মেগা টিভি সিরিয়াল ‘শাস ভি কভি বহু থি’র তুলসী স্মৃতি ইরানি, দজ্জাল শাশুড়ির মুখে ঝামা ঘষতেন কথায় কথায়। রাজনীতিতে এসে তাই করছেন।
ছবিতে আর বাস্তবে আর তফাৎ কতটা। সত্যি ঘটনাই তো সিনেমা টিভিতে গল্পচ্ছলে দেখানো হয়। তুলসীর জনপ্রিয়তা যে আকাশ ছোঁয়া, স্মৃতি জানেন। সেটাকে এনক্যাশ করার চেষ্টা করেছেন রাজনীতিতে। সাফলও হয়েছেন। ভোট গণনার সময় দেখা গেছে, প্রথম দশ রাউন্ডে রাহুলকে পেছনে ফেলে অনেকটাই এগিয়ে স্মৃতি। শেষের দিকে আর দম রাখতে পারেননি। আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়েছেন। স্মৃতির ধারণা, রাহুল একা হলে পারা যেত। সোনিয়া গান্ধী, প্রিয়াঙ্কার আঁচলের আড়ালে ছিলেন, তাই হারান গেল না।
হেরেও স্মৃতি বর্তমান সংসদের উচ্চকক্ষ মানে রাজ্যসভার সদস্য তিনি, মন্ত্রী হতে তাই অসুবিধে হয়নি। এমন অগ্নিকন্যাকে কাছ ছাড়া করতে চাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। সসম্মানে ঠাঁই দিয়েছেন মন্ত্রিসভায়। স্মৃতি এখন মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী। সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ। বয়স মাত্র ৩৮। স্বামী জুহিল ইরানি ব্যবসায়ী। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার। না, শাশুড়ির ঝঞ্ঝাট একবারেই নেই। ব্যাপারটা বরং উল্টো। শাশুড়ির চোখের মণি স্মৃতি।
স্মৃতি সতত সুখের নয়। মানেকা গান্ধীর স্মৃতি তো নয়ই। ১৯৮০-তে বিমান দুর্ঘটনায় স্বামী সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যুর পর ছন্নছাড়া জীবন। পাশে সান্ত্বনা দেবার কেউ নেই। একমাত্র পারিবারিক বন্ধু সাংবাদিক খুশবন্ত সিংয়ের আশীর্বাদের হাতটা ছিল মাথার ওপর। তিনিই হারিয়ে যেতে দেননি মানেকাকে। বেদনার বিবর থেকে টেনে বার করেছেন। বলেছেন, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নড়তে না পারলে আবার জীবন কীসের। তাঁর কথাতেই নির্নিমেষ অন্ধকারে আলো খুঁজেছেন মানেকা।
স্মৃতি ইরানির মতো শাশুড়ি-ভাগ্য ছিল না তাঁর। শাশুড়ি ইন্দিরা গান্ধীর আক্রোশে, গান্ধী পরিবারে ঠাঁই হয়নি মানেকার। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে শাশুড়ির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলিতে শাশুড়ি-পুত্রবধূর যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন মানেকা। তবু হাল ছাড়েননি। মাটিতে আছড়ে পড়েও উঠে দাঁড়িয়েছেন। ধীরে ধীরে বিজেপিকেই লড়াইয়ের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ভুল করেননি। অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছেন। এবারেও মন্ত্রী। শাশুড়ির কেন্দ্র রায়বেরিলি থেকে জিতেছেন সোনিয়া গান্ধী। একটু দূরে পিলভিট কেন্দ্র থেকে জিতেছেন মানেকা। জেতার মার্জিন সোনিয়ার চেয়ে অনেক বেশি। রাইসিনা হিলসে মানেকার মন্ত্রগুপ্তির শপথ নেওয়ার সময় আড়চোখে দেখেছেন সোনিয়া। মানেকা নাম বলার সময় নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন স্বামী সঞ্জয় গান্ধীর নাম। বলেছেন, মানেকা সঞ্জয় গান্ধী। সঞ্জয়কে স্মৃতি হয়ে যেতে দেননি। বাস্তবে বাঁচিয়ে রেখেছেন আপন সৌকর্যে। পুত্র বরুণও ধরে রেখেছেন নানা ফিরোজ গান্ধীর নাম। সুলতানপুর থেকে জিতে সংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় নিজের নাম উচ্চারণের সময় বলেছেন, আমি বরুন ফিরোজ গান্ধী। সোনিয়া বা রাহুল এটা ভাবতেই পারেন না। সোনিয়া কোনোদিনই নিজের নামের সঙ্গে রাজীবের নাম জুড়তে পারেনি। রাহুলও বাবা রাজীবের নাম নিজের নাম থেকে দূরে রেখেছেন।
মোদী মন্ত্রিসভায় সভার উজ্জ্বল উপস্থিতি সুষমা স্বরাজের। বয়সে মোদীর চেয়ে এক বছরের ছোট। মোদী ৬৩, সুষমা ৬২। মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবি নস্যাৎ করতে চেয়েছেন প্রথম দিকে। প্রতিশোধ নিতে মোদী তাঁকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না-ও দিতে পারতেন। কিন্তু সুষমাকে বাদ দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি। শুধু তাই নয়, তাঁকে দিয়েছেন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মোদী যে সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চাইছেন প্রথমেই সেই ইঙ্গিতে দিয়েছেন। বাংলাদেশের আরও কাছে আসার চেষ্টা করেছেন। সুষমা কাজটা সাফল্যের সঙ্গে করতে পারবেন। মাত্র ২৫ বছরে হরিয়ানার মন্ত্রী হয়ে দেখিয়েছিলেন তাঁর ক্যারিশমা। সেই উজ্জ্বল স্মৃতি তাঁর বর্তমানকে উদ্দীপ্ত করবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৪