রয়েছেন- গত ১০ বছরের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, দলের সিনিয়র নেতা একে এন্টনি, আহমেদ প্যাটেল, মতিলাল ভরা, অজয় মাকিন, আম্বিকা সনী, বিকে হরিপ্রসাদ, ডা. ডসপি যশী, দিগবিজয় সিং, সুশীল কুমার সিনধে, ডা. করণ সিং, এসএম কৃষ্ণা, পি চিদাম্বরম, গোলাম নবী আজাদ প্রমুখ নেতারা।
কংগ্রেসের ওয়াকিং কমিটির বৈঠক সম্পর্কে বিশ্লেষকরা বলছেন, সোনিয়া ও রাহুলের পদত্যাগ নিয়ে এখন সারা ভারতে কংগ্রেস নেতাকর্মীদের আলোচনা চলছে। তবে কেউ চায় না তারা পদত্যাগ করুক। কারণ গান্ধী পরিবারই কংগ্রেসের প্রাণ। ১৯৪৭ সালের পর থেকে এই পরিবারকে ঘিরেই কংগ্রেস এগিয়ে গেছে। বারবার দেশ শাসন করেছে।
কংগ্রেসের সূত্রের বরাতে গণমাধ্যম বলছে, সোমবার কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। বিশেষকরে পরাজয়ের কারণগুলো চিহ্নিত করে তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় এবং রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনগুলোতে জয় আনতে কর্মপরকিল্পনা নেওয়া হবে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভারতের ১২৮ বছরের প্রাচীন দল কংগ্রেস স্বাধীনতা পববর্তী সময়ে এ প্রথমবার শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। দেশব্যাপী ৫৪৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ৪৪টি আসন পায় দলটি। এদিকে মোট আসনের ১০ শতাংশ আসন না পাওয়ায় এবার এককভাবে লোকসভায় বিরোধী দলও হতে পারছে না কংগ্রেস। তবে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট দলগতভাবে বিরোধী দলের আসনে বসতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৪