ঢাকা: ভারতের গুজরাটের রাজ্যের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বৃহস্পতিবার শপথ নিতে যাচ্ছেন বিজেপি নেত্রী আনন্দিবেন প্যাটেল, যিনি রাজনীতিতে পা রাখার আগে একজন স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন।
টানা ১৩ বছর দায়িত্ব পালনের পর গোটা ভারতের নেতৃত্ব দিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বুধবার বিকালে পদত্যাগ করেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্রভাই দমোদরদাস মোদী।
তার উত্তরসূরী হিসাবে রাজ্যের রাজস্ব মন্ত্রী ৭৩ বছর বয়সী আনন্দিবেন প্যাটেলের নাম ঘোষণা করে বিজেপি, যার রাজনৈতিক জীবন অনেকটাই তার চেয়ে ৯ বছরের ছোট মোদীর হাত ধরেই গড়া বলে মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
ফলে মোদীঘনিষ্ট এই নারী নেত্রীর মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসা নিয়েও দলের একটি প্রভাবশালী অংশ স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ। যদিও গুজরাট রাজ্য বিধানসভার নারী সদস্য হিসাবে তিনিই এখন পর্যন্ত অধিক সময় দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রী হিসাবেও এর আগে দায়িত্ব পালন করেছেন কেসুভাই প্যাটেল ও মোদীর মন্ত্রীসভায়।
মোদীর সঙ্গে আনন্দিবেনের পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা প্রায় তিন দশক আগে, সেই আশির দশকে যখন আনন্দিবেন গুজরাটের মোনিবা কন্যা বিদ্যালয়ের (Mohniba Kanya Vidyalaya) শিক্ষিকা।
যদিও তার আগেও এই দুই নেতার মধ্যে আরো একটি ঘটনায় যোগসূত্র রয়েছে। সেটি হচ্ছে, বাবা জেঠাভাই তাকে স্বভাবসিদ্ধ কোনো বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি না করে আনন্দিবেনকে ভর্তি করেছিলেন মেহসেনার (Mehsana) ভিসনগরের একটি ছেলেদের স্কুলে। সেই এন এম হাই স্কুলে আনন্দিবেনই ছিলেন একমাত্র ছাত্রী।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ‘গুরু’ নরেন্দ্র মোদীও এই স্কুলেরই ছাত্র। ফলে অনেকেই বলছেন, তাবৎ তাবৎ বিজেপি নেতাদের পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার কৌশলটি কি এই নারী ছোটবেলা থেকেই রপ্ত করে নিয়েছিলেন।
স্কুলে চাকরিকালীন সময়ে একটি বিশেষ ঘটনা আনন্দিবেনের জীবনে মোড় পাল্টে দেয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। ১৯৮৭ সালে নিজের জীবন বাজি রেখে সরদার সরোবরে শিক্ষা সফরে এসে ডুবতে বসা দুই শিক্ষার্থীর জীবন রক্ষা করেন আনন্দিবেন। তার এই সাহস ও মানবিকতার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর পরই রাজ্যজুড়ে হইচই পড়ে যায় আনন্দিবেনকে নিয়ে। এজন্য তৎকালীর রাজ্য সরকার তাকে পুরস্কৃতও করে।
৩৭ বছরের নরেন্দ্র মোদী তখন সবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ-আরএসএস এর তরফে বিজেপিতে কাজ করতে এসেছেন। তিনি তখন ৪৬ বছর বয়সী আনন্দিবেনকে গিয়ে বিজেপির রাজনীতিতে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেন। মোদীর এই প্রস্তাবে স্কুল শিক্ষিকা আনন্দিবেন তখন অনেকটাই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যান। কিন্তু স্বামী মাফাতভাই প্যাটেল তাকে রাজনীতিতে যোগ দিতে উৎসাহ দেন, আনন্দিবেন তাই করেন।
এর কয়েক মাস পরেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নরেন্দ্র মোদীকে গুজরাট রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব দেয়। আর মোদী তখন আনন্দিবেনকে বিজেপির নারী মোর্চার রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব দেন।
এরপর আর আনন্দিবেনকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি, একেবারে ভোরের কুসুমের মতোই ফুটে উঠেন তিনি। কারণ, গুজরাট বিজেপিতে তখন নারী নেত্রীর সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। মাত্র সাত বছরের মাথায় ১৯৯৪ সালে আনন্দিবেনকে রাজ্যসভার সদস্য হিসাবে মনোনয়ন দেয় বিজেপি।
তার চার বছরের মাথায় ১৯৯৮ সালে রাজ্য বিধান সভার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। মন্ত্রী হন তৎকালীন কেসভাই প্যাটেলের মন্ত্রিসভায়। তখন থেকেই হাতে হাত ধরে বিশ্বস্ত ‘প্রচারকের’ মতোই কাজ করতে থাকেন নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। ২০০১ সালে মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হলে আনন্দিবেন হন কার্যত সেই মন্ত্রিসভার ‘সেকেন্ডম্যান’।
এই বিশ্বস্ততার জোরেই ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর জন্য মোদী যখন সারা ভারত চষে বেড়াচ্ছেন তখন গুজরাটের প্রশাসনিক কাজ চালানোর জন্য রাজ্যের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের নিয়ে একটি গ্রুপ গঠন করা হয়, আনন্দিবেনকে করা হয় তার চেয়ারপার্সন। তার পরই মোদী নিজ হাতে আনন্দিবেনকে নির্বাচিত করেনেউত্তরসূরি হিসাবে।
আনন্দিবেনের জন্ম উত্তর গুজরাটের ক্ষারোদ গ্রামে। তার স্বামী মাফাতভাই প্যাটেল একজন মনোবিজ্ঞানী, তিনিও বিজেপির রাজনীতিতে সক্রিয়। যদিও এ দম্পতি গত ১৫ বছর ধরেই আলাদাভাবে বসবাস করছেন। আনন্দিবেনের সঙ্গেই থাকেন ছেলে সঞ্জয়। আনার নামে আনন্দিবেন-মাফাতভাই দম্পতির এক মেয়েও আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৪