কলকাতা: ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াবে এই কথাই ভেবে ছিলেন তাদের বাবা–মায়েরা তাই ৮-১৩ বছরের এই শিশুদের কেরলে পাঠাতে রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার এই দরিদ্র পরিবারের বাবা-মায়েরা জানতেন না তাদের সন্তানদের পাচারের পরিকল্পনা করছে আড়কাঠিরা।
এই পাচার হতে চলা ৫৮ শিশুদের উদ্ধার করে মঙ্গলবার গভীর রাতে মালদা স্টেশনে হাজির করেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমাজ কল্যাণ দপ্তরের আধিকারিকরা। এই শিশুরা মালদা জেলার মানিকচক, হরিশচন্দ্রপুর, চাঁচল, রাতুয়া প্রভৃতি ব্লকের বাসিন্দা।
এই পাচারের ঘটনা সামনে আসে গত ৬ জুন। কেরলের পালাক্কার স্টেশনে ৫শ’ শিশুকে উদ্ধার করে রেল পুলিশ। উদ্ধার হওয়া এই ৫শ’ শিশুকেই তুলে দেওয়া হয় এইটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে।
এই শিশুদের বাড়ি ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা শুরু করেন ঐ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা শিশুদের ফিরিয়ে দেবার প্রক্রিয়াটি সহজ ছিলো না। শিশুদের সঙ্গে কথা বলে ঐ সংস্থার কর্তারা বুঝতে পারেন এরা বিহার ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। এই তিন রাজ্যের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিশু কল্যাণ দপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন তাদের হিসাব মত গত দুই বছরে ১২৩ জন শিশুকে মালদা থেকে কেরলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু কেন? কিসের আশায় এই শিশুদের কেরলে পাঠাতেন তাদের বাবা মায়েরা!
মঙ্গলবার গভীর রাতে যখন শিশুদের তাদের বাবা-মায়েদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তখন তারা জানিয়েছেন ইংরাজি শেখান হবে বলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের সন্তানদের কেরলে নিয়ে যেত।
আর সন্তানরা ভালো শিক্ষার সাথে সাথে ভালো খাবার এবং সঠিক জীবনযাত্রা পাবে এই আশায় তারাও রাজি হয়ে যেতেন। যদিও এই অভিভাবকরা ঐ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সম্পর্কে বিশেষ কোন তথ্য দিতে পারেননি।
তবে জানা গেছে প্রতিটি শিশুদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ২ হাজার রুপি করে নেওয়া হত।
এই ঘটনা সামনে আসার পরেই বুধবার সকাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমাজ কল্যাণ দপ্তরে মালদা থেকে আসা অভিভাবকের লাইন পড়ে গেছে।
মালদার অনেক অভিভাবকই তাদের কেরলে পাঠানো শিশুদের সম্পর্কে খোঁজ কবর নিতে হাজির হচ্ছেন। সমাজ কল্যাণ দপ্তরের তরফে জানান হয়েছে আরও ৬৫ জন শিশুকে কেরল থেকে নিয়ে আসছে সমাজ কল্যাণ দপ্তর।
দপ্তরের অধীনস্থ চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান হাসান আলি সাংবাদিকদের জানান, ভালো শিক্ষার লোভ দেখিয়ে এই শিশুদের বিভিন্ন রাজ্যে এমনকি দেশের বাইরেও পাঠিয়ে দেবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন স্থানীয় কিছু মানুষ। তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও জানান এই শিশুদের রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিতর আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, জুন ১৮ , ২০১৪